বেলা গড়াতেই ঢাকের বোল, চলল মিষ্টিমুখও

কী হয়, কী হয়, টানটান উত্তেজনা। কিন্তু, বেলা একটু গড়াতেই দ্রুত স্পষ্ট হল ছবিটা— রায় গিয়েছে দিদির পক্ষেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০২:৫৮
Share:

ভোটের ফল বের হতেই দেদার ফাটল বাজি। নিজস্ব চিত্র।

কী হয়, কী হয়, টানটান উত্তেজনা। কিন্তু, বেলা একটু গড়াতেই দ্রুত স্পষ্ট হল ছবিটা— রায় গিয়েছে দিদির পক্ষেই।

Advertisement

১৯ শে এপ্রিল, বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই সিউড়ি রামকৃষ্ণ শিল্প বিদ্যাপীঠে ছিল তুমুল ব্যস্ততা। এখানেই ভোটগণনা হয় দুবরাজপুর, সিউড়ি, সাঁইথিয়া, ময়ূরেশ্বর আসনের। ওই সকালেই উপস্থিত হন গণনাকর্মী, সরকারি আমলা, রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী এজেন্ট থেকে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। দুরুদুরু বুকে উপস্থিত বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মীরাও। একই ছবি ছিল রামপুরহাট কলেজ এবং শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয় পারুলডাঙায়। ওই দু’টি কেন্দ্রে গণনা হয় যথাক্রমে রামপুরহাট, নলহাটি, মুরারই, হাঁসন এবং নানুর, লাভপুর, বোলপুর আসনের।

আটটা নাগাদ পোস্টাল ব্যালট খোলা পর থেকে উৎকণ্ঠার পারদ চড়ছিল। গণনাকেন্দ্রের বাইরে সব রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক ও সবক’টি কেন্দ্রের প্রার্থীরা উপস্থিত হন গণনাকেন্দ্রের মধ্যে। পৌনে ন’টা নাগাদ ইভিএমের প্রথম রাউন্ড গণনা শেষ হওয়ার সঙ্গেই শাসক দলের প্রার্থীরা কোথাও যেন দিনটার আভাস পেয়ে গিয়েছিলেন। দুবরাজপুর বিধানসভার প্রথম রাউন্ডে ১৪টি টেবিলের মধ্যে ১২টিতেই এগিয়েছিলেন নরেশ বাউড়ি। একই ভাবে প্রথম রাউন্ড থেকেই নিজেদের অগ্রগতি বাজায় রাখতে শুরু করেন সাঁইথিয়ার নীলাবতী সাহা, ময়ূরেশ্বরের অভিজিৎ রায়, সিউড়ি কেন্দ্রের শাসক দলের প্রার্থী অশোক চট্টোপাধ্যায়রা।

Advertisement

প্রথম কয়েক’টি রাউন্ডের পরে শাসক দলের প্রার্থীদের জয় স্পষ্ট হতে থাকে। একটি বারের জন্যও বিরোধী জোট প্রার্থী বা বিজেপি-র প্রার্থীদের এগোতে দেখা যায়নি। এরপর যত সময় গড়িয়েছে ব্যবধান বড়েছে। বেলা ১১টা থেকেই গণনাকেন্দ্রে বাইরে ঢাক বাজতে শুরু করে। আর মলিন হতে থাকে বিরোধীদের হাসি। সেটা রামচন্দ্র হোন বা বিজয় বাগাদি বা ধীরেন বাগদি। হতাশ পার্টি কর্মীরা বলাবালি শুরু করেন, ‘‘আর বোধহয় আশা নেই!’’ আশা নেই বুঝে এক বারের জন্যও গণনাকেন্দ্রে আসেননি ময়ূরেশ্বরের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়, সিউড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা না হলেও একটার মধ্যে দুবরাজপুরের তৃণমূল প্রার্থী নরেশচন্দ্র বাউড়ি, একটু পর সাঁইথিয়ার নীলাবতী সাহারা জয়ী হয়ে যান। তারপর ময়ূরেশ্বর ও সিউড়ি-র তৃণমূল প্রার্থী অভিজিৎ রায় এবং অশোক চট্টোপাধ্যায় বেরিয়ে এসে জয়ী হওয়ার কথা জানান।

বাইরে তখন উল্লাসে মেতেছেন তৃণমূল কর্মীরা। বাজছে ঢাক। ফাটানো হচ্ছে বাজি। সঙ্গে সবুজ অবিরের ছড়াছড়ি। শংসাপত্র দিতে বেলা তিনটে হয়ে যায়। হতাশ ধীরেন বাগদিকে দেখা যায় বাইরে এসে মাঠে বসতে। বলেন, ‘‘এমন ফল একেবারেই আশা করিনি।’’ সাড়ে তিনটে নাগাদ বেরিয়ে একই কথা বলেন রামচন্দ্র ডোম ও বিজয় বাগদিরা। সময় যত এগিয়েছে, ততই স্পষ্ট হয়েছে প্রাক্তন বিধায়ক তপন হোড়ের ‘অস্তাচলে’ যাওয়ার বিষয়। ফল ঘোষণা শেষে দেখা যায় হেরে গিয়েছেন বর্ষীয়ান আরএসপি নেতা তপন হোড়।

চার রাউন্ডের মাথায় রামপুরহাটের তৃণমূল প্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এগিয়ে গিয়েছেন তখন ফাটতে শুরু করে শব্দবাজি। শুরু হয় আবির খেলা। আশিসবাবুর অনুগামীরা বুঝে যান, দাদা এ বারও জিতছেন। ওঠে শ্লোগান। আশিসবাবু বাড়ি যেখানে সেই ৫ নম্বর ওয়ার্ডে চলে মিষ্টিমুখ। অন্য দিকে, মুষড়ে পড়া ছবি ছিল সিপিএম পার্টি অফিসে। মনমরা দেখা গিয়েছে বিজেপি কর্মীদেরও। তবে রামপুরহাটের বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডলকে শেষ পর্যন্ত গণনাকেন্দ্রে দেখা গিয়েছে। অনুগামীরা বলছেন, ‘‘দাদা কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়েছেন।’’

তবে ‘টেনশন’ যে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিল তা মেনেছেন ডান-বাম সব দলের প্রার্থীরাই। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত দলের কোর কমিটির নেতাদের সঙ্গে ভোটের ফল নিয়ে কাটাছেড়া করেন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। চেয়ার থেকে পড়ে গিয়ে চোট পেয়ে কার্যত গৃহবন্দী থাকায় দলীয় কার্যালয়ে বা জেলা সভাপতির বাড়িতে দিন কয়েক ধরে আসতে পারছেন না চন্দ্রনাথ সিংহ। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘মুখে ৫০ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জিতব দাবি করলেও, সম্প্রতি চিন্তায় প়ড়েছিলেন চন্দ্রনাথ। লাগোয়া নানুর বিধানসভা সংলগ্ন পঞ্চায়েত এবং শহর এলাকায় বিক্ষুব্ধদের ‘অন্তর্ঘাত’ ও কপালে ভাঁজ ফেলেছিল তাঁর।’’ শেষ হাসি হেসেছেন তিনিই। জেলায় সর্বাধিক, প্রায় পঞ্চাশ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন তিনি।

গণনা উপলক্ষে নজিরবিহীন নিরাপত্তাও ছিল। ত্রি-স্তর নিরাপত্তার বলয়ে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। গণনাকেন্দ্রের ১০০ মিটার দূরে ছিল প্রথম ব্যারিকেড। পরিচয় পত্র ছাড়া গণনাকেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি কেউই। দ্বিতীয় ব্যরিকেড ছিল গণনাকেন্দ্রে বাইরে। সেখানে মোবাইলের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। এ দিন জেলার বহু জায়গায় দোকানপাট সকালের দিকে বন্ধ ছিল। তবে সময় যত বেড়েছে, জমেছে বাজার হাট। তবে, ফল ঘোষণার পরেপরেই বিভিন্ন এলাকায় বাজতে থাকে বক্স। ব্যতিক্রম ছিল না রামপুরহাটও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন