কথা চুলোয়, লোক টানছে ফিল্মি তারা

চড়া রোদ্দুর কি ঘুটঘুটে অমাবস্যা, তাঁকে দেখতে উপচে পড়ে ভিড়। সকাল থেকেই মাইক চেঁচাচ্ছিল— দেব আসছেন, দেব আসছেন, দেব... দুপুর ৩টেয়, স্কুলমাঠে। লোকে ধরেই নিয়েছিল, বাঙালির টাইম, চারটের আগে কি হবে? টুকটুক করে স্কুলমাঠে আসছিল গাড়ি, ঠুকঠুক করে লোক। হুশ করে মাজদিয়া কলেজ মাঠে উড়ে এসেছিল কপ্টার। দুপুর সাড়ে তিনটে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৬
Share:

মাজদিয়া স্কুল মাঠে প্রচারে দেব। সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

চড়া রোদ্দুর কি ঘুটঘুটে অমাবস্যা, তাঁকে দেখতে উপচে পড়ে ভিড়।

Advertisement

সকাল থেকেই মাইক চেঁচাচ্ছিল— দেব আসছেন, দেব আসছেন, দেব... দুপুর ৩টেয়, স্কুলমাঠে।

লোকে ধরেই নিয়েছিল, বাঙালির টাইম, চারটের আগে কি হবে? টুকটুক করে স্কুলমাঠে আসছিল গাড়ি, ঠুকঠুক করে লোক।

Advertisement

হুশ করে মাজদিয়া কলেজ মাঠে উড়ে এসেছিল কপ্টার। দুপুর সাড়ে তিনটে। আর্মস্ট্রং যে ভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে নেমেছিলেন, প্রায় তেমন করেই নেমে এলেন নায়ক। আর্মস্ট্রং শুধু হাতটা নাড়েননি, চাঁদে দর্শক ছিল না বলে, ইনি নাড়লেন এই যা!

সেখান থেকে গাড়িতে সোজা স্কুলমাঠ। ওই গাড়িতেই মুকুল রায়। কে কার সঙ্গী, বলা শক্ত। দু’জনেই সত্যজিৎ বিশ্বাসের হয়ে প্রচারে।

স্টেজের সামনে ভিড়ে তখন ঢেউ খেলছে। বেশির ভাগই ছেলেছোকরা। হাতে চাইনিজ মোবাইলে ছবি উঠছে খ্যাচাখ্যাচ। সাঁইসাঁই সিটি আর পাগলু পাগলু... গুরু, একটা লুক দাও!

মাঠের পিছন দিকটা তখনও ফাঁকা ফাঁকা। নায়ক গিয়ে বসলেন মঞ্চের মাঝখান আলো করে। মাইক ধরলেন মুকুল। দিদি থেকে কন্যাশ্রী, নির্বাচন কমিশন থেকে দু’টাকা কিলো চাল, কিচ্ছু বাদ যাচ্ছে না।

কিন্তু পাবলিকের মন নেই। কান সুড়সুড় করছে, চোখ ঘুরঘুর করছে। চোখে আঠা। শুধু দেব, দেব, দেব... দেব বাঁ দিকে তাকালেন, হররা উঠল। দেব ডান দিকে তাকালেন, গগনভেদী ‘পাগলু পাগলু’ চিৎকার। এক জন চা দিয়ে গেল। দেব চা খাচ্ছেন। জনতা চুপ। গুরুর বিষম লেগে না যায়!

গলা-টলা ভিজিয়ে বলার পালা এল। গুরু মাইক ধরলেন। বললেন, ‘‘আপনারা আমার চেয়ে অনেক বেশি রাজনীতি সচেতন। কত উন্নয়ন হয়েছে দেখেছেন তো! দিদিকে ভোট দিন।’’ হাততালি হাততালি— দেখেছো, কী সরল ছেলে, অত্তবড় স্টার, একটুও অহঙ্কার নেই!

ব্যস, মিটিং খতম।

দেব নেমে যাচ্ছেন স্টেজ থেকে। গুরু, একটা সই দিয়ে যাও... প্লি়জ...

দেবের ঠোঁটের কোণে হাসি।

ভিড় কাটিয়ে গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে। তখনও লোক ঢুকছে মাঠে। পাশের আমবাগান ভেঙে দৌড়ে আসছে লোক। রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ভিড়। অনেকেই লেট— এই যা, দেব চলে গেল নাকি! ধুস! পারলে, এখনই যেন অ্যাবাউট টার্ন করেন...।

দেব তো শুধু নয়।

ভোট শিয়রে। ঢ্যাং কুড়কুড় ঢ্যাং কুড়কুড় বাজনা বাজছে। নেতা থেকে অভিনেতা, যাওয়া-আসা ছুটোছুটি সব তারই তালে। ইতিমধ্যে শুভশ্রী, নাগমা, রাজ বব্বর ঘুরে গিয়েছেন। দিদিমণি এসেছেন। আসছেন, নিয়ম করে। এ দিন এসেছেন তাঁর ভাইপো, যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তেহট্টের কিশোরপুর আর চাকদহের শিমুরালিতে।

জোটও বসে নেই। নবদ্বীপে এ দিনই ল্যান্ড করেছেন বিমান বসু। ধুবুলিয়া আর নাকাশিপাড়ায় মহম্মদ সেলিম।, হরিণঘাটায় ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগরে হাঁকডাক করে গিয়েছেন অধীর চৌধুরী।

চলুক! আর তো মোটে আড়াইটে দিন। তার পর প্রচার শেষ।

সিনেমা আর্টিস্ট ছাড়া আর কিসে পাবলিকের ‘অজ্জিনাল’ টান আছে, কে জানে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন