আরামবাগ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। সাতমাসা প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন। ভোট কেন্দ্রেই জামা তুলে কোমরে গোঁজা পিস্তল দেখিয়েছিল তৃণমূলের এজেন্ট। আরামবাগ বিধানসভা এলাকার আরান্ডি-১ অঞ্চলের এই বাসিন্দার আশঙ্কা, ‘‘এ বারও যে সেরকম হবে না গ্যারান্টি কোথায়?’’
বস্তুত, হুগলির এই মহকুমায় ভোটের সময় অস্ত্রের দাপাদাপি নতুন নয়। আগের বাম আমলেও তা দেখা গিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার বদলের পর তৃণমূল সরকারের আমলে অস্ত্রের দাপাদাপি বন্ধে শাসক দল জেলায় বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে ‘জোর’ দিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও এখানে বেআইনি অস্ত্রে দাপট যে কমেনি তা বলাবাহুল্য। আর তাই মোশাররফের মতোই অস্ত্র নিয়ে নিজেদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন মহকুমার চারটি কেন্দ্র খানাকুল, গোঘাট, পুরশুড়া এবং আরামবাগের অধিকাংশ ভোটার।
আরামবাগের বাতানল গ্রামের উত্তম মালিককে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার পথে হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাঁর পোল্ট্রি ফার্ম বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হবে। উত্তমবাবু বলেন, ‘‘আমার ভোটটা ওদেরই দিতে বলে ফিরে এসেছিলাম। না হলে আর কী-ই বা করতে পারতাম!’’ একইরকম অভিজ্ঞতা রয়েছে গোঘাটের পশ্চিমপাড়ার তুষার রায়, খানাকুলের ঘোষপুরের সুকুমার দলুই কিংবা পুরশুড়ার শ্যামপুরের বিমল হাটির। এঁদের সকলেরই অভিযোগ, “গোটা মহকুমা জুড়ে বোমা, বেআইনি অস্ত্রে ছয়লাপ। তৃণমূলের মোটরসাইকেল বাহিনী গ্রামে সেই সব অস্ত্র দেখিয়ে ঘুরছেও। কিন্তু ওই সব বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ ও প্রশাসনের কোনও গা নেই।’’ তার উপর এ বার পাশের জেলাগুলিতে ভোটের দিন যে তাণ্ডবের ঘটনা দেখা গিয়েছে যাচ্ছে তাতে নির্বাচন কমিশন বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতি আস্থা নিয়েও ভোটারদের মনে প্রশ্ন জেগেছে।
বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করে আরামবাগের মহকুমা শাসক তথা রিটার্নিং অফিসার প্রতুলকুমার বসু বলেন, ‘‘এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ সম্পর্কে পুলিশ যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। ওরা সেই মতোই কাজ করছে।’’
বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেছে সিপিএম-সহ তাদের জোট এবং বিজেপিও। আরামবাগ সিপিএমের জোনাল সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, খানাকুলের জোনাল নেতা ভজহরি ভুঁইয়ার অভিযোগ, “ভোটে সন্ত্রাস কায়েম করতে তৃণমূল প্রচুর বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করেছে।’’ তাঁদের বক্তব্য, ‘‘সবকটি সর্বদলীয় বৈঠকেই আমরা দাবি জানিয়েছি ওই সব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হোক। কিন্তু তারপরেও পুলিশকে কোনও ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন তথা নির্বাচন কমিশনও এ নিয়ে উদাসীন।” সিপিএমের কটাক্ষ, ভোট শেষ হলে তবেই পুলিশ ওই সব অস্ত্র খুঁজে পাবে। যেমন গত বিধানসভা ভোট এবং লোকসভা ভোটের পর প্রচুর বোমা বন্দুক উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হয়নি। দলের কর্মী-নেতাদের জড়িয়ে অস্ত্র আইনে মামলা দেয়। এ বার এ ব্যাপারে তারা নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি আকর্যণ করবে।
কংগ্রেসের প্রভাত ভট্টাচার্য বলেন, “মহকুমা জুড়ে দেদার বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের খবর পুলিশ ভালই জানে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপই করছে না।” একই অভিযোগ বিজেপির নেতা অসিত কুণ্ডু এবং ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা তথা গোঘাটের প্রার্থী বিশ্বনাথ কারকের।
যদিও মহকুমা তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষে আরামবাগ তৃণমূল ব্লক সভাপতি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, “কোথাও কোনও আগ্নেয়াস্ত্র নেই। আরামবাগ এখন শান্তির মরুদ্যান। ও সব বাম আমলেই সিপিএম আমদানি করেছিল।”