Mamata Banerjee

Bengal Polls: ‘নন্দীগ্রাম নিয়ে চিন্তিত নই, চিন্তিত গণতন্ত্র নিয়ে’, দু’ঘণ্টা পর বুথ থেকে বেরিয়ে বললেন মমতা

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা। বিজেপি বুথের দখল নিয়ে ছাপ্পাভোট করেছে বলে অভিযোগ করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২১ ১৩:৪০
Share:

বুথ থেকে বেরিয়ে বক্তৃতা করছেন মমতা।

ধুন্ধুমার কাটিয়ে প্রায় দু’ঘণ্টা পর নন্দীগ্রামের বয়ালের বুথ থেকে বেরোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় বাহিনী, রাজ্য পুলিশ এবং কমিশনের আধিকারিকরা কড়া নিরাপত্তায় তাঁকে ওই বুথ থেকে বার করে আনেন। মূল রাস্তা থেকে প্রায় দু’ কিলোমিটার ভিতরে গ্রামের মধ্যে ওই বুথটি অবস্থিত। হুইলচেয়ারে বসেই ওই দূরত্ব পার হন মমতা। তার পর সেখানে স্থানীয়দের উদ্দেশে বক্তৃতাও করেন তিনি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম নিয়ে চিন্তিত নই আমি। গণতন্ত্র নিয়ে চিন্তিত। এখানে ভোটে চিটিংবাজি হয়েছে।’’

Advertisement

মূল রাস্তা থেকে ওই বুথের দূরত্ব প্রায় দু’কিলোমিটার। হুইলচেয়ারে বসিয়েই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁকে। তার পর ফের গাড়িতে চেপেই রওনা দেবেন। তবে এর পর আর কোনও কেন্দ্রে যাবেন, নাকি রেয়াপাড়ার বাড়িতে ফিরবেন, তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে এখনও এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। মোতায়েন রয়েছে পুলিশ ও র‌্যাফ।

দ্বিতীয় দফায় ভোট চলাকালীন ছাপ্পাভোটের অভিযোগ ঘিরে সকাল থেকেই ধুন্ধুমার পরিস্থিতি নন্দীগ্রামের বয়ালে। পরিস্থিতি তদারকি করতে দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ রেয়াপাড়ার অস্থায়ী বাড়ি থেকে বয়াল মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ নম্বর বুথের উদ্দেশে রওনা দেন মমতা। বয়ালে পৌঁছে হুইলচেয়ারে চেপেই গ্রামের ভিতরে ঢোকেন মমতা। রাস্তায় তাঁকে ছেঁকে ধরেন তৃণমূল সমর্থক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ করেন, বুথের দখল নিয়েছে বিজেপি। অবাধে ছাপ্পাভোট করে যাচ্ছে তারা। তৃণমূলের এজেন্টকে পর্যন্ত ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাদের রুখতে কেন্দ্রীয় বাহিনী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Advertisement

এর পরই সোজা ওই বুথে পৌঁছে যান মমতা। সেখানে তিনি পৌঁছতেই উত্তেজনা চরমে ওঠে। মমতাকে দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে শুরু করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। তাতে তেড়ে যান তৃণমূল সমর্থকরাও। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পরস্পরকে লক্ষ্য করে শুরু হয় এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টিও। পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসে রাজ্য পুলিশ এবং র‌্যাফ। দুই শিবিরকে আলাদা করে দেয় তারা। কিন্তু বুথের বাইরের পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায়, বুথের ভিতরই আটকে পড়েন মমতা। তাঁকে অন্য রাস্তা দিয়ে বার করিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু হয় কিন্তু যথেষ্ট সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না থাকায় তা হয়ে ওঠেনি। বাধ্য হয়ে পুলিশের তরফে মানবশৃঙ্খল গড়ে বিক্ষোভকারীদের আটকানোর চেষ্টা করা হয়।

বয়ালের ওই বুথে যখন ধুন্ধুমার কাণ্ড, সেই সময় শুভেন্দু অধিকারী জানান, খেলা যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ওই বুথে ৭০ শতাংশ ভোটই হয়ে গিয়েছে। সকাল থেকে ভোট হয়ে গিয়েছে। এখন গিয়ে আর কিচ্ছু করার নেই মমতার। এর পরেই বুথে বসেই সংবাদমাধ্যমে মমতা অভিযোগ করেন, বয়ালের ওই বুথে ৮০ শতাংশ ছাপ্পাভোট হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উস্কানিতে বহিরাগতদের এনে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা চলছে। মমতা বলেন, ‘‘বিহার ও উত্তরপ্রদেশের গুন্ডারা এসে ঝামেলা পাকাচ্ছে। যারা ঝামেলা করছে, এক জনও বাংলা জানে না। সব হিন্দি বলছে।’’

একই সঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘আদালতে যাব আমরা। কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। ৬৩টা অভিযোগ পেয়েছি।’’ বয়ালের বুথে বসেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে ফোন করে পরিস্থিতি জানান তিনি। কিন্তু মমতার অভিযোগ উড়িয়ে দেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘অবাঞ্ছিত কেউ যাতে বুথে না ঢোকেন, তার জন্যই কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেবেন। তাতে অসুবিধা কোথায়! হেরে যাবেন বুঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন মমতা। নির্বাচন কমিশনকে ভরসা করা উচিত। সুষ্ঠ ভাবে ভোট করানোই ওদের দায়িত্ব। আর ৮০ শতাংশ ছাপ্পা ভোট চাইলে ওঁর দলও করতে পারবে না। নিজেরে ছাপ্পাভোট করতে পারছেন না বলেই এ সব বলছেন।’’

এর পরেও দীর্ঘ ক্ষণ বুথের মধ্যেই বন্দি ছিসেন মমতা। সেই সময় বিজেপির তরফে প্রশ্ন তোলা হয়, এক জন প্রার্থী এত ক্ষণ কেন বুূথে বসে থাকবেন? কিন্তু সংবাদমাধ্যমে মমতা জানান, নন্দীগ্রামে কী ভাবে ভোট লুঠ হচ্ছে, কী ভাবে মানুষকে ভোটদানে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং গোটা ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা গোটা দেশের সামনে তুলে ধরতে চান তিনি। তাই সেখানে রয়েছেন। কিন্তু রাজ্য পুলিশের তরফে জানানো হয়, বুথের বাইরের পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। ঘটনাস্থলে নেই যথেষ্ট সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনীও। তাই নিরাপত্তার খাতিরেই মুখ্যমন্ত্রীকে বার করে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।

এর পরেও অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর, দুপুর সওয়া তিনটে নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনী। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যান নন্দীগ্রাম থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীও। বিজেপি এবং তৃণমূল, দুই দলের সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেন নগেন্দ্রনাথ। পিছু হটতে অনুরোধ জানানো হয় দুই দলের কর্মী-সমর্থকদেরই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে তার পরেই তৃণমূল নেত্রীকে নিরাপদে বার করে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

সেই সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছিলেন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরাও। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন মমতা। তৃণমূলের এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি, ভোটদানে বাধা দিতে হওয়া হয়েছে বলে নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। কিন্তু এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এক জন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ধুন্ধুমার চললেও, কেন্দ্রীয় বাহিনীর এসে পৌঁছতে এত সময় লাগল কেন, প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন