সিঙ্গুরে কমলো ভোট

সংশয় কাটল। তিনি জিতলেন। কিন্তু ভোট কমলো। রয়ে গেল প্রশ্নও। ‘শিল্প-শ্মশান’ সিঙ্গুর ফের ভরসা রাখল জোড়াফুলে। জিতলেন তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ভোট-পর্বের সূচনা থেকে জয় নিয়ে এ বার যিনি নিজেই সংশয়ে ছিলেন পুরোমাত্রায়!

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:২১
Share:

সৌজন্য রবীনে-রবীনে। সিঙ্গুরে বৃহস্পতিবার দীপঙ্কর দে’র তোলা ছবি।

সংশয় কাটল। তিনি জিতলেন।

Advertisement

কিন্তু ভোট কমলো। রয়ে গেল প্রশ্নও।

‘শিল্প-শ্মশান’ সিঙ্গুর ফের ভরসা রাখল জোড়াফুলে। জিতলেন তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ভোট-পর্বের সূচনা থেকে জয় নিয়ে এ বার যিনি নিজেই সংশয়ে ছিলেন পুরোমাত্রায়!

Advertisement

দলের অনেকে এ বার রবীন্দ্রনাথবাবুর প্রতি বিরূপ ছিলেন। প্রচারেও তিনি তেমন নজর কাড়তে পারেননি। ‘অনিচ্ছুক’দের অনেকে বেশ কিছু দিন ধরেই শিল্পের পক্ষে মুখ খুলছিলেন। তার উপরে জোটপ্রার্থী হিসেবে তাঁর বিপক্ষে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন, সেই রবীন দেব রাজ্য-রাজনীতিতে পোড়খাওয়া। সিঙ্গুরের মাটিতে ন্যানোতে চড়ে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন। ফলে, বর্ষীয়ান তৃণমূল প্রার্থীর রক্তচাপ বাড়ছিলই। এমনকী, বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার প্রথম রাউন্ডেও এগিয়ে ছিলেন জোটপ্রার্থীই। এ বার সিঙ্গুরে ‘অন্য কিছু’ হওয়া নিয়ে জল্পনা যখন তুঙ্গে, তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য সবুজ আবির উড়ল। হাসি ফুটল রবীন্দ্রনাথবাবুর মুখে। এই নিয়ে এই কেন্দ্র থেকে চার বার জিতলেন তিনি।

কিন্তু গতবার রবীন্দ্রনাথবাবু যেখানে ৩৪ হাজার ভোটে জিতেছিলেন, সেখানে এ বার তাঁর জয়ের ব্যবধান ২০ হাজার ৩৫২। অর্থাৎ, ভোট কমেছে। ফলে, ভোটারদের একাংশ যে তৃণমূলের থেকে সরেছেন তা স্পষ্ট। সম্ভবত, ওই সব ভোটারদের কাছে টানার জন্য তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে এ দিন ফের ‘অনিচ্ছুক’দের জমি ফেরানোর আশ্বাসের কথা শোনা গিয়েছে। মমতা বলেন, ‘‘সিঙ্গুর মামলা আদালতে রয়েছে। তবে, জমি আমাদের হাতে। আমরা তো আগেই বলেছি, টাটা ৬০০ একরে মোটর কারখানা করুক। আমরা ৪০০ একর কৃষকদের ফিরিয়ে দেব। কৃষকেরা জমি নিশ্চয়ই ফেরত পাবে।’’

এই জমি ফেরতের আশ্বাস দিয়েই পাঁচ বছর আগে রাজ্যের মসনদে বসেছিলেন মমতা। ক্ষমতায় আসার পরেই সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’দের জমি ফেরত দিতে আইন করে তৃণমূল সরকার। কিন্তু সেই আইনের বৈধতা নিয়েই এখন মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। আর এই ক’বছরে জমি ফেরত না পেয়ে ক্ষোভ-হতাশা বেড়েছে ‘অনিচ্ছুক’দের। শিল্পের পক্ষে তাঁরা আওয়াজ তুলেছেন।

এ বারের ভোটে সিঙ্গুরে তৃণমূলের পক্ষে এই ‘কঠিন’ পরিস্থিতি তো ছিলই। গত জানুয়ারিতে বামেদের ‘সিঙ্গুর থেকে শালবনি পদযাত্রা’য় মানুষের প্রবল উদ্দীপনাও তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়েছিল। তবু, শেষ পর্যন্ত মাস্টারমশাই জিতলেন। কিন্তু কেন কমল জয়ের ব্যবধান?

স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কেউ কেউ এর পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণ দেখছেন। তাঁদের মতে, সিঙ্গুর লাগোয়া হরিপালে তৃণমূল প্রার্থী বেচারাম মান্না যেখানে ত্রিশ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতেছেন, সেখানে রবীন্দ্রনাথবাবুর জয়ের ব্যবধান কমার কোনও কারণ ছিল না। যদি না গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকত। রবীন্দ্রনাথবাবুর অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘সিঙ্গুরের মানুষ যে এ বারও আমার উপর আস্থা রেখেছেন, সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’’

সিপিএম কিন্তু ঠিক এর উল্টো সুর গাইছে। তাদের দাবি, সিঙ্গুরের মানুষ যদি সত্যিই তৃণমূলের উপরে আস্থা রাখত, তা হলে এখানে রবীন্দ্রনাথবাবুর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা আরও বাড়ত। কিন্তু তা হয়নি। ভোট বেড়েছে বামেদেরই। বামপ্রার্থী রবীন দেব বলেন, ‘‘হারের কারণ নিশ্চয়ই পর্যালোচনা করা হবে। কিন্তু এটা স্পষ্ট, সিঙ্গুরে আমাদের ভোট বেড়েছে। এটাই আশার আলো।’’

কী বলছেন ‘অনিচ্ছুক’রা?

কারও প্রশ্ন, এ বার কি শিল্প হবে? কারও প্রশ্ন, ‘দিদি’ কি এ বার সত্যিই জমি ফেরত দেবেন? কারও প্রশ্ন, অবস্থা কি পাল্টাবে?

উত্তর কিন্তু দিতে হবে বিজয়ী প্রার্থী ও তাঁর দলকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন