পুরভোটের স্মৃতি ভুলে আজ ‘ঝুঁকির’ কাজেই

কামাই না করেও ভোটের দিন তিনি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বা কম ঝুঁকির ডিউটি করতেই পারতেন। কিন্তু গত বছর পুরভোটে গুলিবিদ্ধ হওয়া পুলিশ অফিসার জগন্নাথ মণ্ডল আজ, শনিবার দক্ষিণ কলকাতায় বুক চিতিয়ে ডিউটি করবেন। এমন জায়গায়, যেখানে বিপদের আশঙ্কা কম তো নয়-ই, বরং অনেকটাই বেশি।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৫
Share:

জগন্নাথ মণ্ডল

কামাই না করেও ভোটের দিন তিনি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বা কম ঝুঁকির ডিউটি করতেই পারতেন। কিন্তু গত বছর পুরভোটে গুলিবিদ্ধ হওয়া পুলিশ অফিসার জগন্নাথ মণ্ডল আজ, শনিবার দক্ষিণ কলকাতায় বুক চিতিয়ে ডিউটি করবেন। এমন জায়গায়, যেখানে বিপদের আশঙ্কা কম তো নয়-ই, বরং অনেকটাই বেশি।

Advertisement

এখন আলিপুর থানার সাব-ইনস্পেক্টর, পঞ্চান্ন বছরের জগন্নাথবাবু আজ থাকছেন থানার স্ট্রাইকিং ফোর্সে। যে বাহিনী ভোট চলাকালীন সর্বক্ষণ তল্লাটে তল্লাটে ঘুরে টহল দেবে, গণ্ডগোলের খবর পেলেই ছুটে যাবে ও বেআইনি জটলা বা জমায়েত দেখলেই হটিয়ে দেবে। অর্থাৎ, যে ডিউটিতে বিপদের মুখে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। বলা ভাল, সাধ করে বিপদের মুখে যেতে হবে এবং বিপদের মোকাবিলা করতে হবে, এমন কাজ।

অথচ, গত বছরের ১৮ এপ্রিল, পুরভোটের দিন বিকেলে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে সিংহিবাগানে ছুটে গিয়েই ডান দিকের কলার বোনে গুলি খেয়েছিলেন জগন্নাথবাবু। অভিযোগ ওঠে শাসকদলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। যার পরিণামে গ্রেফতার হয়েছে মধ্য কলকাতার কুখ্যাত তোলাবাজ ও তৃণমূলের একাধিক নেতার ঘনিষ্ঠ গোপাল তিওয়ারি। জগন্নাথবাবু সেই সময়ে গিরিশ পার্ক থানায়। ভোটগ্রহণ সবে শেষ হয়েছে। গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশ সিংহিবাগানে পৌঁছে বোমার ‘অভ্যর্থনা’ পায়। ধোঁয়া থেকে পুলিশ যখন অন্য দিকে সরার চেষ্টা করছে, তখনই পিস্তলের গুলি লাগে জগন্নাথবাবুর কলার বোনে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। দু’মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। তার পরে সুস্থ হন।

Advertisement

বছর না ঘুরতে সেই জগন্নাথবাবুই আবার বিধানসভা ভোটের দিন ঝুঁকির ডিউটি করবেন। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ের মত ছিল না। কিন্তু কে বোঝাবে অকুতোভয় পুলিশ অফিসারকে? শুক্রবার দুপুরে আলিপুর রোডে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি বা নাকা ডিউটি করতে করতে জগন্নাথবাবু বললেন, ‘‘শনিবার ডিউটি করব। গোলমালের খবরে এ বারও ছুটে যাব। আগে কী হয়েছে, মনে রাখতে চাই না।’’

অথচ, ওই অভিজ্ঞতার জন্য তিনি চাইলে আজ হাল্কা ডিউটি নিতে পারতেন। থানাতেও থাকতে হবে কিছু অফিসারকে, কেউ গ্রেফতার হলে যাঁরা নথিবদ্ধ করবেন বা টেলিফোনে কোনও খবর এলে খবর দেবেন টহলদার বাহিনীকে। তবে জগন্নাথবাবু স্বেচ্ছায় সে সবে ‘না’ করেছেন। তাঁর কিছু সহকর্মীর বক্তব্য, নিদেনপক্ষে ‘পিকেট ডিউটি’ও করা যেত, যাতে ঝুঁকি কম। রাজি হননি গুলি খাওয়া অফিসার। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির লোকের চিন্তা করাটা স্বাভাবিক। আমাকে তো আমার কাজ করতে হবে।’’

আলিপুর থানার স্ট্রাইকিং ফোর্সের অঙ্গ হিসেবে জগন্নাথ মণ্ডল যে সব জায়গায় ডিউটি করবেন, সবই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্র ভবানীপুরের মধ্যে। আলিপুরের এই বিস্তীর্ণ তল্লাটে প্রতাপ সাহা, বিপ্লব মিত্র, সাহেব দাসদের দাপট। অভিযোগ, এঁদের মধ্যে প্রতাপের অনুগামীদের তাণ্ডবের হাত থেকে বাঁচতে আলিপুর থানায় টেবিলের তলায় ফাইল মাথায় দিয়ে পুলিশকে লুকোতে হয়েছিল। লালবাজারের একটি সূত্রে খবর, স্ট্রাইকিং ফোর্সের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জগন্নাথ মণ্ডলকে প্রতাপ-বিপ্লবদের গতিবিধির খবর রাখার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

তাতেও ভয় পাচ্ছেন না এই অফিসার, যাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন সহকর্মীদের একাংশ।

ঘনিষ্ঠ মহলে জগন্নাথ মণ্ডল কতকটা রসিকতার ঢঙেই বলছেন, গত বছরের ঘটনায় তাঁর শেষ-ই হয়ে যাওয়ার কথা। এখন যেটুকু বাঁচছেন, সেটা অতিরিক্ত। আর সেই জন্যই তাঁর ভয় নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন