আগের বিধায়কের মতো হবেন না তো

এক নারদে রক্ষা নেই। দোসর ‘বনমালী’! প্রচারে নেমে জোড়া হুলের ঘায়ে কাত হয়ে গেলেন বর্ধমানের ভাতারের তৃণমূল প্রার্থী সুভাষ মণ্ডল।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

এক নারদে রক্ষা নেই। দোসর ‘বনমালী’!

Advertisement

প্রচারে নেমে জোড়া হুলের ঘায়ে কাত হয়ে গেলেন বর্ধমানের ভাতারের তৃণমূল প্রার্থী সুভাষ মণ্ডল।

ভাতারের বলগনা স্টেশন। শুক্রবার একে একে ট্রেন থেকে নামছেন যাত্রীরা। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে গলায় উত্তরীয় ঝুলিয়ে ভোট চাইছিলেন সুভাষবাবু। এক যাত্রী বলে উঠলেন, ‘‘দাদা, কাগজ দেখেছেন তো? আপনিও কি বনমালীর মতো...?” কাগজে দলের ‘দাদার কীর্তি’ দেখার পর থেকেই মনটা দমে গিয়েছিল তাঁর। তাই ওই যাত্রী প্রশ্ন শেষ করার আগেই হুড়মুড়িয়ে ট্রেনে উঠে গেলেন সুভাষবাবু।

Advertisement

এমনিতেই এ বার টিকিট না পেয়ে ভারী গোঁসা হয়েছে ভাতারের বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক বনমালী হাজরার। হাজার সাধ্যসাধনার পরেও তাঁকে প্রচারে নামাতে পারেননি সুভাষবাবু। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দলীয় কর্মীদের নিয়ে পথে নেমেছেন। তখনই বাজারে এল নারদ নিউজের স্টিং অপারেশন। তা-ও কিছুটা সামলে উঠছিলেন। কিন্তু, ১৬ লক্ষ টাকা দিয়ে প্রার্থী হতে চেয়ে কী ভাবে ঠকেছেন বনমালীবাবু, সেই খবর শুক্রবারের আনন্দবাজারে প্রকাশিত হয়ে বিপাকে ফেলে দিয়েছে তাঁকে। সুভাষবাবুর অনুগামীদের ক্ষোভ, ‘‘একে নিজে প্রচারে নামছেন না। তার উপর এই কেলেঙ্কারি! এর ফল না ভুগতে হয় সুভাষদাকে!’’

আশঙ্কা যে খুব ভুল নয়, তা এ দিন সকালে ভাতারের মুকুন্দপুরে সুভাষবাবুরা পা রাখতেই বোঝা গেল। প্রচারের বদলে এলাকার লোক বনমালী-কাণ্ড নিয়েই আলোচনায় মশগুল। ‘দলটার কী হাল’ জাতীয় মন্তব্যও কানে এল। পাত্তা না দিয়ে প্রার্থী এগিয়ে চললেন কোশিগ্রাম, ভাটাকুলের দিকে। কিন্তু, এ বার আরও সরাসরি আক্রমণ। ভোটারদের কেউ কেউ বললেন, ‘‘তৃণমূলের এই প্রার্থী আরও বড় খেলোয়াড় না তো!’’ আবার সুভাষবাবুর কাছে কারও প্রশ্ন, ‘‘দাদা আপনিও আগের বিধায়কের মতো হবেন না তো?’’

ভোট আসতে দেরি আছে। তাই ভোটারদের ‘অফেন্সের’ মুখে ‘ডিফেন্সিভ’-ই থাকলেন সুভাষবাবু। ঠান্ডা মাথায়, মুখে হাসি রেখে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বিলোলেন। কিন্তু, বনমালীবাবুকে ঘিরে বিতর্ক যে তাঁদের অস্বস্তিতে ফেলেছে, তা স্পষ্ট হয়ে গেল যখন সুভাষবাবুর ছায়াসঙ্গী, বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য শান্তনু কোনার বললেন, ‘‘কী আর বলব। কানপাতা দায় হয়ে গিয়েছে।’’

এমনিতেই ভাতারে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার তৃণমূল। বনমালীবাবু এবং ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানগোবিন্দ আধিকারীর ফাঁক গলে সুভাষ মণ্ডলের নাম ঘোষণা হতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে দু’তরফে। বনমালীবাবুর অনুগামীরা তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। শেষে দুই নেতার মান ভাঙাতে তাঁদের বাড়ি যান প্রার্থী। তাতেও কাজ হয়নি। এ দিন ভাটাকুল গ্রামে দুপুরে খাওয়ার ফাঁকে বেশ কিছু কর্মী তো বলেই দিলেন, “এখন বুঝতে পারছি, টিকিট পেতে টাকা দিয়েছিলেন বলেই আমাদের প্রচারে নামতে মানা করেছিলেন বনমালীবাবু।”

মানগোবিন্দবাবু বলেন, ‘‘সেই দলের মুখ পুড়ল। এই জন্যই আমরা ওঁর বিরোধিতা করতাম।” বনমালীবাবুর হয়ে প্রতারণার অভিযোগ যিনি করেছিলেন, ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সেই নূর আলমের আবার দাবি, ‘‘এ ব্যাপারে বনমালীদা কিছুই জানেন না। পরে সব বলব।” বিকেলে ফোন করা হলে বললেন, “ভাগ্নের জন্য পাত্রী দেখতে এসেছি। পরে কথা বলব।” কিচ্ছু বলতে চাননি সুভাষবাবুও।

যাঁকে ঘিরে এত কাণ্ড, সেই বনমালীবাবুকে ফোনে ধরতেই বলে উঠলেন, ‘‘শরীরটা খুব খারাপ!’’ সুভাষবাবুর সঙ্গীরা যা শুনে বলছেন, শরীরের দোষ কী। ১৬ লক্ষ টাকা খোয়ালে কার শরীরই বা ভাল থাকে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন