অন্তর্ঘাত দেখছেন তপন

হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল আগের বার। চিত্রটা এ বারও এক ছিল। তবে ফলটা উল্টে গেল। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্র তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নিল বামেরা।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০২:৩৩
Share:

তপন চট্টোপাধ্যায়।

হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল আগের বার। চিত্রটা এ বারও এক ছিল। তবে ফলটা উল্টে গেল। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্র তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নিল বামেরা।

Advertisement

গত বারই যে কেন্দ্র হাতে এসেছিল, পাঁচ বছরের মধ্যে তা হাতছাড়া হওয়ায় ময়না-তদন্ত শুরু হয়েছে শাসকদলে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের অন্তর্কলহ ও বিজেপির ভোটের একটি অংশ বাম শিবিরে যাওয়ার কারণেই এমন ফল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পরাজিত প্রার্থী তপন চট্টোপাধ্যায় সরাসরি অন্তর্ঘাতের অভিযোগও তুলেছেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকের আবার মত, দলের এক কর্মী খুনে সিপিএম প্রার্থী তথা শিক্ষক-নেতা প্রদীপ সাহার নাম জড়ানোর পরে আদালতে তাঁর বেকসুর খালাস হওয়ার ঘটনা তাঁকে মানুষের সহানুভূতি পেতে সাহায্য করেছে।

গত বার এই আসনে প্রদীপবাবুকে দু’হাজারের কিছু বেশি ভোটে হারিয়ে দেন তৃণমূলের তপনবাবু। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে তৃণমূল কর্মী সজল ঘোষ খুনের ঘটনায় অভিযোগ ওঠে প্রদীপবাবুর দিকে। দু’বছরের বেশি জেলে থাকার পরে নবদ্বীপ আদালতে বেকসুর খালাস হন পূর্বস্থলী কুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপবাবু। তবে তিনি জেলা থাকাকালীনই তাঁর নিজের এলাকা কালেখাঁতলা ২ পঞ্চায়েতে সব ক’টি আসনে জেতে সিপিএম, যা সে বার বামেদের সামগ্রিক ফলের নিরিখে ছিল ব্যতিক্রমী। জেল থেকে বেরনোর পরেও প্রদীপবাবুকে ঘিরে উচ্ছ্বাস ছিল সাধারণ মানুষের।

Advertisement

এ বার এই কেন্দ্রে ফের প্রদীপবাবুকে প্রার্থী করে সিপিএম। গণনার দিন ১৭তম রাউন্ড পর্যন্ত তপনবাবু সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও শেষ রাউন্ডে বাজিমাত করেন শিক্ষক-নেতা। জিতে যান ২৮২৮ ভোটে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, এই আসনের অন্তর্গত ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তারা হেরেছে মুকসিমপাড়া, নিমদহ, মেড়তলা, মাজিদা, পাটুলি, কালেখাঁতলা ১ ও ২ পঞ্চায়েতে তারা পিছিয়ে পড়েছে। তার মধ্যে পাটুলিতেই ১৬১২ ভোটে এগিয়ে যায় বামেরা। বামেদের দাবি, নিজেদের জামানাতেও তারা এই পঞ্চায়েত এত বড় ব্যবধানে জেতেনি। এ ছাড়া গত বিধানসভা ভোটে যে মাজিদা পঞ্চায়েতে তৃণমূল দু’হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে গিয়েছিল, এ বার সেখানে সিপিএম ১৮৬ ভোট পিছনে ফেলে দিয়েছে তাদের।

এই কেন্দ্রে বরাবরই বিজেপির ভাল প্রভাব রয়েছে। দু’বছর আগে লোকসভা ভোটেও এখানে প্রায় ৩৫ হাজার ভোট পেয়েছিল তারা। কিন্তু এ বার তাদের ভোট কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ২২ হাজারে। তৃণমূল নেতৃত্বের অনুমান, কালেখাঁতলা ১ পঞ্চায়েতের মতো কিছু এলাকায় বিজেপির ভোট গিয়েছে বামেদের বাক্সে। এ ছাড়াও হারের কারণ হিসেবে তৃণমূলের অন্দরে উঠে আসছে অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব। এলাকায় তপনবাবু ও দলের জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল দাসের গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ রয়েছে। তপনবাবুর অভিযোগ, ‘‘ভোটের সময়ে বিপুল দাসকে সিপিএমের সঙ্গে চলতে দেখা গিয়েছে। অনেকে আমাকে সে কথা জানিয়েছেন। ওঁর এলাকায় দল তাই খারাপ ফল করেছে। এই বিশ্বাসঘাতকতার কথা দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানিয়েছি।’’ অভিযোগ উড়িয়ে বিপুলবাবু বলেন, ‘‘ব্যর্থতা ঢাকতে মিথ্যে কথা প্রচার করছেন উনি। আমার এলাকায় তিলা পঞ্চায়েতে দল সব থেকে বেশি ভোটে এগিয়েছে। তাই এই অভিযোগ খাটে না।’’

সিপিএমের পূর্বস্থলী ২ জোনাল নেতৃত্বের দাবি, প্রদীপবাবুকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো সাধারণ মানুষ ভাল ভাবে নেননি। ওই জোনালের সম্পাদক সুব্রত ভাওয়ালের কথায়, ‘‘এক জন শিক্ষক দু’বছরেরও বেশি সময় জেলে কাটানোর পরে নির্দোষ প্রমাণ হয়েছেন। তার প্রতি এই অন্যায়ের জবাব দিতে এলাকার মানুষ ভোটবাক্সকেই বেছে নিয়েছেন।’’ বিজেপির ভোট কি তাঁদের ঘরে এসেছে? সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘এখনও বুথভিত্তিক ফল নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করিনি।’’

পূর্বস্থলীর এক তৃণমূল নেতার মন্তব্য, ‘‘দলের কর্মী খুনের ঘটনার কিনারা হল না এখনও। অথচ, সেই ঘটনার জের এ বার ভোটে যা ক্ষতি করার করে দিয়ে গেল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন