West Bengal Assembly Election 2021

টুম্পাসোনা থেকে মাস্ক, ফ্ল্যাশ মব, রবিবার ব্রিগেড ভরাতে মরিয়া বামপন্থীরা

বাম-কংগ্রেসের জোট-ব্রিগেডের বাজারে রাহুল পালের লেখা এবং নিলাব্জ নিয়োগির গাওয়া ‘টুম্পাসোনা’-র প্যারডি সুপারহিট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৩:০৫
Share:

প্রতীকী চিত্র গ্রাফিক সৌভিক দেবনাথ

ভিড় হবে কি না বা ভোট বাক্সে ফল ফলবে কি না, তা সময়ই বলবে। কিন্তু বাম-কংগ্রেসের জোট-ব্রিগেডের বাজারে সুপারহিট হয়ে গিয়েছে ‘টুম্পাসোনা’। রাহুল পালের লেখা এবং নিলাব্জ নিয়োগির গাওয়া ‘টুম্পাসোনা’-র প্যারডি দিকে দিকে বাজতে শুরু করেছে। সিপিএম নেতাদের একাংশও স্বীকার নিচ্ছেন, আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁদের গানটি বাজাতে বলা হয়নি ঠিকই। কিন্তু যে ভাবে গানটি সাড়া ফেলেছে এবং জনপ্রিয় হয়েছে, তাতে যুবসমাজকে ব্রিগেডমুখী করতে তাঁরা গানটি প্রচারে ব্যবহার করছেন।

Advertisement

দুই শিল্পীই এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে নারাজ। আনন্দবাজার ডিজিটালের তরফে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেছেন, এ নিয়ে কোনও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না। নেটমাধ্যমে ইতিমধ্যেই সেটি ভাইরাল। পূর্ব মেদিনীপুর ও হাওড়ার বেশ কিছু এলাকায় মাইকে গানটি বাজাচ্ছে সিপিএম। সুর্যকান্ত মিশ্রের মতো আপাত-গম্ভীর নেতাও গানটি তাঁর নেটমাধ্যমে ‘শেয়ার’ করেছেন। তৃণমূল যতই সমালোচনা করুক, তাদের নেতারাও ‘টুম্পাসোনা-র অনুকরণে গানটি নিজেদের মধ্যে শুনছেন এবং চালাচালি করছেন। তবে সিপিএমের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘আনুষ্ঠানিকভাবে গানটা ব্যবহারের কোনও অনুমতি আমাদের দেয়নি দল। কিন্তু আমরা এতদিন ধরে যে কথাগুলো বলে আসছি, সেগুলোই এই গানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গানটা বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছে মানুষের মুখে মুখে। তাই যুবসমাজকে ব্রিগেডে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গানটা আমরা ব্যবহার করছি।’’

‘টুম্পাসোনা’-র সঙ্গে এই কোভিড-সময়ে জুড়েছে মাস্ক। বামেদের ব্রিগেড প্রচারে নবতম সংযোজন। গত সোমবার কলকাতা-সহ বেশ কিছু জেলায় ব্রিগেডের ওই মাস্ক বিলি করা হয়েছে। কোভিড অতিমারির কারণে মাস্ক ব্যবহার এখনও সর্বত্র বাধ্যতামূলক। তাই মাস্কের মাধ্যমেও ব্রিগেডের প্রচার করছে বামেরা। তার সঙ্গেই নবতম সংযোজন ‘ফ্ল্যাশ মব’। অর্থাৎ, সাধারণ ভিড়ের মধ্য থেকে বিদ্যুৎঝলকের মতো বেরিয়ে আসা মানুষের ঝাঁক। যারা সেই ভিড়েই পূর্বনির্দিষ্ট পারফরম্যান্স করে দেখাবে। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই পন্থা প্রথম চালু হয়েছিল বিদেশে। গত এক দশক ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তেও এই প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার। তবে বামপন্থীদের ‘ফ্ল্যাশ মব’ সংগঠন নিঃসন্দেহে অভিনব এবং নজিরবিহীন। ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে আগেই রাজ্য জুড়ে প্রচার শুরু করেছিল বামেরা। দিন যত এগিয়ে আসছে, তত সেই প্রচারকে শিখরে পৌঁছতে তৎপরতা শুরু হয়েছে বাম শিবিরে। প্রচারের ব্যাপকতা বৃদ্ধির জন্য নানা পদ্ধতির তালিকায় যুক্ত হয়েছে ‘টুম্পাসোনা’ প্যারডি এবং ব্রিগেড মাস্ক। লক্ষ্য একটাই— ব্রিগেড ভরাতে হবে। প্রচারের বহর দেখে অনেক বামনেতাই স্বীকার করছেন, এর আগে যত ব্রিগেড হয়েছে, সেখানে প্রচারের এত ধরণ লক্ষ্য করা যায়নি।

Advertisement

আগামী রবিবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের সমাবেশে অন্তত ১০ লক্ষ লোক আনার লক্ষ্য নিয়েছে বামেরা। সেই মতো জেলা ধরে ধরে লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য পূরণ করতে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন ভাবে ব্যাপক প্রচার শুরু করেছেন বামনেতৃত্ব। দেওয়াল লিখন থেকে নেটমাধ্যম— সর্বত্রই ব্রিগেড সমাবেশের প্রচার শুরু হয়েছে। এর আগে ব্রিগেডের জন্য বামেদের প্রচারের আগাগোড়াই ছিল দেওয়াল লিখন। এর পর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল পোস্টার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার। এ ছাড়া ব্রিগেডের জন্য ছোট ছোট সভা ও মিছিলও করা হত। ব্রিগেডে আসার আহ্বানে ওই সভা এবং মিছিলে বামফ্রন্টের রাজ্য নেতৃত্বকেও অংশ নিতে দেখা যেত। ব্রিগেডের জন্য আমন্ত্রণলিপি ও প্রচারপত্রও বিলি করতেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা।

ফেব্রুয়ারির শেষদিনে ব্রিগেডের জন্য এই সমস্ত পন্থা তো আছেই। তার সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে নেটমাধ্যম। দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল এবং বিজেপি-র বিরুদ্ধে কার্টুন, গ্রাফিক, গান এবং কবিতায় মানুষকে ব্রিগেডে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বামপন্থীরা। গ্রামে, গঞ্জে, হাটে-বাজারে সিডি এবং ক্যাসেটের মাধ্যমেও প্রচার করা হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমানের এক নেতার কথায়, ‘‘আমরা সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে তো সেটা সম্ভব নয়। তাই যেখানে যেভাবে প্রয়োজন, সেভাবেই প্রচার চলছে। সব জায়গায় সভা বা মিছিল করা যাচ্ছে না। তাই বিকল্প ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু সর্বোপরি মানুষের কাছে আমাদের পৌঁছতেই হবে। তার জন্য ২৫ তারিখ থেকে তিন দিন ধরে আমরা গ্রামের বিভিন্ন হাটে সিডি-ক্যাসেটে প্রচার করছি। ক্যাসেটে বিভিন্ন গানের পাশাপাশি থাকবে স্লোগান আর নেতাদের বক্তব্য।’’

তবে শেষপর্যন্ত দেখার যে, এই প্রচারের কতটা ভোটের বাক্সে টেনে আনতে পারে বামেরা। তথ্য বলছে, এর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও ব্রিগেড সমাবেশ করেছিল বামেরা। সেই ব্রিগেডে লোক আনতে সফল হলেও ভোটে তার সুফল পায়নি বামশিবির। রাজ্যে একটিও লোকসভা আসনও জিততে পারেনি তারা। এমনকি, লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে প্রায় কোনও বিধানসভা আসনেও তারা এগিয়ে ছিল না।

রসিকজন বলছেন, এবারেও তেমনকিছু হলে টুম্পাসোনাকেও মাস্কে মুখ ঢেকে বাড়ি ফিরতে হবে!

মাস্কের মাধ্যমেও ব্রিগেডের প্রচার করছে বামেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন