বঙ্গভূমের ভোট রঙ্গমঞ্চে রিগিং, স্লেজিং থেকে থ্রেটনিং কী না হয়। এ সব নিয়ে যুগ যুগ ধরেই এ ওর দিকে, ও এর দিকে আঙুল তুলে চলেছেন আমাদের নেতানেত্রীগণ। অবস্থা চরম পর্যায়ে গেলে গণতন্ত্রের মহোত্সব এই নির্বাচনও কখনও কখনও আতঙ্কের হাওয়া তৈরি করে জনমানসে। এ সব গুরুতর বিষয়। তবে ভোটের মঞ্চে সব কিছুকেই যে সিরিয়াসলি নিতে হবে এমনও তো নয়। যেমন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনেক সময়ই আম ভোটদাতা অর্থাত্ জনসাধারণের ধৈর্যচ্যূতি ঘটানোর বদলে নির্মল আমোদেরও উপকরণ হয়ে ওঠে। কলকাতার লন্ডন হওয়া এমনই একটি উদাহরণ।
সম্প্রতি একদম ভিন্ন মাত্রার দুটি নির্বাচনী আমোদ উপকরণ জোগালেন চলতি ভোটেরই দুই প্রার্থী। একজন ইন্দ্রনীল সেন। অন্যজন চন্দ্রকুমার বসু। প্রথম জন গত লোকসভা ভোটের ঠিক আগে সক্রিয় দলরাজনীতিতে প্রবেশ করেন। দ্বিতীয় জন সবে এসেছেন। দু’জনেই এ বার বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী। দু’জন দু’দলের। কিন্তু বক্তৃতার মঞ্চে মুখ ফসকে নিজেকেই নিজে হারানোর ডাক দিয়ে এক্কেবারে এক ব্র্যাকেটে চলে এসেছেন এই ইন্দ্র-চন্দ্র জুটি।
হুগলির চন্দননগরের তৃণমূল প্রার্থী গায়ক ইন্দ্রনীল সেন। এক কালে সিপিএম এমনকী খোদ বাম মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এ বারের এই তৃণমূল প্রার্থী নির্বাচনী বক্তৃতায় বাংলা থেকে বার করে দিতে বললেন তৃণমূলকেই। ইন্দ্রের ভাষণ, ‘‘...কংগ্রেস বা সিপিএমের কোনও কিছুতে হাত দেবেন না। হাত দিলেই চর্মরোগ হবে। ডেটলফেটল দিয়ে ধুয়ে হাত দিয়ে একদম বাংলার বাইরে করে দিন এই কংগ্রেস বা তৃণমূলকে’’। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন, ‘‘...একদম বাংলার বাইরে করে দিন এই কংগ্রেস বা তৃণমূলকে’’।
ইন্দ্রবাবু যেখানে নিজের দলকে বাংলা ছাড়া করতে বলে ফেলেছেন, চন্দ্রবাবু সেখানে জয়যুক্ত করতে বলে ফেলেছেন বিপক্ষ প্রার্থীদের। ভবানীপুরের তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্র বসু বলেন, ‘‘এই সুযোগ। আপনারা তিরিশে এপ্রিল বামফ্রন্ট প্রার্থীদের জয়যুক্ত করুন। পশ্চিমবাংলাকে রক্ষা করুন’’।
মুখ ফসকে এ হেন ‘কেলেঙ্কারি’র পর দু’জনেই নিশ্চয় আপন আপন জিভ কেটেছেন। কিন্তু নিন্দুকেরা বলছেন, আসলে মনের কোণে লুকিয়ে থাকা পুরনো সুর বেখেয়ালে বেরিয়ে আসেনি তো!