Monoranjan Byapari

Bengal Polls 2021: ভোটে প্রার্থী, ব্যাপার কী, নেটমাধ্যমে কৈফিয়ৎ মনোরঞ্জন ব্যাপারীর

আনন্দবাজার ডিজিটালকে ‘ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন’-এর লেখক বললেন, “এক দল যেমন আমাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করছেন, আবার এক দল দু’হাত তুলে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২১ ১৭:৩৯
Share:

মনোরঞ্জন ব্যাপারী। ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর থেকেই হুগলির বলাগড়ে যেন খুশির হাওয়া। তাঁদের কাছের এবং অত্যন্ত প্রিয় মানুষটি এ বার প্রার্থী হয়েছেন এই কেন্দ্র থেকেই। তিনি মনোরঞ্জন ব্যাপারী। শুক্রবার তৃণমূল নেত্রী যখন এক এক করে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছিলেন, তখন বলাগড় কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম বলতে গিয়ে একটু থামেন। এর পরই মনোরঞ্জন ব্যাপারীর নাম উল্লেখ করেন তিনি। সেই সঙ্গে এটাও বলেন, “ইনি হচ্ছেন দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির প্রেসিডন্ট। যিনি জীবনে রিকশা চালিয়েছেন, রান্নার কাজ করেছেন। আমি তাঁকে নিয়ে এসেছি এখানে। অনেক ভাল ভাল বই লিখেছেন। খুব ইমপরট্যান্ট এক জন মানুষ।”

Advertisement

মনোরঞ্জন প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই পেয়েছেন বহু মানুষের শুভেচ্ছা। আবার কিছু অংশ তাঁর এই প্রার্থী হওয়াটা মোটেও মেনে নিতে পারেননি বলেই দাবি ব্যাপারীর। আনন্দবাজার ডিজিটালকে ‘ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন’-এর লেখক বললেন, “এক দল যেমন আমাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করছেন, আবার এক দল দু’হাত তুলে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।” একেবারে প্রার্থী হিসেবে সটান রাজনীতির আঙিনায় ঢুকে পড়ায় অনেকেই বিষয়টিকে বাঁকা চোখে দেখা শুরু করেছেন। মনোরঞ্জনের জবাব, ‘‘আসলে একেবারে ছোটলোক প্রার্থী হয়েছে তো। তাই কিছু বড়লোকের সমস্যা হচ্ছে।’’ সই সব সামলোচকদের নেটমাধ্যমেও পাল্টা জবাব দিয়েছেন ব্যাপারী।

নিজেকে লেখক এবং দলিত শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে এক যোদ্ধা বলেই তুলে ধরেছেন ব্যাপারী। তাঁর কথায়, “এত দিন আমি সেই সব দলিত শ্রমজীবী মানুষের হয়ে গলা ফাটিয়েছি। দিস্তার পর দিস্তা ঘাড় গুঁজে লিখে গিয়েছি। কিন্তু এ সব করে জীবনে কোনও দিন পরিবর্তন আনতে পারিনি।” তবে শুধু এঁদের দুঃখ, বেদনা এবং বঞ্চনার কথা কাগজে-কলমে লিখে যে বিশেষ কাজ হবে না, সে কথা বুঝেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এক মাত্র রাজক্ষমতার অংশ নিতে পারলে এবং বিধানসভার অন্দরে গিয়ে সেই সব মানুষদের জন্য গর্জন তুলে কিছু আদায় করতে পারলে, তবেই কাজ হবে। এর আগে বিধানসভায়, লোকসভায় দলিত সমাজের অনেকে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কেউ শ্রমিক, কৃষক দরিদ্র সমাজের সন্তান ছিলেন না। তাই বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের কথা কেউ মনে রাখেননি।”

Advertisement

তাঁকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তৃণমূল নেত্রী মমতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মনোরঞ্জন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে দলিত সমাজের হয়ে আওয়াজ তোলার জন্য যুব সমাজের মধ্যে থেকে নেতা তৈরির কাজও করতে চান তিনি। বলছেন, “বিধানসভার বাইরে এবং ভিতরে সেই সব বঞ্চিত শ্রেণির জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। কোনও আপস করব না।”

প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই চার দিকে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। চার দিকে জোর চর্চা চলছে তাঁকে নিয়ে। মনোরঞ্জন বলেন, ‘‘চারদিকে যে তুমুল আলোড়ন চলছে টের পাচ্ছি। দলমত নির্বিশেষে মানুষ আমাকে সমর্থন করছেন। পুঁজিবাদী, মনুবাদী পুরুষতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাস্ত করে বিপুল ভোটে জিতব। বাংলার মেহনতী মানুষের বিজয় কেতন-গামছা, পত পত করে আকাশে উড়বে।” তিনি যে দলিত, বঞ্চিত শ্রেণির জন্য জোর আওয়াজ তুলতে চলেছেন, সেটা বুঝতে পেরেই নিন্দুকরা রাগে দিশাহারা হয়ে গিয়েছেন বলে দাবি তাঁর। অনেকেই লেখালেখির কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি যে সুযোগ এক বার পেয়েছেন, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই, বঞ্চিত শ্রেণির মানুষের অধিকার আদায় করেই তবেই থামবেন বলে জানিয়েছেন মনোরঞ্জন। তাঁর কথায়, “সুযোগ বার বার আসে না। আজ যখন সমস্ত ‘গামছা গলা’র মানুষের আওয়াজ সারা বিশ্বের কোণে কোণে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ এসেছে, আমি সেটা করেই দম নেব।”

বাংলাদেশের বরিশালে এক নমঃশূদ্র পরিবারে জন্ম। তাঁর যখন ৩ বছর বয়স সে সময় পরিবার পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে। বাঁকুড়ার শিরোমণিপুরে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। তার পর সেখান থেকে ঘুটিয়ারিশরিফ, ঘোলাদোলতলার শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই হয় তাঁদের। চোদ্দো বছর বয়সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান মনোরঞ্জন। অসম, লখনউ, ইলাহাবাদে স্বল্প মজুরিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেন। সাতের দশকে ফিরে আসেন কলকাতায়। জড়িয়েছিলেন নকশাল আন্দোলনেও। জেলও খেটেছেন। সেই সময়ই নিজেকে শিক্ষিত করে তুলেছিলেন। জীবনের কঠিন সংগ্রামের পথ বেয়ে উঠে আসা সেই মানুষটির হাত থেকেই বেরিয়েছে বহু মূল্যবান লেখা।

তাঁর রিকশা করেই একদিন কলেজ যাচ্ছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। সেখানে তাঁকে মনোরঞ্জন জিজ্ঞাসা করেন, ‘জিজীবিষা’ শব্দটির অর্থ। যে প্রশ্ন শুনে অবাক হন মহাশ্বেতা। এর পর মনোরঞ্জনের জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন