(বাঁদিকে)বাসন্তীতে কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করল হামলাকারীদের।(ডানদিকে) বাসন্তীর ভাঙনখালিতে মারমুখী শাসকদলের লোকজন।
আরএসপি-তৃণমূল সংঘর্ষ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি, ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য বুথের সামনে তৃণমূলের জমায়েত, ছাপ্পা ভোট— শনিবারের ভোটে বাসন্তী এবং ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা এলাকা দিনভর সরগরম থাকল এই সব অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগে। যদিও দিনের শেষে বিরোধীরা জানিয়েছেন, গত কয়েকটি ভোটের তুলনায় এ বারের ভোটে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলনায় সক্রিয় ছিল। তাই বড়সড় গোলমাল এড়ানো গিয়েছে।
এ দিন বিকেলে বাসন্তীর কাঠাঁলবেড়িয়া পঞ্চায়েতের ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৯, ৭০ নম্বর বুথে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথের সামনে জটলা করা এবং ছাপ্পা দেওয়ার অভিযোগ তোলে আরএসপি। খবর পেয়ে ক্যানিংয়ের এস়়ডিপিও সৌম্য রায় বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বুথের সামনে থেকে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে ফের ওই বুথগুলির সামনে তৃণমূলের লোকজন জটলা করতে শুরু করে। এরপরে ঘটনাস্থলে এসে লাঠিচার্জ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এই ঘটনায় এক শিশু এবং এক মহিলা জখম হন বলে অভিযোগ। কাঁঠালবেড়িয়ার পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী আমান মোল্লাও চোট পেয়েছেন বলে তৃণমূলের দাবি। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, গোলমাল থামাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি চালায়। যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিশ কেউই গুলি চালানোর কথা মানতে চায়নি।
বাসন্তীর চ়়ড়াবিদ্যার গাজিপাড়া লুথার কোম্পানি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৪ নম্বর বুথে সাজ্জাত মাঝি ও আবদুল বারিক মোল্লা নামে আরএসপি-র দুই এজেন্ট বুথে বসতে গেলে তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বের করে দেয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে বাসন্তীর আরএসপি প্রার্থী সুভাষ নস্কর তাঁদের বুথে পৌঁছে দেন। কিন্তু তারপরে তৃণমূল ওই দুই এজেন্টকে অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। পুলিশ জানিয়েছে, আরএসপির ওই দুই এজেন্ট প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে ‘রিপোর্ট’ করেননি। তাঁদের খোঁজ চলছে।
(বাঁদিকে) জখম আরএসপি-র কর্মীরা। (ডানদিকে) ক্যানিঙে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বাস ভাঙচুর।
এ দিন দুপুরে পশ্চিম ভাঙনখালির ৭৮, ৭৯, ৮০ নম্বর বুথে কিছু তৃণমূল সমর্থক মহিলা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরএসপি-তৃণমূলের সংঘর্ষ বাধে। তৃণমূল সমর্থকেরা লাঠি, বাঁশ নিয়ে আরএসপি সমর্থকদের উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। আহত হন আরএসপি সমর্থক আতিয়ার লস্কর, রমজান শেখ, আফছারুল শেখ, জহর আলি মোল্লা, ইয়াসিন শেখ। আরএসপি-র লোকজনের বিরুদ্ধে এক মহিলা তৃণমূল কর্মীর দুল ছিঁড়ে নেওয়া এবং শ্লীলতাহানির পাল্টা অভিযোগ করেছে তৃণমূল। যদিও আরএসপি অভিযোগ মানেনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তৃণমূল এবং আরএসপি সমর্থকদের লাঠি উচিয়ে সরিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। আরএসপির আরও অভিযোগ, ওই ঘটনার পরে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা গ্রামে ঢুকে আরএসপি সমর্থকদের মারধর করেছে। খালপাড়ার ২৩ নম্বর বুথে বিরোধী ভোটারদের ভোট দিতে তৃণমূল বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিমুলতলার ৬৩, ৬৫, ৬৬, ৬৮ নম্বর বুথেও এজেন্ট বসাতে পারেনি আরএসপি। আঠারোবাঁকি পঞ্চায়েতের ১৭ নম্বর বুথে সকালে ইভিএম খারাপ হয়ে গেলেও পরে ঠিক হয়ে যায়।
ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা থেকেও বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবর মিলেছে। গোলাবাড়ির ১৩৬, ১৩৭ নম্বর বুথে ভোটারদের ভয় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ইটখোলা পঞ্চায়েতের ১৬২ নম্বর বুথে তৃণমূল ছাপ্পা চালিয়েছে এবং মিঠাখালির দাসপাড়া বুথে বিরোধী এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বিরোধীদের অভিযোগ, ক্যানিং ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পরেশরাম দাসের নেতৃত্বে ৪-৫টি বাইক এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভোটারদের প্রভাবিত করেছে। পরে অবশ্য কেন্দ্রীয় বাহিনী তাদের আটকায়।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে পরেশবাবুর বলেন, ‘‘আমি কাউকে প্রভাবিত করিনি। বাইক মিছিলও করিনি।’’ সঞ্জয়পল্লি এলাকার ৯৩ নম্বর বুথে তৃণমূলের প্ররোচনায় জোটের পোলিং এজেন্ট মোহিত সরকারকে কেন্দ্রীয় বাহিনী মারধর করে বলে অভিযোগ।
এ দিকে, ভোট শেষ হতেই সন্ত্রাসে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের মনসাখালি গ্রামে আক্রান্ত হন আরএসপি কর্মী নিশিকান্ত নস্কর। অভিযোগ, বারণ করা সত্ত্বেও তিনি কেন ভোট দিয়েছেন, সেই আক্রোশে হামলা চালায় তৃণমূল। আরএসপি প্রার্থী সুভাষ নস্কর বলেন, ‘‘ভোট মিটতেই সন্ত্রাস শুরু করেছে ওরা।’’ নিশিকান্তকে ভর্তি করা হয়েছে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল নেতা মন্টু গাজি বলেন, ‘‘এটা রাজনৈতিক ঘটনা নয়। ওরা নাটক করছে।’’
বাসন্তীর ন্যাংটাখালিতে বিজেপি এজেন্ট দেবেন নস্করকেও মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও সে কথা মানতে চাননি তৃণমূল নেতারা।
ছবি: সামসুল হুদা।