রতুয়া

মামা গনির ভরসায় মাঠে শাহানাজ

একেই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। তার উপরে কংগ্রেস প্রার্থীর দোসর হয়ে পথে নেমেছে বামফ্রন্টও। ফলে জোটপ্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই যে কঠিন তা মানছেন শাসকদলের নেতা-কর্মীরাও। সেই কঠিন ময়দানে শাসক দলের প্রার্থীর ভরসা তাঁর মামাই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০৪:৩১
Share:

প্রচারে শাহানাজ কাদরি। নিজস্ব চিত্র।

একেই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। তার উপরে কংগ্রেস প্রার্থীর দোসর হয়ে পথে নেমেছে বামফ্রন্টও। ফলে জোটপ্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই যে কঠিন তা মানছেন শাসকদলের নেতা-কর্মীরাও। সেই কঠিন ময়দানে শাসক দলের প্রার্থীর ভরসা তাঁর মামাই।

Advertisement

মামা গনিখানের উপরে ভরসা করেই ভোট বৈতরণী পার হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন রতুয়ার তৃণমূল প্রার্থী শাহানাজ কাদরি। কোতুয়ালি ভবনের শাহানাজ, গনিখানের ভাগ্নি। ফলে মমতার নীতি-আদর্শ, উন্নয়নের কথা যেমন বলছেন, পাশাপাশি মামা গনিখানের আবেগকেও প্রচারে প্রধান অস্ত্র করেছেন। কংগ্রেস প্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায়ের প্রচারেও অবশ্য বারবার উঠে আসছে গনিখানের কথা। কারণ, ভোটের মালদহে এখনও নিশ্চিতভাবেই অপরিহার্য সেই গনিখানই। গনিখানের পরিবারের সদস্যাই বিপক্ষের প্রার্থী হওয়ায় জোটপ্রার্থীকে যে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে তা মেনে নিয়েছেন বাম-কংগ্রেসের স্থানীয় নেতাদের অনেকেই। তারপরেও অবশ্য ভাগ্নি শাহানাজ নন, গনিখানের দলের প্রার্থী সমরবাবুই বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে দাবি বাম-কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের।

তবে এই বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী ভাগ্নির সঙ্গে সম্মুখসমরে গনিখানের আরেক ভাগ্নি তথা উত্তর মালদহের সাংসদ, জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম নুর। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন আসলে অনেকেরই মামার কথা মনে পড়ে। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু আমরা যে গনিখানের আদর্শ মেনেই জেলার উন্নয়নের কাজ করি তা মানুষ জানেন। ফলে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে কেউ ভোট বৈতরণী পার হতে চাইলে তিনি ভুল ভাবছেন। মামার আদর্শ-উন্নয়নকে সামনে রেখেই আমরা প্রচার চালাচ্ছি।’’ সিপিএমের রতুয়া-১ লোকাল কমিটির সম্পাদক জহুর আলমের দাবি, ‘‘তৃণমূলকে রাজ্য থেকে উত্খাত করাই আমাদের লক্ষ্য। জোটপ্রার্থীর জয়ের ব্যবধান কত হবে আমরা সেটা নিয়েই ভাবছি।’’

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী অবশ্য জোটের দাবি যে অযৌক্তিক নয়। গত লোকসভা নির্বাচনে রতুয়া বিধানসভায় কংগ্রেস প্রার্থীর ৭৩৯৬৯, বামেদের ৪৬২৫০ ও তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্য ভোট ছিল ২৫৬৮৫। ফলে বাম-কংগ্রেস জোটের মিলিত সংখ্যার মোকাবিলা যে কঠিন তা মানছেন তৃণমূলের কর্মীরাই। লড়াই কঠিন মেনে নিয়েও অবশ্য হাল ছাড়তে রাজি নয় তৃণমূল। শাসক-শিবিরের দাবি, গত লোকসভা নির্বাচনের পর ফুলহার নদী বেয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। বাম-কংগ্রেস দুই শিবিরেই কিছুটা হলেও তারা ভাঙন ধরিয়েছে। একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতও তাদের দখলে এসেছে। তাছাড়া বিদায়ী বিধায়ককে ঘিরে বামেরা তো বটেই, কংগ্রেস শিবিরেও নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি এলাকায় থাকেন না, জনসংযোগ হারিয়েছেন বলে কংগ্রেসের একাংশেরই অভিযোগ রয়েছে। তিনি যাতে টিকিট না পান সেজন্য কংগ্রেসের একাংশ সরবও হয়েছিলেন। বাম শিবিরের অনেকেই তার পাশে নেই বলেও দাবি তৃণমূল শিবিরের। যদিও বাম-কংগ্রেস শিবির তৃণমূলের ওই অভিযোগকে হাস্যকর বলে দাবি করেছেন।

শক্ত মাটিতে তৃণমূল অবশ্য প্রচারে জোর দিয়েছে। তাই সাতসকালে কোতুয়ালি ভবন থেকে বেরিয়ে রতুয়ার গোটা এলাকাজুড়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থী। কংগ্রেস তার মামার আদর্শ হারিয়েছে বলে প্রচার চালানোই নয়, একমাত্র তৃণমূল নেত্রীর হাত ধরেই মামা গনিখানের অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়িত করা সম্ভব বলেও প্রচারে তুলে ধরছেন শাহানাজ। সাতের দশকে গনিখানের উদ্যোগে রতুয়ায় ফুলহার নদীবাঁধ তৈরির প্রসঙ্গের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী প্রকল্পের কথাও উঠে আসছে তাঁর প্রচারে। শাহানাজ বলেন, ‘‘কংগ্রেস যে মামার আদর্শ থেকে বহু আগেই বিচ্যুত হয়ে গিয়েছে তা মানুষ বুঝে গিয়েছেন। মামা সিপিএমকে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলার স্বপ্ন দেখতেন। আর সেই সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেস হাত মিলিয়েছে। মানুষ ঠিক সময়েই এর জবাব দেবেন।’’

এক ভাগ্নি শাসকদলের প্রার্থী হয়ে প্রত্যক্ষভাবে রতুয়ায় লড়াইয়ের ময়দানে। আরেক ভাগ্নি জেলা কংগ্রেসের সেনাপতি হয়ে সব আসনের মতো পরোক্ষে ওই আসনেও লড়াই পরিচালনা করছেন। প্রয়াত মামার ‘দখলদারি’ নিয়ে দুই ভাগ্নির দড়ি টানাটানিতে শেষ হাসি হাসবেন কে, সেটাই দেখার অপেক্ষায় রতুয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন