Hoogly

Bengal Polls: গলায় চেন, হাতে আংটি নেই, বলছেন প্রার্থী

পুরশুড়া, আরামবাগ, গোঘাট, হরিপাল, খানাকুল, ধনেখালি, জাঙ্গিপাড়া—এলাকাগুলি আলুতে যতটা সমৃদ্ধ, ততটাই আলোচিত এখানকার রাজনীতি।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

মাঠ বনাম ময়দান!

Advertisement

‘খেলা হবে’ স্লোগানে তপ্ত ভোট-ময়দান। কিন্তু যাঁদের নিয়ে ‘খেলতে’ নেমেছেন ভোট-প্রার্থীরা, সেই আমজনতার নজর আপাতত আলুর মাঠে।

পুরশুড়া, আরামবাগ, গোঘাট, হরিপাল, খানাকুল, ধনেখালি, জাঙ্গিপাড়া—এলাকাগুলি আলুতে যতটা সমৃদ্ধ, ততটাই আলোচিত এখানকার রাজনীতি। কালো পিচ-রাস্তার দু’ধারে একরের পর একর জমিতে আলু তোলার কাজ প্রায় শেষ। সেই আলু এখন হিমঘরে পৌঁছনোর কাজ চলছে। রাজ্যের আলুচাষের এই ভরকেন্দ্রে দাঁড়ালে রোদের আঁচ যতটা গায়ে লাগে, ভোটের গরম ততটা মালুম হয় না। দেওয়াল লিখন না দেখলে বোঝার উপায় নেই ‘খেলা’ শুরু হয়ে গিয়েছে। সাইকেলে আলুর বস্তা চাপিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এক কৃষকের মন্তব্য, ‘‘গায়ে-গতরে খাটার পরে অত ভাবার সময় কোথায়?’’

Advertisement

একটা দীর্ঘ সময় ধরে এলাকাগুলি সিপিএমের দুর্গ বলেই পরিচিত ছিল। ক্ষমতা বদলের সঙ্গে এখানে তৃণমূলের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সেই আধিপত্যে এখন ভাগ বসিয়েছে বিজেপি। তাই সম্ভবত ভোটের আগে মানুষের নীরবতায় বাড়তি সতর্ক হতে হচ্ছে নেতা-নেত্রীদের। জেলা রাজনৈতিক মহলের মূল্যায়ন, ‘কাজ-অকাজ’-এর দাঁড়িপাল্লায় কার পাল্লা ভারী, তার উপরেই প্রধানত নির্ভর করবে এই এলাকার ভোটের ফল।

পুরশুড়ার একটি গ্রামের মন্দির লাগোয়া ছোট মাঠে পংক্তিভোজের আসরে পরিবেশন থেকে তদারকি—সবই করলেন হুগলি জেলা তৃণমূলের সভাপতি ও পুরশুড়া বিধানসভার প্রার্থী দিলীপ যাদব। বাড়ি-রাস্তা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ শুনতেও হল গ্রামবাসীদের থেকে। প্রত্যেককে আশ্বস্ত করার চেষ্টায় দিলীপবাবুর প্রতিশ্রুতি, ‘‘আগের অকাজের পুনরাবৃত্তি আর হবে না। জিতে এলে গত ১০ বছর এবং আগামী পাঁচ বছর মিলিয়ে মোট ১৫ বছরের কাজ করে দেখাব। আমার গলায় চেন, হাতে আংটি নেই। মুখ্যমন্ত্রী অনেক কাজ করেছেন, আগামী দিনে আরও করবেন, ভরসা রাখুন।’’

এই সাতটি কেন্দ্রে ভোটের ফল নিয়ে কেউই নিশ্চিত নন। তবে বাস্তব বলছে, গত ১০ বছরে কাজ হয়েছে প্রচুর, সমান্তরাল ভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্থানীয় নেতাদের উপর ক্ষোভ তৈরি হয়েছে একইসঙ্গে, গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই শক্তি বাড়িয়েছে বিজেপি। গত ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে আরামবাগে মাত্র ১১৩৪টি ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূলের অপরূপা পোদ্দার। কারণ হিসেবে সাংসদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দলেরই একাংশ। তাঁদের ব্যাখ্যা, গত ১০ বছরে ছোট-বড় অনেক নেতাই মানুষের কাছে ক্রমশ অপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তার প্রতিফলন রয়েছে লোকসভা ভোটের ফলে। ঘটনাচক্রে, এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই রয়েছে পুরশুড়া, আরামবাগ, গোঘাট, হরিপাল, খানাকুল বিধানসভা কেন্দ্রগুলি। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে পুরশুড়ায় ২৯ হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূল জিতলেও, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রায় ২৬ হাজার ভোটে এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। তৃণমূলের অন্দরে বিশ্লেষণ, এই ‘কঠিন’ কেন্দ্রে দলের জেলা সভাপতি পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে পারলে তার প্রভাব পড়তে পারে আশপাশের কেন্দ্রের উপর। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘পিছিয়ে আছি, কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ অনুকূলে আনার চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

ভোটারদের অনেকেই জানাচ্ছেন, গত ১০ বছরে রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে প্রায় সব মানুষই খাদ্যসাথী-স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড এবং জাতি শংসাপত্র পেয়েছেন। শাসক দলের সুবিধা হবে না? এক প্রবীণের জবাব, ‘‘সরকারের থেকে উপকার পাওয়া যায়নি কেউ বলতে পারবে না। তবে এখনও কিছু এলাকায় জল এবং পাকা বাড়ির সমস্যা রয়ে গিয়েছে।’’ আর এক জন বলেন, ‘‘চাকরি করে দেওয়ার কথা বলে অনেকের থেকে অনেক টাকা নিয়েছেন নেতারা। তবু চাকরি হয়নি। আলুর ব্যাপক ফলন হলেও দাম পাওয়া যায়নি। মজুরির টাকা তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।’’ জেলায় বিজেপি’র সাংগঠনিক সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “যত সুবিধা কেন্দ্র দিতে চাইছে, রাজ্য তাতে বাধা দিচ্ছে। ফলে ডাবল-ইঞ্জিন সরকার চাইছে মানুষ। জোটকেও প্রত্যাখ্যান করছেন ভোটাররা। মানুষ বোঝেন, তেল-গ্যাসের দাম এখন কিছুটা বেশি থাকলেও তা কমে যাবে। আমাদের লক্ষ্য মানুষকে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন উপহার দেওয়া।”

লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে পুরশুড়ার পাশাপাশি তৃণমূল পিছিয়ে আছে গোঘাট বিধানসভাতেও। আরামবাগে ব্যবধান অনেক কমিয়েছে বিজেপি। খানাকুল এবং হরিপালে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও বিজেপির ভোট বেড়েছে। হুগলি লোকসভার মধ্যে ধনেখালি এবং শ্রীরামপুরের মধ্যে জাঙ্গিপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রটিতেও এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। তবে এই কেন্দ্রগুলিতে সংখ্যালঘু এবং তফসিলি জাতি-জনজাতি অংশের মানুষের ভোট গুরুত্বপূর্ণ। এই জেলাতেই রয়েছেন ফুরফুরা শরিফ, রয়েছেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) নেতা আব্বাস সিদ্দিকী। কংগ্রেস-বাম জোটের নেতা আব্দুল মান্নানের জেলাও এই হুগলি। তাই কংগ্রেস এবং বামেদের সঙ্গে আইএসএফের জোট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, “আইএসএফ-এর সঙ্গে বোঝাপড়া বড় টার্নিং পয়েন্ট। সংখ্যালঘু, আদিবাসী এবং তফসিলি জাতি-জনজাতি মানুষের মধ্যে বামেদের যে ভোটব্যাঙ্ক ভেঙে গিয়েছিল, এই জোটের কারণে তা ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। লোকসভায় বিজেপি’র দিকে যাওয়া ভোটও ফিরবে।”

বরাবরই বহুজাতিক সংস্থাগুলির নজরে থেকেছে এই সব এলাকা। একটি বহুজাতিক সংস্থা চুক্তিচাষ শুরুও করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি। এখন কেন্দ্রের নতুন কৃষি আইন নিয়ে কৃষক-আন্দোলন চলছে। কিন্তু তার কতটা আঁচ এই সব এলাকা পড়বে, তা নিয়ে নিশ্চিত নন নেতাদের অনেকেই। সব মিলিয়ে, মানুষের মন বুঝতে কোন দল কতটা এগিয়ে, তা-ই হয়তো এ বারের ভোট প্রমাণ করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন