election campaign

Bengal Polls: বঙ্গ রাজনীতিতে কোভিড-বিধি পালন আষা‌ঢ়ে গল্প মাত্র!

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, করোনা-পর্বের শুরু থেকেই এই সংক্রমণ ছড়ানোর পদ্ধতি আপাত ভাবে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪৮
Share:

অনিয়ম: অধিকাংশ লোকেরই মাস্ক নেই। মাইক্রোফোনও হাতবদল হয় জীবাণুমুক্ত না করে। ফাইল চিত্র

এক জন বক্তার কথা শেষের পরে অন্য জনের হাতে যখন মাইক্রোফোন যাবে, তখন তা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে জনতা তো বটেই, এমনকি, মঞ্চে আসীন সবার সঙ্গেই পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। করোনা সংক্রমণ ফের যাতে বিপজ্জনক জায়গায় না পৌঁছয়, তার জন্য এ সব করতেই হবে। যদিও বঙ্গ রাজনীতির আঙ্গিকে এগুলো এখনও আষাঢ়ে গল্প মাত্র!

Advertisement

এখানে একমাত্র ধ্রুব সত্যি হল, কোন দল নিজেদের সমাবেশে কত লোক-জমায়েত করতে পারবে। যার সামনে বিশ্বব্যাপী অতিমারি, জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার বিষয়টিও ফিকে হয়ে যায় বলে মনে করছেন অনেকেই।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, করোনা-পর্বের শুরু থেকেই এই সংক্রমণ ছড়ানোর পদ্ধতি আপাত ভাবে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। প্রথমত, সংক্রমিত ব্যক্তির কথা বলার সময়ে মুখ থেকে নিঃসৃত কণা বা ড্রপলেটের মাধ্যমে এই সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তেমন ভাবেই শারীরিক স্পর্শের মাধ্যমেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। যা এত দিনে বহুল চর্চিত এবং আলোচিত।

Advertisement

কিন্তু তার পরেও দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে যা কিছু ‘না’ রয়েছে, নির্বাচনী প্রচারের সময়ে রাজনৈতিক দলগুলি ‘সগর্বে’ সেই সবগুলিই ক্রমাগত করে চলেছে। যেখানে এক বক্তার থেকে অন্য বক্তার হাতে মাইক্রোফোন যাওয়ার সময়ে তা জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে না। তেমনই মাস্ক ছাড়া যেন বক্তৃতা-প্রতিযোগিতা চলছে দলগুলির মধ্যে।

অনিয়ম: দূরত্ব-বিধিও মানা হচ্ছে না ভোটের প্রচারে। ফাইল চিত্র

এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, ধরা যাক, কোনও বক্তা সংক্রমিত, কিন্তু তিনি উপসর্গহীন। জনসভায় তিনি যে মাইক্রোফোন ব্যবহার করলেন, তা জীবাণুমুক্ত না করেই অন্য সুস্থ বক্তার হাতে গেলে সংক্রমণের আশঙ্কা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘কারণ, ড্রপলেটের মাধ্যমে নানা হাত ঘোরা এই মাইক্রোফোন তখন সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ফলে অন্য সমস্ত জিনিস যেমন স্যানিটাইজ় করা প্রয়োজন, এটাও সে ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে স্যানিটাইজ় করতে হবে।’’
কিন্তু মাস্ক পরার মতো সহজ নিয়মই যেখানে পালন করা হয় না, সেখানে মাইক্রোফোন কতটা জীবাণুমুক্ত করা হয়, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। এক ভাইরোলজিস্টের কথায়, ‘‘টেলিভিশনের পর্দায় যে এত সভা-সমাবেশ দেখা যায়, এক বারও তো এমন দৃশ্য চোখে পড়েনি যে হাত বদলের আগে মাইক্রোফোন স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। বরং এ দৃশ্য চোখে পড়েছে যে, রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মাস্ক মুখের নীচে নামিয়েই হাঁচছেন বা কাশছেন।’’ ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর নির্মল গঙ্গোপাধ্যায়ের এ বিষয়ে বক্তব্য, ‘‘একাধিক বক্তা থাকলে মাইক্রোফোন স্যানিটাইজ় করাটা বাধ্যতামূলক। না হলে মাইক্রোফোনই সংক্রমণ ছড়ানোর মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।’’

আরও একটি বিষয়ের উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তা হল, কোভিড-বিধি মেনে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য যে নির্দেশ, তাকে বিন্দুমাত্র আমল দিতে নারাজ রাজনৈতিক দলগুলি। এক মাইক্রোবায়োলজিস্টের কথায়, ‘‘ভিড় টানাই যেখানে শেষ কথা, সেখানে কে আর এ সব নিয়ম মানবে। সব থেকে আশ্চর্যের লাগে যখন সব রাজনৈতিক দলই বলে মানুষের জন্য কাজ করবে। অথচ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য-সুরক্ষা নিয়ে যেখানে ছেলেখেলা করা হয়, সেখানে মানুষের জন্য কোন কাজ করার দাবি এরা করে, সেটাই ঠিক বোঝা যায় না!’’ ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা অরুণাভ মজুমদারের কথায়, ‘‘মাস্ক পরে থাকলে তবু নিজেকে এবং অন্যকে অনেকটা সুরক্ষিত রাখা যায়। কিন্তু সেটাও তো প্রায় কেউ পরছেন না। পরলেও তা চিবুকে ঝুলছে। যা আদতে না পরারই মতো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন