ভূতবন্দি খেলা

প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোটে কয়েক জায়গায় ‘ভূত’দের বুথ দখলের অভিযোগ করেছিল বিরোধীরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসে কমিশন। তৃতীয় ও চতুর্থ দফার ভোটে সংঘর্ষ, বুথের সামনে খুনের ঘটনা ঘটলেও ‘ভূতের’ দাপাদাপি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। আজ, পঞ্চম দফায় ‘ভূত’দের একেবারে বোতলবন্দি করতে বদ্ধ পরিকর কমিশন।

Advertisement

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৪
Share:

অঙ্কন: নির্মাল্য প্রামাণিক

প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোটে কয়েক জায়গায় ‘ভূত’দের বুথ দখলের অভিযোগ করেছিল বিরোধীরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসে কমিশন। তৃতীয় ও চতুর্থ দফার ভোটে সংঘর্ষ, বুথের সামনে খুনের ঘটনা ঘটলেও ‘ভূতের’ দাপাদাপি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। আজ, পঞ্চম দফায় ‘ভূত’দের একেবারে বোতলবন্দি করতে বদ্ধ পরিকর কমিশন। বুথের সামনে যে কোনও জমায়েত বন্ধে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। ‘ভূত’ আটকাতে কমিশনের এই দাওয়াই কতটা কাজে আসে তারই অপেক্ষায় ভোটাররা।

Advertisement

আজ গঙ্গার ওপারে উত্তর ২৪ পরগনার সঙ্গে ভোটযুদ্ধে সামিল এ পারের হাওড়াও।

রাজ্যে পালাবদল হয়েছিল ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত এবং ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আলাদা আলাদা লড়াই করে কংগ্রেস ও তৃণমূল। তাতে অবশ্য দেখা গিয়েছিল তৃণমূলেরই জয়জয়কার। রক্তক্ষরণ হয়ে শুধু হাওড়াতেই লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত কংগ্রেসের ভোট নেমে আসে ৫ শতাংশে। কমে বাম ভোটও। হার নেমে আসে ২৮ শতাংশে।

Advertisement

লোকসভার হিসাবে জেলায় ১৬টি আসনের প্রতিটিতেই এগিয়ে তৃণমূল। সেই হিসাবে শাসক দলের সামনে পড়ে আছে ফাঁকা মাঠই। কিন্তু ২০১৪ সালের পরে রাজ্য রাজনীতিতে অনেক জল গড়িয়েছে। আর সেটা মাথায় রেখেই জেলার রাজনৈতিক মহল এই হিসেব ততটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। সারদায় কোটি কোটি টাকা লুঠ, কামদুনি, আমতায় মুক্তিরচক গণধর্ষণ-সহ নারী নির্যাতনের নানা ঘটনা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-অধ্যাপক নিগ্রহের মতো ঘটনা সামনে এসেছে। আলোড়ন ফেলেছে টেট কেলেঙ্কারি। উঠেছে টানা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ। সর্বোপরি নারদ স্টিং কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা। যাতে জড়িয়ে গিয়েছে জেলার দুই তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুলতান আহমেদের নাম।

গণতন্ত্র রক্ষা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষকে এক করতে তৈরি হয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। জেলার রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, নানা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোর ফলে একদিকে যেমন শাসক দল বেকায়দায় পড়েছে, তেমনই আর এক দিকে জোট গড়ে বিরোধীরা তাদের বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। তা ছাড়া, আরও নানা কারণে বেশ কয়েকটি কেন্দ্র এ বার আতস কাচের নীচে বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি। উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী নির্মল মাজি তাঁর নানা কর্মকাণ্ডে ইতিমধ্যেই বিতর্কে জড়িয়েছেন। তার ওপর রয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কাঁটা।

একে বহিরাগত, তায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব—দুয়ের ঝড় সামলাতে হিমসিম জগৎবল্লভপুরের তৃণমূল প্রার্থী মহম্মদ আব্দুল গনি। কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান গনি প্রার্থী হয়েছেন তাঁরই দলের বিধায়ক আবুল কাশেম মোল্লাকে সরিয়ে। বিদায়ী বিধায়কের ছেড়ে যাওয়া জুতোয় পা গলিয়ে গনি কতটা এগিয়ে যেতে পারেন সেটাই চর্চার বিষয়।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার আরও দু’টি বিধানসভাকেন্দ্র সাঁকরাইল ও পাঁচলা। সাঁকরাইলের বিদায়ী বিধায়ক তথা প্রার্থী শীতল সর্দারের বিরুদ্ধে তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী নির্দল প্রার্থীও দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি তারা। তলে তলে ঘরে বসে যাওয়া সিপিএম কর্মীদের টেনে বের করে লড়াইয়ের ময়দানে নামিয়ে দিচ্ছে। ফলে লড়াই বেশ কঠিন শীতলবাবুর পক্ষে। পাঁচলায় জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, সদস্য, দলীয় পঞ্চায়েত প্রধানদের বিরুদ্ধেই তোপ দাগতে হচ্ছে বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক ও প্রার্থী গুলশন মল্লিককে।

আমতায় ২০১১ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের হয়ে জিতেছিলেন কংগ্রেসের অসিত মিত্র। বামেদের সমর্থন নিয়ে এবারেও তিনি প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করেছে ব্যায়ামবীর তুষারকান্তি শীলকে। রাজনীতিতে পোড় খাওয়া জোটপ্রার্থীর বিরুদ্ধে আনকোরা ব্যায়ামবীর কতটা সফল হন সেটাই এখন দেখার।

উদয়নারায়ণপুরে কংগ্রেস প্রার্থী তৃণমূলেরই জেলা পরিষদ সদস্য সরোজ কাঁড়ার। অশীতিপর মানুষটি এমনিতেই হেভিওয়েট। তার উপরে তিনি প্রার্থী হওয়ায় কংগ্রেসিরা যেমন চাঙ্গা হয়েছেন, তেমনই কার্যত আড়ালে চলে যাওয়া সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা সরোজবাবুকে সমর্থন করতে পথে নেমেছেন। সরোজবাবুর মনোনয়ন পাওয়ার আগে পর্যন্ত উদয়নারায়ণপুর ছিল তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক তথা প্রার্থী সমীর পাঁজার অবাধ বিচরণক্ষেত্র। এখন যে তা আর অবাধ নয়, তা টের পাচ্ছেন সমীর। শ্যামপুরে কংগ্রেস প্রার্থী অমিতাভ চক্রবর্তী দলের মরা গাঙে যে বান এনেছেন তার প্রমাণ গত শনিবারের রাহুল গাঁধীর সভা। অন্তত ৪০ হাজার মানুষের এই সমাবেশ কপালে ভাঁজ ফেলেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বেরও।

জেলা তৃণমূল‌ নেতৃত্ব অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে যে কোনও সম্ভাবনাকেই তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে নারদ স্টিং—কিছুকেই তাঁরা ধর্তব্যে আনতে নারাজ। জেলা নেতৃত্বের দাবি, উন্নয়নের প্রশ্নে গড়গড়িয়ে চলবে দলের ১৬টি কেন্দ্রেই ছুটবে বিজয় রথ।

বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের পাল্টা দাবি, জমি তৈরি আছে। নির্বাচন কমিশন সঠিক ভূমিকা পালন করলে ওদের (তৃণমূলের) সব হিসাব গুলিয়ে দিতে তৈরি মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন