West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: ‘ভয়ঙ্কর খেলা’ না ‘খেলা শেষে’র অঙ্ক

তৃণমূল ও বিজেপি উভয়পক্ষই চারটি আসনে জেতার দাবি করলেও দুই দলের পোড় খাওয়া নেতারা আড়ালে মানছেন লড়াইটা এ বার হাড্ডাহাড্ডিই।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২১ ০৯:০৯
Share:

প্রত্যয়ী বিরবাহা (বাঁ দিকে)। হালকা মেজাজে সুখময়।

বুথফেরত সমীক্ষায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত রয়েছে। তবে গণনার ৪৮ ঘন্টা আগেই ঝাড়গ্রামের তৃণমূল কর্মীরা বলতে শুরু করেছেন, ‘‘ভয়ঙ্কর খেলা হবে।’’ বিজেপির জেলা স্তরের নেতা ও প্রার্থীরা মুচকি হেসে জানাচ্ছেন, এ বার তৃণমূলের খেলা শেষের পালা। জয়ের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে গেরুয়া আবিরও মজুত করে ফেলেছেন বিজেপি কর্মীরা। তৃণমূলের জেলা নেতারাও লছেন, সবুজ আবিরে অকাল দোল শুধু সময়ের অপেক্ষা।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম জেলায় চারটি বিধানসভা আসন। তৃণমূল ও বিজেপি উভয়পক্ষই চারটি আসনে জেতার দাবি করলেও দুই দলের পোড় খাওয়া নেতারা আড়ালে মানছেন লড়াইটা এ বার হাড্ডাহাড্ডিই। জেলা তৃণমূলের এক সহ-সভাপতি বলছেন, ‘‘বিনপুর আসনে আমাদের সহজ জয় হবে। তবে বাকি তিনটি আসনে লড়াইটা সমানে-সমানে রয়েছে।’’ কারণ ব্যাখ্যা করে ওই নেতা জানাচ্ছেন, লোকসভা ভোটের ফলে একমাত্র বিনপুর বিধানসভায় এগিয়েছিল তৃণমূল। বিনপুরের বিজেপি প্রার্থী তেমন জবরদস্ত নন। রয়েছেন সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক দিবাকর হাঁসদাও। তাই ভোট কাটাকুটির অঙ্কে তৃণমূলের প্রার্থী দেবনাথ হাঁসদা শেষ হাসিটা হাসবেন বলে নিশ্চিত ওই নেতা। তবে ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রাম আসনে লড়াইটা সমানে সমানে হবে বলেই মনে করছেন ওই প্রবীণ তৃণমূল নেতা।

এ দিন সকালে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা হাঁসদা একটি স্কুল চত্বরের বিশেষ শিবিরে করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলেন। দলের কাউন্টিং এজেন্টরাও করোনা পরীক্ষা করান সেখানে। সবার রিপোর্ট নেগেটিভ হয়। ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী সুখময় শতপথী বৃহস্পতিবারই করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন। এ দিন দিনভর সুখময় কাউন্টিং এজেন্টদের করোনা পরীক্ষার তদারকি ও কাউন্টিং এজেন্টদের নিয়ে বৈঠক করেন। তবে ঝাড়গ্রামের সিপিএম প্রার্থী মধুজা সেনরায় দলের কাজে রয়েছেন কলকাতায়। আজ, শনিবার তিনি ঝাড়গ্রামে ফিরবেন। অন্যান্য প্রার্থীরাও কেউ কিছুক্ষণ বাড়িতে সময় কাটিয়েছেন। কেউ দলের কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এদিন তৃণমূল নেত্রী মমতো বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভিডিয়ো বৈঠকে ছিলেন চার তৃণমূল প্রার্থী ও জেলা সভাপতি। ছিলেন গণনার এজেন্টরাও।

Advertisement

বিরবাহা প্রত্যয়ী। বলছেন, ‘‘এ বার যেভাবে নিচুতলা পর্যন্ত মানুষের কাছে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কথা বলেছি, তাতে আমি ১৫ হাজার ভোটে জিতব।’’ ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী তথা প্রাক্তন জেলা বিজেপির সভাপতি সুখময় শতপথী হেসে উড়িয়ে দিচ্ছেন সেই দাবি। সুখময় বলছেন, ‘‘আমি তো জিতবই সেই সঙ্গে জেলার বাকি তিনটি কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীরাও জিতবেন।’’ কী করে এতটা আত্মবিশ্বাসী? সুখময় বলছেন, ‘‘ভোটের আগে পর্যন্ত জেলা সভাপতি ছিলাম। সংগঠনটা নিজের হাতে গড়েছি। ভোট আবেগে হয় না। ভোট হয় একনিষ্ঠ কর্মীদের দ্বারা সংগঠনের মাধ্যমে, যেটা এ বার তৃণমূলের হয়নি।’’ অন্য দিকে সংযুক্ত মোর্চার চার সিপিএম প্রার্থীর দাবি, এ বার বামেদের ভোট বাড়বে।

গেরুয়া শিবিরের এক সূত্রের খবর, ভোটের দিনে সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যরা মাঠে নেমে ভোট পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তাই সবদিক খতিয়ে দেখেই তাঁরা জেতার দাবি করছেন। তবে বিজেপির জেলা কমিটির এক প্রবীণ সদস্য বলছেন, ‘‘বিনপুর নিয়ে আমরা কিছুটা চিন্তায় আছি। কারণ, ওখানে আদিবাসী সমাজ ও ভূমিজ সমাজের নির্দল প্রার্থীরা কিছু ভোট কাটবেন। ভোটের পরে শক্তিকেন্দ্র ও মণ্ডলের রিপোর্ট অনুযায়ী বাকি তিনটি কেন্দ্রে আমাদেরই জেতার প্রবল সম্ভাবনা। বিনপুরে আদিবাসী ভোট যদি আমাদের অনুকুলে পড়ে, তাহলে আমরা ওই কেন্দ্রটিও জিতব।’’ তবে বিনপুরের বিজেপি প্রার্থী পালহান সরেনের দাবি, ‘‘আমি জিতছিই।’’ সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত বিভিন্ন একজিট পোলে কোথাও বলা হচ্ছে গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রাম আসন দু’টি বিজেপি পেতে পারে। ঝাড়গ্রাম ও বিনপুর আসনে তৃণমূলের জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা। আবার একটি একজিট পোলে বলা হয়েছে, গোপীবল্লভপুর আসনটি বাদে বাকি তিনটি আসন তৃণমূল পাবে। তবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের গোপন রিপোর্ট বলছে, গোপীবল্লভপুর ও ঝাড়গ্রাম বিধানসভায় বিজেপির জেতার সম্ভাবনা। নয়াগ্রাম ও বিনপুর নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা নয়াগ্রামের প্রার্থী দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘চারটে আসনেই আমরা জিতব। সবুজ ঝড় উঠবে ঝাড়গ্রামে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি তুফান মাহাতোরও দাবি, ‘‘আমাদের সাংগঠনিক সমীক্ষা অনুযায়ী চারটি আসনেই জিতছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন