দু’ঘণ্টা দাঁড়িয়েও এগোচ্ছে না লাইন

হরিমতি সারস্বত বিদ্যামন্দির ভবনের তিনটি ঘরে তিনটি বুথ। মোট ভোটার ২,৭৪২। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ছিল ভোটারদের লম্বা লাইন। কমিশনের নির্দেশে তিনটি বুথের জন্য ‘হাফ সেকশন’ কেন্দ্রীয় বাহিনী।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ডেবরা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০৬
Share:

গরম থেকে বাঁচতে। —কিংশুক আইচ

হরিমতি সারস্বত বিদ্যামন্দির ভবনের তিনটি ঘরে তিনটি বুথ। মোট ভোটার ২,৭৪২। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ছিল ভোটারদের লম্বা লাইন। কমিশনের নির্দেশে তিনটি বুথের জন্য ‘হাফ সেকশন’ কেন্দ্রীয় বাহিনী।

Advertisement

চেন্নাই থেকে আসা রেল সুরক্ষা বাহিনীর সাব ইন্সপেক্টর অনিল সেনের নেতৃত্বে আরও তিন জন সশস্ত্র আরপিএফ কর্মী। ওই চারজন কেন্দ্রীয় রেল পুলিশ কর্মী ছাড়াও প্রতিটি বুথের জন্য এক জন করে মোট তিন জন লাঠিধারী রাজ্য পুলিশ। উদ্বিগ্ন মুখে অনিলবাবু জানালেন, “ভোট শুরু হতেই কিছু বহিরাগত স্কুল চত্বরে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলেন। আমরা ওদের তাড়িয়ে দিয়েছি।” বলতে বলতেই চোখ আটকে গেল স্কুল চত্বরে বেঞ্চিতে বসা এক যুবকের দিকে। কপালে রোদচশমা তোলা ওই যুবক ইতিউতি তাকাচ্ছিলেন।

অনিলবাবুর দলবল ওই যুবককে বের করে দিয়ে বললেন, “দেখলেন, কেমন ধরে ফেলেছিলাম, উনি ভোটার নন। আমার পদবি সেন হলেও আমি বাঙালি নই। ভাষা না জানায় কথা বুঝতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। তবে গোলমেলে লোক ঠিক ধরে বের করে দিচ্ছি।” কথার ফাঁকে চোখ পড়ল স্কুলের বারন্দার এক কোণে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা আর এক যুবকের দিকে। শাসক দলের ওই কর্মীকেও বের করে দিলেন আরপিএফ কর্মীরা।

Advertisement

ডেবরার বাড়াগড়ের বাসিন্দা অশীতিপর পরিজান বিবি নাতির সঙ্গে ট্রলিতে চেপে এসেছিলেন ভোট দিতে। বৃদ্ধার নাতি রিকশা চালক শেখ উমর আলি বলেন, “ভোট ভালই হচ্ছে। এখন তো তৃণমূলেরই হাওয়া।” কৃষি দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী লক্ষ্মণ দলুই অবশ্য ভোট দিয়ে বেরিয়ে জানালেন, “শাসক দলের পক্ষে হাওয়া আছে ঠিকই। তবে বিরোধী সিপিএমও খুব খারাপ অবস্থায় নেই।”

সকাল ৮টা ৫০ মিনিট। কিছুদূরে ডেবরা আদর্শ বিদ্যাপীঠের দু’টি বুথেও ভোটারদের ভালই লাইন। সবুজ হলুদ-সাদা চওড়া স্ট্রাইপের টি-শাট পরা মাঝবয়সী এক তৃণমূল কর্মী ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। আরপিএফ জওয়ান রাজেশ মিনা ইনসাস উঁচিয়ে ওই তৃণমূল কর্মীকে চৌহদ্দির বাইরে বের করে দিলেন। কিন্তু নাছোড় ওই কর্মী ফের এসে ভোটারদের প্রভাবিত করতে থাকেন। ওই তৃণমূল কর্মী আরপিএফ জওয়ানদের বলেন, “আপলোগ তো বাংলা নহী বোল সকতে। ভোটারলোগ কিধর জায়েগা ইয়ে তো হমকো হী সম্ভালনা পঢ়েগা।” আরপিএফ কর্মী তেলেবেগুনে জ্বলে বলে ওঠেন, “উহ্‌ হম দেখ লেঙ্গে, পহেলে আপ ইয়াসে হঠিয়ে।” কিছু দূরে আমগাছ তলায় দাঁড়িয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি।

শাসক দলের আরও কিছু সমর্থক এসে জটলা শুরু করেন। এরপর আরপিএফ কর্মীরা আমতলায় গিয়ে ধমকে জটলা ভেঙে দেন। বাইরে যখন এই অবস্থা।

বুথের বারন্দায় দাঁড়িয়ে ঠোঙাভর্তি মুড়ি-চপ খাচ্ছিলেন রাজ্য পুলিশের কর্মী। আষাঢ়ী মোড় দিয়ে লোয়াদার দিকে যেতেই তৃণমূলের পতাকার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছিল সিপিএমের পতাকার সারি। পিচ রাস্তার ধারে ধানি জমিতে প্লাস্টিকের শিট পেতে একপাশে তৃণমূলের বুথ ক্যাম্প, তো অন্যপাশে সিপিএমের বুথ ক্যাম্প। মুড়াস্থি এলাকায় সিপিএমের বুথ ক্যাম্পের কর্মী রাজকুমার জানা বলেন, “যত এগোবেন এই সহাবস্থানের ছবিটা কিন্তু তত ফিকে দেখতে পাবেন। তৃণমূলের ধমক-চমকে অনেক জায়গাতেই বুথ ক্যাম্প করা যায়নি। উল্টোদিকের তৃণমূলের বুথ ক্যাম্পের তরুণ কর্মী কিংশুক মাইতি বলেন, “সব বাজে কথা। ভোট ঘিরে মানুষের কী বিপুল উচ্ছ্বাস দেখছেন।”

মুড়াস্থি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে ভোট দিয়ে ফিরছিলেন কয়েকজন মহিলা। কেমন ভোট হচ্ছে জানতে চাইলে এক মহিলা ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, “৩৪ বছরে তো এসব জানতে চাননি। এখন কী জানতে চাইছেন?” রোদের তাপের সঙ্গে মেজাজের পারদ চড়ছে দেখে এগিয়ে গেলাম। রাস্তায় এক বার খালি সিআরপিএফের টহল-গাড়ি চোখে পড়ল। সারাদিনে রাস্তায় আর কোনও পুলিশের গাড়ি চোখে পড়েনি। লোয়াদার পরে কংসাবতী পেরিয়ে গোলগ্রামের দিকে যত এগোচ্ছি। বুথে বুথে সিপিএমের কোনও এজেন্ট নেই। গোলগ্রামের চকপ্রয়াগ প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে সিপিএম এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দুপুর ১টায় হরিনারায়ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে পৌঁছে অবাক হওয়ার পালা। প্রায় শ’দুয়েক ভোটারের লাইন। কিন্তু লাইন এগোচ্ছে না। বাইরে সিআরপি জওয়ানরা টহল দিচ্ছেন। একজন হোমগার্ড দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। তিন-চারজন ভোটার একসঙ্গে বুথের ভিতরে ঢুকছেন। ভিতরে কেবল তৃণমূলের পোলিং এজেন্ট নন্দলাল মাইতি। প্রবীণ নন্দলালবাবু একগাল হেসে বলেন, “১,২৩৬ জন ভোটারের মধ্যে দুপুর ১ টায় ৫৮৬ জন ভোট দিয়েছেন। এখানে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই।” লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নারায়ণ মান্না, বিজয় দাস, আরতি মণ্ডল রা অধৈর্য হয়ে বলেন, “দু’ঘন্টার উপর দাঁড়িয়ে আছি। লাইন আর সরছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন