প্রবল ‘প্রতাপে’ ভোটের মাঠে আবার তিনি

তাঁর দলবলের দৌলতেই ২০১৪-র নভেম্বরে ঘটে গিয়েছে কলকাতা পুলিশের সেই ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’। প্রাণ বাঁচাতে মাথায় ফাইল নিয়ে টেবিলের তলায় পুলিশের লুকিয়ে পড়ার ছবি এখনও সকলের স্মৃতিতে তাজা।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার ও সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩৯
Share:

প্রতাপ সাহা

নামের সঙ্গেই মিলে গিয়েছে কাজ!

Advertisement

এবং তাঁর দলবলের দৌলতেই ২০১৪-র নভেম্বরে ঘটে গিয়েছে কলকাতা পুলিশের সেই ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’। প্রাণ বাঁচাতে মাথায় ফাইল নিয়ে টেবিলের তলায় পুলিশের লুকিয়ে পড়ার ছবি এখনও সকলের স্মৃতিতে তাজা। ওই ঘটনার কাণ্ডারীও তিনিই। এলাকায় বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়িয়েও পুলিশের খাতায় ‘পলাতক’ হয়ে থাকার ক্ষমতা রাখেন। এমনই ‘প্রতাপ’ তাঁর!

তিনি প্রতাপ সাহা। দক্ষিণ কলকাতায় শাসক দলের নেতা। যাঁকে তৃণমূলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী মিছিলে হাঁটতে দেখা যায়। আর এ সবের সুবাদেই আলিপুর, চেতলা এলাকায় শাসক দলের এক অপরিহার্য নেতা হয়ে উঠেছেন ‘প্রতাপদা’।

Advertisement

পুলিশের একাংশের অভিযোগ, ‘দাদা’র দাপট এতটাই যে স্থানীয় থানা বা পুলিশ সব সমস্যার সমাধানের জন্য তাঁরই দ্বারস্থ হন। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, ২০১৪ সালের নভেম্বরে আলিপুর থানায় হামলার ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছিল প্রতাপের দিকে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের না করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই দাপুটে নেতার সঙ্গেই টেবিলে বসে বৈঠক করে ‘বেইজ্জত’ হওয়া পুলিশ। একই ভাবে গত বছর গোপালনগর মোড়ে এক পুলিশ অফিসারকে মারধর এবং বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে নিগ্রহ করার ঘটনাতেও অভিযুক্ত ছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ওই নেতা। প্রভাব খাটিয়ে দু’টি ঘটনাতেই আদালত থেকে সহজে জামিন পেয়ে যান তিনি। পুলিশকে মারধর এবং তাদের ক্যামেরা ভেঙে দেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত হয়েও সাড়ে চার বছর ধরে পুলিশের খাতাতেই তিনি ছিলেন ‘পলাতক’।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই নেতার বিরুদ্ধে পুলিশকর্মীদের মারধর থেকে হুমকি, শ্লীলতাহানির মতো একাধিক ধারায় মামলা রয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাঁর টিকি ছুঁতে পারেনি। পুলিশের নিচুতলার অভিযোগ, ওসিকে মারধর করার মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে আদালতে তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেন না সরকারী আইনজীবী। জামিন পাওয়া ওই নেতাকে দেখা যায় ভোটের কাজেও। রীতিমতো বাড়ি-বাড়ি ঘুরে ভোট চাইতে হাজির হন ওই নেতা।

কে এই প্রতাপ সাহা?

চেতলার বাসিন্দা ওই নেতার উত্থান তৃণমূল ক্ষমতায় আসার ঠিক আগে থেকেই। ববি হাকিমের ঘনিষ্ঠ ওই নেতার হাতে তখন ছিল ১০টির মতো বস্তির দায়িত্ব। সময়ের সঙ্গে যা বেড়ে হয়েছে ১০০-র বেশি। গত বছর পুরভোটের দিনে চেতলা এলাকায় ভোট করাতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এলাকাবাসীরা দাবি করেছেন, এ বারও ভোটের দিন ঘোষণা হতেই দলনেত্রীর প্রচারে নেমে পড়েছেন ওই নেতা। প্রচার চালাচ্ছেন জোর কদমে। তা স্বীকার করে প্রতাপ বলেন, ‘‘দল যখন করি, ভোট চাইতে তো মানুষের কাছে যেতেই হবে। আমি দিদির জন্য ভোট চাইতেই বাড়ি-বাড়ি যাই।’’

বিরোধীদের অভিযোগ, ভোট চাওয়ার নাম করে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে এক প্রকার শাসানি দিয়ে আসেন প্রতাপের দল। বিরোধী পক্ষে পড়তে পারে এমন ভোটদাতাদের বাড়িতে গিয়ে সরাসরি ভোটের দিনে ঘর থেকে না বেরনোর হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গত পুর ভোটেও দাপটের সঙ্গে ভোট করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এ বারও প্রতাপ সেই পথই প্রস্তুত রাখছে বলে অভিযোগ করেছে বিরোধী দল। যা শুনে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে প্রতাপের সাফ মন্তব্য, ‘‘দিদি যা কাজ করেছেন, এমনিই জিতবেন। অকারণে শাসাতে যাব কেন?’’

‘দাদাগিরি’র পাশাপাশি আলিপুর-চেতলা এলাকার গাড়ি পার্কিং এবং সরকারি-বেসরকারি নির্মাণে ইট-বালি-সিমেন্ট সরবরাহের আদলে শাসক দলের ওই অপরিহার্য নেতা সিন্ডিকেট চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। বিরোধীদের দাবি, দরপত্রে যে-ই কাজের বরাত পান না কেন, নির্মাণের সমস্ত মাল প্রতাপের কাছ থেকে কেনা বাধ্যতামূলক। প্রতাপ যে সমস্ত ক্লাব ও সংগঠনের মাথায় বসে রয়েছেন, তাদের দিয়েই তিনি এ সমস্ত কাজ করেন বলে অভিযোগ। বিরোধীদের অভিযোগ, এলাকার পার্কিং ব্যবসারও একচ্ছত্র অধিপতি তিনিই। এবং ফিরহাদ হাকিমের হাত মাথায় থাকায় প্রতাপের ‘প্রতাপ’ আরও বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।

কী বলছেন প্রতাপ সাহা? বিরোধীদের এই সমস্ত অভিযোগের পরেও অবশ্যও মচকাননি ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ নেতা। তাঁর সাফ জবাব, ‘‘এ সমস্ত কথা একেবারেই মিথ্যা। আমি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের নিয়েই থাকি এলাকায়। দলও করি। কিন্তু কোনও অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকি না।’’ ফিরহাদ (ববি) হাকিমের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদেই তাঁর প্রতাপ কি না জানতে চাইলে
তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি ববিদাকে অবশ্যই চিনি। এর বেশি আর কিছু বলব না।’’ তবে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ববি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন