মারের বদলে মার

কমিশনের কড়া নজরদারির মধ্যেই শেষ হল দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ। তবু অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূম সকাল থেকেই রবিবার ছিল উত্তপ্ত। বোলপুর, ইলামবাজার, নানুর, সাঁইথিয়া, হাঁসন তেকে মিলল গোলমালের খবর। অভিযুক্ত সেই তৃণমূল।

Advertisement

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪৯
Share:

ময়ূরেশ্বরের প্রচণ্ডপুরের বুথে জনতাকে সরিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ছবিটি তুলেছেন শুভাশিস ভট্টাচার্য।

কমিশনের কড়া নজরদারির মধ্যেই শেষ হল দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ। তবু অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূম সকাল থেকেই রবিবার ছিল উত্তপ্ত। বোলপুর, ইলামবাজার, নানুর, সাঁইথিয়া, হাঁসন তেকে মিলল গোলমালের খবর। অভিযুক্ত সেই তৃণমূল। কোথাও কোথাও অভিযোগের আঙুল বিরোধী জোটের দিকেও। নানুর এবং দুবরাজপুরে অনেকগুলি বুথে বিরোধী এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। যদিও পাল্টা অভিযোগ তৃণমূলেরও। তবে বোলপুর থেকেই গোলমালের খবর মিলেছে সব থেকে বেশি।

Advertisement

সকাল ৬ টা ৪৫

এ দিন সাত সকালেই সাঁইথিয়া পুরসভার তিনটি বুথের মুখে বড় লাইনের দেখা মিলল। লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। একই ছবি জেলার অন্যত্রও। দুবরাজপুরের প্রতিটি বুথেও ছিল লম্বা লাইন। তবে বোলপুরে মাখড়ায় যা আশঙ্কা ছিল। হলও তাই। বুথে এজেন্টই বসতে দিল না বিরোধীরা। স্থানীয় তৃণমূলের নেতা থেকে সংশ্লিষ্ট ব্লকের সভাপতি জাফারুল ইসলাম। তাঁর দাবি, ‘‘মাখড়ায় এজেন্ট নেই ঠিকই। দেখবেন লিড কার হয়!’’ অন্যদিকে নলহাটি বিধানসভা এলাকার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের জগধারী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মহিলাদের লাইনে বেশি ভিড় দেখা গেল পুরুষদের চেয়ে।

Advertisement

সকাল ৭ টা ১৫

নলহাটি হরিপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলে ঢুকে দেখা গেল বুথগুলির বাইরে দরজায় বেলুন দিয়ে সাজানো। কমিশনের কথায় মডেল বুথ। বুথের বাইরে দেখা গেল লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটাররা। সে লাইন অনড়। কারণ জানতে চেয়ে উত্তর মিলল। ‘‘ইভিএম খারাপ। ঠিক করা হচ্ছে।’’ রাজ্যে কোথাও বুথের মধ্যে ঢুকে চলল ছাপ্পা, কোথাও ইভিএম খারাপ। আদর্শ বুথ!

সকাল ৭ টা ৩৫

বিজয় বাগদি জানালেন, খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়ার ১০২ নম্বর বুথে তাঁর দলের পোলিং এজেন্টকে তুলে নিয়ে গিয়েছে তৃণমূলের লোকেরা। ওই বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা বললেন, দু’জন এজেন্ট এখানে রয়েছেন। কাউকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে খবর নেই। একই দাবি খয়রাশোল থানার পুলিশেরও। সঙ্গে দাবি, ‘‘পোলিং এজেন্ট বুথে না যেতে পারলে সেক্টর অফিসারদের জানানো হয়। তাঁরাই পৌঁছে দেবেন। প্রার্থী সেটা করেননি।’’

সকাল ৮ টা ৩০

সোনারকুন্ড হাই স্কুল। সিপিএমের নলহাটি জোনাল সম্পাদক সনৎ প্রামাণিক অভিযোগ করেন, ‘‘তৃণমূল কর্মীরা ১১৮ নম্বর বুথ জ্যাম করার চেষ্টা করছে।’’ রামপুরহাট মহকুমার সার্বিক ভোট পড়ার হার তখন ১১ শতাংশ। নলহাটি থানার বাউটিয়া গ্রাম। মহিলা ভোটারদের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ল।

সকাল ৯টা ৩০

ইলামবাজার সহ আশেপাশের এলাকায় খবর চাউর হল, বারুইপুর প্রাথমিক স্কুলের বুথ দখল হয়েছে। বিরোধী এজেন্টদের বের করে নির্বিঘ্নে ছাপ্পা ভোট করছে তৃণমূল। তবে ঘটনাস্থলে অবশ্য অন্য চিত্র দেখা মিলল। শতাধিক পুরুষ, মহিলা লাইনে দাঁড়িয়ে। আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। অন্যদিকে নলহাটির গোপালপুর থেকে বিশোড় যাওয়ার রাস্তা দিয়ে আমাইপুর গ্রাম আসার জন্য সাত কিমির পথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মিলল না।

সকাল ১০টা

বনগ্রাম অঞ্চলের পাকুড়িয়া প্রাথমিক স্কুলের ১৩১ নম্বর বুথ। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় ওই এলাকায় কিছুটা গন্ডগোল হয়েছিল। এবারে ভোটের লাইনে দাঁড়ানো লোকজনেরা জানালেন, কোনও সমস্যা নেই। কেন্দ্রীয় বাহিনী সক্রিয়। ইলামবাজার ব্লকের ঘুড়িষা পঞ্চায়েত। ওই এলাকার বুথ নম্বার ৭৩ ডুমরুট গজেন্দ্রগামিনী প্রাথমিক বিদ্যালয়। আচমকা একের পর এক মাথায় ব্যান্ডেজ অবস্থায়ে এক, দুই, তিন করে লাইনে হাজির মানুষজন। ঘাড় বেয়ে কারো রক্ত ঝরেছে বুক পর্যন্ত। তৃণমূলের ফতোয়া মানেননি, বিজেপি। অভিযোগ, বুথে বিজেপির এজেন্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে, তৃণমূল বেধড়ক মেরেছে। আহত হয়েছেন বিজেপির আট কর্মী সমর্থক। ওই গ্রামের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দারা জানান মন্দের ভাল আহত হয়েও, নির্বিঘ্নে নিজের ভোট দিতে পেরেছেন। আটক করা হয়েছে তৃণমূলের পাঁচ কর্মী-সমর্থককে। রোদে অসুস্থ হয়ে প়ড়েন দুবরাজপুরের নীলু বাউড়ি। নলহাটি থানার শ্রীপুর হয়ে কুশমোড় যাওয়ার রাস্তায় দেখা নেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর। বুথে আট জওয়ান থাকলেও ভোটার নেই। জানা গেল প্রায় অর্ধেকের উপর ভোট পড়ে গিয়েছে।

বেলা ১১টা

মহম্মদবাজারের শেওড়াকুড়ি থেকে ঝাড়খণ্ডের দুমকা যাওয়ার রাস্তায় সীমান্তের গ্রাম নতুনডিহি। কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই। রাজ্য পুলিশই যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করছে। খবর এল ঘুড়িষা পঞ্চায়েতের পশ্চিম নারায়ণপুরের ৭৩ নম্বর বুথে এজেন্টদের বের করে রিগিং করছে তৃণমূল। বিজেপির প্রার্থী দিলীপ ঘোষ গিয়ে অভিযোগ করলেন, শাসকদলের কর্মীরা তাঁকে ধাক্কাধাকি করেন। নানুর বিধানসভার বিদায়ী বিধায়ক তথা দলীয় প্রার্থী গদাধর হাজরার ভোট করানোর দায়িত্ব কাঁধে এসেছে হৃদয় ঘোষের। সকাল থেকে তাই মাঠে নেমেছেন তিনি। কসবা গ্রামে দু’টি বুথে বেআইনি জমায়েত না করার জন্য বারবার বলেও কাজ হয়নি। ১১ নম্বর বুথ লাগোয়া এলাকায় এমন জটলা না করার জন্য লাঠি নিয়ে তেড়ে গিয়েছিলেন এক জওয়ান। লাঠিচার্জ-এর আশঙ্কায় হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ওই ভিড়ের ঠেলায় পড়ে হাতে চোট পান ওই জওয়ান। একজনকে অবশ্য জি়জ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।

দুপুর ২টো

সাঁইথিয়া মুরাডিহি কলোনির জিএসএফপি স্কুলের বারান্দায় ৯৫ বুথে ভোটারদের লম্বা লাইন। রোদ থেকে বাঁচতে স্কুলের বাইরে একটি গাছের নীচে দাঁড়িয়ে কয়েকজন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। বুথের মুখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোটে একজন জওয়ান। সদাইপুর থানা এলাকায় সদানন্দ বাউড়ি তাঁর স্ত্রীর ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। পথে তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থক মারধোর করে। তৃণমূল ও জোট সমর্থকদের মধ্যে সকাল থেকে কথা কাটাকাটি থেকে উত্তেজনা। উভয়পক্ষের অভিযোগ, অন্যপক্ষ ‘বুথ ক্যাপচার’ করেছে। এই নিয়ে মারামারি। জখম হলেন উভয়পক্ষের পাঁচ জন।

বিকেল ৩টে ৩০

সাঁইথিয়া হরিজন পল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০২ ও ১০৩ বুথে গিয়ে দেখা যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী বেশ সক্রিয়। রামপুরহাট কেন্দ্রের অন্তর্গত মহম্মদবাজারের ভাঁড়কাটা পঞ্চায়েতের হবিপুর গ্রামের ২১৫ নম্বর বুথের ইভিএম গণ্ডগোল থাকায় ভোট শুরু করতে কিছুক্ষণ দেরি হয়। কর্তৃপক্ষ জানান, সেখানে কিছুক্ষণের মধ্যেই ইভিএম পাল্টে দেওয়া হয়।

বিকেল ৫টা

দিনের শেষে মুরারই ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিনয় ঘোষ জানালেন, রাজগ্রাম এলাকায় তিনটি বুথে তাঁদের তিনজন এজেন্টকে কংগ্রেস প্রার্থী বসতেই দেয়নি। কংগ্রেস প্রার্থী আলি মর্তুজা খানের দাবি, ‘‘আমার জানা নাই।’’

(সহ প্রতিবেদন: অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়, মহেন্দ্র জেনা, দয়াল সেনগুপ্ত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন