West Bengal Assembly Election 2021

রাজনীতির পিচে ‘না’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের, সিদ্ধান্ত জানানো হল বিজেপি নেতৃত্বকে

ভারতের সর্বকালের অন্যতম সফল অধিনায়ক এবং বাংলার ‘দাদা’-র রাজনৈতিক ইনিংস নিয়ে গত ক’মাসে জল্পনা কম হয়নি।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২১ ০৫:৩২
Share:

আপাতত ক্রিকেট প্রশাসনেই স্বচ্ছন্দ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

রাতারাতি কোনও নাটকীয় পরিবর্তন না-হলে অথবা হঠাৎ করে তিনি ফের মত পরিবর্তন না-করলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এখনই রাজনীতিতে আসছেন না। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বঙ্গে বিজেপি-র মুখ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও কার্যত মিলিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

আগামী ৭ মার্চ ব্রিগেডে নরেন্দ্র মোদীর জনসভা রয়েছে। সেখানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় হাজির থাকতে পারেন এবং সে দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বিজেপিতে যোগদান সম্পন্ন হতে পারে বলে জোর জল্পনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু বুধবার বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, জল্পনা আপাতত জল্পনাই থেকে যাচ্ছে। এখনই বাস্তব রূপ নিচ্ছে না। সৌরভ এখনই রাজনীতির ময়দানে ব্যাট করতে আগ্রহী নন। সূত্রের খবর, সৌরভ তাঁর এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা বিজেপি হাইকম্যান্ডকে জানিয়েও দিয়েছেন।

রাজনৈতিক ইনিংস শুরু নিয়ে জল্পনায় ইতি টানার ব্যাপারে সৌরভ নিজে অবশ্য কোনও মন্তব্যই করেননি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও কোনও সাড়া দেননি। এ দিন সন্ধ্যা থেকে আবার নতুন জল্পনা শুরু হয়, সৌরভ এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে। চাউর হয়ে যায়, সৌরভ রাজভবনে যাচ্ছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি রাজভবনে যাননি।

Advertisement

ভারতের সর্বকালের অন্যতম সফল অধিনায়ক এবং বাংলার ‘দাদা’-র রাজনৈতিক ইনিংস নিয়ে গত ক’মাসে জল্পনা কম হয়নি। তাতে মশলা যোগ হয়, সৌরভ বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব অমিত শাহ-পুত্র জয়। সৌরভ প্রেসিডেন্ট। তাঁর সঙ্গে শাহ পরিবারের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে চর্চা শুরু হয় দেশের ক্রিকেট ও রাজনৈতিক মহলে। বলাবলি হতে থাকে, বাংলায় নেতৃত্বের মুখ খুঁজছে বিজেপি, তাই সৌরভ হতে পারেন তাদের সেরা পছন্দ।

অন্য দিকে, অমিত-পুত্র জয় যে-হেতু বোর্ড প্রশাসনে সৌরভের সতীর্থ, তাই ক্রিকেট মাঠের বৃত্ত ছাড়িয়ে পিতা-পুত্রের মাধ্যমে রাজনৈতিক সেতুবন্ধনের সম্ভাবনা জোরালো হতে থাকে। এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই যে বিজেপি হাইকম্যান্ড সৌরভকে বঙ্গে তাঁদের পার্টির মুখ করার জন্য খুবই আগ্রহী ছিলেন। বিজেপি-র উচ্চ নেতৃত্ব এ নিয়ে বেশ কয়েক বার সৌরভের সঙ্গে কথাও বলেছেন বলে শোনা যায়। এক সময় জল্পনা খুবই জোরালো হয়ে উঠেছিল যে, সৌরভ বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। বঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে দাদা বনাম দিদি—এই ধুন্ধুমার দ্বৈরথের চিত্রনাট্যও কেউ কেউ লিখে ফেলেছিলেন। সৌরভ নিজেও কি একেবারে আগ্রহ প্রকাশ করেননি? রাজনৈতিক মহলের খবর, একটা সময় তিনি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছিলেন, দেশের হয়ে ব্যাটিং করেছি। অধিনায়কত্ব হয়েছে। কমেন্ট্রি করেছি। ক্রিকেট প্রশাসনে এলাম। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েছি। এর পরে কী? রাজনীতির ময়দানে নামলে তো নামা যেতেই পারে। কেউ কেউ বলেছিলেন, ক্রিকেটের ময়দান আর রাজনীতির খেলা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। একটাতে সফল হয়েছি মানেই অন্যটায় হব, এ রকম নিশ্চয়তা নেই। আবার কারও কারও মত ছিল, সৌরভ যে-হেতু তাঁর ক্রিকেট মস্তিষ্ক এবং দল পরিচালনায় মুন্সিয়ানার জন্য বিখ্যাত, তাঁর মধ্যে এক জন ভাল জননেতার গুণও তো থাকতে পারে। তাই রাজনীতির ময়দানে এলেও তিনি খুব একটা খারাপ করবেন না।

কিন্তু দ্রুত পট পরিবর্তন হতে শুরু করে সৌরভের শারীরিক অবস্থার আচমকা অবনতি ঘটায়। মৃদু হৃদ‌্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। দেখা যায়, সৌরভের তিনটি করোনারি আর্টারিতে ব্লকেজ় রয়েছে। প্রথমে একটি স্টেন্ট বসে। তার পরে বাড়ি চলে গেলেও কয়েক দিনের মধ্যে আবার অন্য একটি হাসপাতালে গিয়ে বসাতে হয় আরও দু’টি স্টেন্ট। এর পরেই প্রশ্ন ওঠে, এই শারীরিক অবস্থা নিয়ে তিনি রাজনীতিতে যোগদানের ধকল কতটা নিতে পারবেন? বিধানসভা নির্বাচনের আর বেশি দিন বাকি নেই। শোনা যাচ্ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে সৌরভকে তুলে ধরতে চাইছিল বিজেপি। ‘হ্যাঁ’ বললে সৌরভকে প্রচারে বেরোতে হবে। জনসভা করতে হবে। পার্টির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে ডুবে থাকতে হবে। হৃদ্রোগের সমস্যা দেখা দেওয়ার পরে তাঁর যা রুটিন চলছে, সে ক্ষেত্রে তা ব্যাহত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। তাই এমন হতেই পারে যে, শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে আপাতত রাজনৈতিক ময়দানে অবতীর্ণ হওয়া থেকে পিছিয়ে এলেন সৌরভ। যদিও হাসপাতাল থেকে প্রথম দফায় বাড়ি ফেরার পর, এ যাবৎ তিন বার তাঁর কাছে বিশেষ কারও মাধ্যমে বিজেপির তরফে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয় বলে সূত্রের খবর।

গত কয়েক দিন ধরে জোর জল্পনা চলছিল, সৌরভ ৭ মার্চ-ই প্রধানমন্ত্রীর ব্রিগেড জনসভায় হাজির হচ্ছেন। এমনও বলাবলি হচ্ছিল যে, রাজনীতির ময়দানে প্রবেশ না করলেও বাংলার মহাতারকা মুখ হিসেবে তিনি মোদী, অমিত শাহের পাশে থাকতে পারেন কি না? ঘটনা হচ্ছে, সৌরভ মহাতারকা মুখ হয়ে জনসভায় হাজির থাকার ব্যাপারে আর খুব একটা আগ্রহী নন। বিষয়টাই ছিল, হয় তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে আসবেন, না হয় আসবেন না। বুধবারের পরে যা দাঁড়িয়েছে, তাঁর সিদ্ধান্ত এখনকার মতো ‘না’। অন্তত আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর বিজেপি-তে যোগদানের সম্ভাবনা কার্যত নেই। এবং বিশ্বস্ত সূত্রের খবর হচ্ছে, সৌরভ তাঁর মনের কথা জানিয়েও দিয়েছেন।

ক্রিকেট জীবনে সব সময় সৌরভের সঙ্গী হয়েছে নাটকীয় সব পটপরিবর্তন। অভাবনীয় সব প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন তিনি। তা সে বিরানব্বইয়ের ওয়ান ডে অভিষেকের পরে দীর্ঘ চার বছরের জন্য বাতিল হয়ে গিয়েও ছিয়ান্নবইয়ের লর্ডসে দুর্দান্ত টেস্ট অভিষেক ঘটিয়ে প্রত্যাবর্তন হোক। অথবা গ্রেগ চ্যাপেলের দলে ব্রাত্য হয়ে গিয়েও অবিশ্বাস্য ভাবে ফিরে আসা। এখানেও কি সে রকম অভাবনীয় কোনও পটপরিবর্তন ঘটতে পারে? সৌরভ যে বিজেপি হাইকম্যান্ডকে ‘না’ বলেছেন, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেটাই কি ঘুরে গিয়ে ‘হ্যাঁ’ হয়ে যেতে পারে? বুধবার রাতে দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নের উত্তর—‘না’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন