সামনে ‘বিধাননগর মডেল

ঘুরে দাঁড়ানোর তোড়জোড়

ভোটে ‘বিধাননগর মডেল’কে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর তোড়জো়ড় চলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ মহলে। ভোট লুঠ, ছাপ্পা, রিগিং‌, বুথ জ্যাম কিংবা স্রেফ ভয় দেখিয়ে ভোটারদের বাধা দেওয়ার মতো চিরাচরিত রেওয়াজ আছে এই জেলায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২০
Share:

জয়নগরে চলছে তল্লাশি। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

ভোটে ‘বিধাননগর মডেল’কে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর তোড়জো়ড় চলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ মহলে। ভোট লুঠ, ছাপ্পা, রিগিং‌, বুথ জ্যাম কিংবা স্রেফ ভয় দেখিয়ে ভোটারদের বাধা দেওয়ার মতো চিরাচরিত রেওয়াজ আছে এই জেলায়। সে সব রুখে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ সুনিশ্চিত করাই এখন পুলিশ-প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ।

Advertisement

কখনও ধমক, কখনও বাহবা দিয়ে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই সাধ্যমতো ওষুধ প্রয়োগ করেছে। ষষ্ঠ দফা ভোটের ঠিক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বার ভোটের দিন বুথে বুথে ভূতের নেত্য ঠেকানোর দায়িত্ব এসে পড়েছে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের উপরেও। যে দায়িত্ব পালন করতে তাঁরা বদ্ধপরিকর— পুলিশের নিচু মহল পর্যন্ত পৌঁছেছে এই বার্তা। তাতে বাহিনীর মনোবল বেড়েছে বলেই মনে করছেন দফতরের কর্তারা। হামলার মুখে পুলিশ কর্মীর টেবিলের তলায় লুকনোর দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত জনতাও রাজ্য পুলিশকে ‘দাবাং’ ভূমিকায় দেখতে মুখিয়ে আছে। ডায়মন্ড হারবারের এক সাব ইন্সপেক্টর যে কারণে কাব্যিক ঢঙে বলে ফেললেন, ‘‘এ বার ভাবছি ঘুরে দাঁড়ানোই ভাল, যদি এদ্দিনে উর্দির মান রাখা যায়।’’

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোট ঘোষণার পর থেকে এলাকায় পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতি বেড়েছে। বেড়েছে গাড়ির সংখ্যা। যে দু’টি সমস্যায় মূলত জেরবার বেশিরভাগ থানা। এখন অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ করতে সুবিধা হচ্ছে, জানালেন কাকদ্বীপের এক পুলিশ অফিসার। এক প্রশাসনিক অধিকারিকের কথায়, ‘‘মহকুমায় পুলিশ অফিসারদের মনোবল এখন তুঙ্গে। যে কোনও জায়গায় দ্রুত পদক্ষেপ করছে। সামান্য অভিযোগ হলেই তদন্তে নামছেন তাঁরা।’’

Advertisement

এত সবের মধ্যেও খুচখাচ অভিযোগ যে উঠছে না, এমন নয়।

শুক্রবার পাথরপ্রতিমা এবং কাকদ্বীপ থেকে বিরোধীরা দু’টি অভিযোগ তুলেছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভোটের কাজে ব্যবহার করা নিয়ে। পাথরপ্রতিমার সিপিএম নেতা যজ্ঞেশ্বর দাসের অভিযোগ, ‘‘জি-প্লটে সিভিক ভলান্টিয়ারদের একটি অংশ পোলিং এবং প্রিজাইডিং অফিসারদের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছেন। অনেক ক্ষেত্রে তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে তাঁরা খাওয়া-দাওয়াও করছেন। আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’’ কাকদ্বীপের বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, কোনও একটি ঘটনায় শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থানায় জানালে সিভিক ভলান্টিয়ারদের মাধ্যমে সেই খবর পৌঁছে যাচ্ছে শাসক দলের কাছেও। ফলে পুলিশ পৌঁছনোর আগে সব সাফ হয়ে যাচ্ছে। যদিও মহকুমার তৃণমূল নেতারা সিভিক ভলান্টিয়ারদের এই ভূমিকা অস্বীকার করেছেন।

বিরোধীদের অভিযোগ, ‘ভোট করাতে’ বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ছে ক্যানিং মহকুমার নানা প্রান্তে। উত্তর ২৪ পরগনার সরবেড়িয়া, সন্দেশখালি, নিউটাউন থেকেই আসছে দুষ্কৃতীরা। বিগত বছরগুলিতে ভোট দিতে না পেরে গোসাবার চুনাখালি, বাসন্তীর চড়াবিদ্যা, আঠারোবাঁকি, ঝড়খালি এলাকার মানুষ কলকাতা হাইকোটে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন। আদালত কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে, ওই সব এলাকায় যেন সকলের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়। শুক্রবার সকাল থেকে ওই সব এলাকায় এলাকায় পুলিশের নাকাবন্দি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি চলছে।

এত সবের মধ্যে এ দিনই সকালে ক্যানিঙের মধুখালি, কৃপাখালি এলাকায় নম্বরপ্লেটহীন মোটর বাইকে এক ব্যক্তিকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরতে দেখে খবর যায় পুলিশে। এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গোপালপুরের এক আরএসপি নেতা জানালেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে তৃণমূল মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। বলা হচ্ছে, বুথের ভিতরে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। কে কোথায় ভোট দিচ্ছে, সব খেয়াল রাখা হবে।

মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য জানান, বুথের ভিতরে যে সব ক্যামেরা আছে, তা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছে। কে কোথায় ভোট দিচ্ছেন, তা কমিশনের আধিকারিকেরাও দেখতে পাবেন না বরং বুথের ভিতরে ছাপ্পা, রিগিং চললে নজর করা যাবে ওই ক্যামেরায়।

ক্যানিঙের এক পুলিশ অফিসার জানান, উপরতলার চাপ নেই। কোনও রাজনৈতিক রঙ না দেখে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আছে। সেই মতো সব জায়গায় পুলিশি বন্দোবস্ত রাখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন