Agnimitra Paul

প্রচার করতে গিয়ে দেখলাম আসানসোল দক্ষিণে উন্নয়ন দূরে থাক, কোনও কাজই হয়নি

আরও অনেক ‘নেই’ রাজ্যের বাসিন্দা প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষজন। তাঁদের সব অভাব দূর করে সুস্থ জীবন দেওয়াই আমার প্রথম কাজ।

Advertisement

অগ্নিমিত্রা পাল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২১ ১৬:৫৩
Share:

অগ্নিমিত্রা পাল

আসানসোল (দক্ষিণ), এই আসনের দিকে বহু পোড় খাওয়া, বাঘা, বাঘা রাজনীতিবিদের নজর ছিল। এই আসনের প্রতি আমারও আলাদা আকর্ষণ ছিল। কারণ, আমি এই এলাকার মেয়ে। তাই নির্বাচনের আগে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, যদি ওই আসনে আমায় প্রার্থী করা হয়। শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও দ্বিধা ছিল। একবার শুনছি, আমি আসানসোল (দক্ষিণ)-এর প্রার্থী। একবার শুনছি, নই। এই টানাপড়েনের মধ্যেও শীর্ষ নেতৃত্বের বিশ্বাস ছিল, জিততে পেরে এলাকার মানুষকে কুর্নিশ, সেই সঙ্গে আমার উপর আস্থা রাখার জন্য দলীয় নেতৃত্বকেও ধন্যবাদ!

Advertisement

তার পর দিল্লি থেকে যখন আমার নাম ঘোষণা হল, ছোট পর্দায় দেখলাম। সেই অনুভূতি, সেই আনন্দ বলে বোঝানো নয়। বিধায়ক হওয়ার ইচ্ছে তো ছিলই। তার থেকেও বড় ইচ্ছে, এলাকার মানুষদের সেবা করা। আমার বাবাও ওখানকার স্বনামধন্য চিকিৎসক। তাঁর দেখা রোগীরা আমার কাকু-জ্যেঠু সমান। সবাইকেই প্রায় কম-বেশি চিনি। এঁদের কোলে-পিঠে চড়েই তো বড় হয়েছি।

অন্য জায়গায় প্রার্থী হলে কি এই অনুভূতি থাকে?

Advertisement

সত্যি বলতে কী, কোনও দায়বদ্ধতাও তৈরি হয় না। তাই রাজনীতিতে ২ বছর যোগদানের পরেই জন্মভূমি থেকে লড়াই করার এই সুযোগ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। আশা, আসানসোল (দক্ষিণ)-এর মানুষও প্রার্থী হিসেবে ঘরের মেয়েকে পেয়ে খুশি।

প্রচার করতে গিয়ে দেখলাম, গত ১০ বছরে উন্নয়ন দূরে থাক কোনও কাজই হয়নি! বিশেষ করে দুঃস্থ মহিলাদের কী দুরবস্থা। নিজে যেহেতু নারী। তাই নারীদের দুর্দশা চট করে বুঝতে পারি। খুব খারাপ লেগেছে দেখে, সারা পাড়ায় মাত্র একটি জলের কল। সেই কলও মাটির ভিতর প্রায় ঢুকে গিয়েছে। সারা দিনে ১ বার জল আসে। পানীয় জল নিয়ে বাসিন্দারা গভীর সংকটে ভুগছেন। একটি কলের সামনে হাঁড়ি, কলসি, বালতি, বোতল নিয়ে ৪০ জন মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষা। কখন জল আসবে?

একই দুরবস্থা নিকাশি ব্যবস্থারও। অর্ধেক গ্রামে নিকাশি ব্যবস্থাই নেই। যে কয়েক জায়গায় আছে সেখানে বহু যুগ নালা-নর্দমা পরিষ্কার হয় না। সেখানে দূষিত নোংরা জল। তার পাশেই শিশুরা খেলাধুলো করছে।

তৃতীয় সমস্যা দূষণ। গ্রামে টিমটিম করে কয়েকটি কারখানা। তার থেকেই প্রচণ্ড দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের অঞ্চলে। কারখানার ধোঁয়ায় বাড়িগুলোর কী করুণ অবস্থা! সব কালো হয়ে গিয়েছে। এমনকি গাছগুলোও তার সজীবতা, সবুজ রং হারিয়েছে। বল্লভপুরের কথাই ধরুন। আমার ছোট বেলায় কী ছিল আর এখন কী হয়েছে! এগুলোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের যোজনার অন্তর্ভুক্ত বাড়ি, শৌচালয়, গ্যাস, কিছুই পায়নি গ্রামবাসী। মানুষ ভাঙা, মাটির বাড়িতে থাকেন। বিদ্যুৎ নেই অর্ধেক জায়গায়। নামোজামডোবা গ্রামে স্বাধীনতার পরেও বিদ্যুৎ আসেনি। কী কষ্ট করে থাকেন সেখানকার মানুষ। গ্রামের ছেলেমেয়েরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো রাস্তার আলোয় পড়াশোনা করে এখনও। ঋতুযোগ্যারা মাসের বিশেষ দিনগুলোতেও মাঠে গিয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেন! শুধু কানে শুনে বিশ্বাস করা সত্যিই খুব কঠিন।

এই রকম আরও অনেক ‘নেই’ রাজ্যের বাসিন্দা প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষজন। তাঁদের সব অভাব দূর করে সুস্থ জীবন দেওয়াই আমার প্রথম কাজ। এমন ব্যবস্থা করা যাতে সবাই পানীয় জল পান। প্রত্যেক বাড়িতেই তো কল থাকা উচিত। যার থেকে ২৪ ঘণ্টা পানীয় জল পাবেন সবাই। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি, শৌচালয় পকলের পাওয়া উচিত। উজ্জ্বলা প্রকল্পের থেকেও গ্যাস পাওয়া উচিত। প্রতি পরিবারে মাথাপিছু অন্তত ১ জনের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। দূষণ কমাতে হবে। রাস্তাঘাট সারাতে হবে। আলো নেই রাস্তায়। ঘুটঘুটে অন্ধকার। এমন রাস্তায় ধর্ষণ হবে না তো কী হবে! সবার আগে সেই সব ঠিক করতে হবে। গ্রামে ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরি করতে দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীর ‘ওয়ান স্টপ সেন্টার’-এর সুবিধে থেকেও বঞ্চিত রেখেছেন গ্রামের মহিলাদের। মহিলা থানা কয়েকটা। মানুষ তার প্রাপ্যের অর্ধেকও পায়নি। এই প্রচার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন