West Bengal Assembly Election 2021

না মিলল বাসস্ট্যান্ড, না বহুমুখী হিমঘর

কিন্তু এলাকায় কান পাতলেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে ভোটারদের পাওয়ার তালিকা মিলছে না। সুর চড়াচ্ছেন বিরোধীরা।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 

হরিপাল শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২১ ০৬:৫২
Share:

এখনও বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়নি। হরিপাল রেলস্টেশনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে বাস-ট্রেকার। ছবি: দীপঙ্কর দে

দু’বছর আগের লোকসভা ভোটের হিসেব ধরলে এ বার হরিপালে তৃণমূলের ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইটা সহজ নয়। পরিস্থিতি কঠিন হয়েছে আরও কিছু দিক থেকে। শাসক দল সব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। রয়েছে দলবদলের ‘কাঁটা’ এবং বিজেপির বাড়বাড়ন্ত। সব মিলিয়ে বিধানসভা ভোটের দোরগোড়ায় প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী তথা দু’বারের বিধায়ক বেচারাম মান্না একেবারেই স্বস্তিতে নেই। এ কথা বলছে বিধায়কের ঘনিষ্ঠ মহলের একাংশই।

Advertisement

হরিপাল বিধানসভার ১৫টি পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের আসন— সবই তৃণমূলের দখলে। কিন্তু এলাকায় কান পাতলেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে ভোটারদের পাওয়ার তালিকা মিলছে না। সুর চড়াচ্ছেন বিরোধীরা।

এখনও কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এবং বহুমুখী হিমঘর না-হওয়ায় ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি। এলাকার এক নাট্যকর্মীর কথায়, ‘‘আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা দেখে তাজ্জব বনে যাই। এখানে শুধুমাত্র নাটকের জন্য একটা প্রেক্ষাগৃহ হওয়ায় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তা আর হল কই? বাম আমল থেকে শুনে আসছি, হরিপালে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড হবে। কিন্তু আরও কতদিন অপেক্ষা করব? বাম আমলের ৩৪ বছর আর তৃণমূল জমানার ১০ বছর— অর্থাৎ, প্রায় অর্ধশতাব্দীতেও একটা বাসস্ট্যান্ড হল না।’’ হরিপাল স্টেশন লাগোয়া এক মাছ ব্যবসায়ীর টিপ্পনী, ‘‘মনে হয়, বিধায়ক এ বারও ভোট চাইতে এসে বাসস্ট্যান্ড করার প্রতিশ্রুতি দেবেন।’’ এক বাস-চালক বলেন, ‘‘হরিপাল স্টেশনে হাওড়ার দু’টি রুটের বাস ছাড়াও সব মিলিয়ে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রুটের বাস আসে। কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড থাকাটা খুব জরুরি।’’

Advertisement

কৃষিপ্রধান এই বিধানসভা এলাকায় বহুমুখী হিমঘরের দাবিও দীর্ঘদিনের। এখানকার নালিকুলে আনাজের আড়ত রয়েছে। কিন্তু তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা কই? সে কথাই বলছেন আশুতোষ অঞ্চলের এক সরকারি কর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিশ্রুতির তালিকার চেয়ে কিন্তু না হওয়ার তালিকাই এখানে বেশি দীর্ঘ। আইটিআই কলেজ, দমকল কেন্দ্র কিছুই হয়নি। বহুমুখী হিমঘর নেই। নেই কিসান মান্ডিও। খুবই সমস্যায় চাষিরা।’’

২ লক্ষ ৭৫ হাজারেরও বেশি ভোটারের জন্য তা হলে কি কিছুই হয়নি হরিপালে?

তা নয়। কৌশিকী, ডাকাতিয়া খাল-সহ চারটি নদীতে ছোট সেতু হয়েছে। বন্যাপ্রবণ এলাকাকে রক্ষার জন্য কানা নদীর সংস্কার হয়েছে। বহু গ্রামীণ রাস্তা ঢালাই হয়েছে। মোট ৩৫টি যাত্রী প্রতীক্ষালয় হয়েছে।

কিন্তু এতে যে সব চিঁড়ে ভিজবে না, তা মানছেন শাসক দলের অনেকেই। বিধায়ক বেচারাম মান্নার এক সময়ের ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ সমীরণ মিত্র এখন বিজেপিতে। ফলে, বেচারামের কিছুটা শক্তিক্ষয় হয়েছে, এ কথাও ঠারেঠোরে মানছেন অনেকে। তার উপরে রয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। সেটাও নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে গিয়েছে।

আশুতোষ এলাকার শাসক দলেরই এক পঞ্চায়েত সদস্যের কথায়, ‘‘কয়েক বছর আগে এখানে আইটিআই কলেজ আর দমকল কেন্দ্রের জন্য রাজ্য সরকার জমি চেয়েছিল। যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরাই তো জমি দিতে পারলেন না। হরিপাল হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পড়ে নষ্ট হচ্ছে। বামেরা থাকলে বাসস্ট্যান্ড হয়ে যেত। আমাদের লোকেরাই এখানে ক্ষমতায় এসে সব গুবলেট করল স্ট্যান্ডের।’’

বেচারামের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে, তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, ব্লক তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস পাঠক কোনও বিরুদ্ধ কথা বা অপ্রাপ্তির বিষয়কে পাত্তা দিচ্ছেন না। প্রাপ্তির ফিরিস্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে হরিপালে ঢেলে উন্নতি হয়েছে বিধায়কের উদ্যোগেই। হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার অনুমতি মিলেছে। শীঘ্রই সেই কাজও হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন