চলছে মহড়া।
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হল। চেয়ারে সারি সারি দর্শকমণ্ডলী। আর মঞ্চে অভিনেতা। নাটকের এই চেনা ছক থেকে বেরিয়ে আসার ইচ্ছেটা অনেক দিন ধরেই মনের মধ্যে একটু একটু করে বড় হচ্ছিল। অবশেষে স্বপ্নপূরণ। শহরের দমবন্ধ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে গ্রামবাংলার মেঠো পথ, রাঙামাটির মাদল যেন সাদরে বরণ করে নিয়েছে মণীশ মিত্রের নাটককে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি বীরভূমের দারন্দা গ্রামে খোলা আকাশের নীচে উপস্থাপিত হবে ‘কসবা অর্ঘ্য’র নতুন প্রযোজনা ‘দেবীমঙ্গল কাব্য’। সঙ্গে রয়েছে পর্যটনের ভাবনাও।
হঠাত্ এই অন্য রকম ভাবনা কেন? মনীশের কথায়, ‘‘কলকাতা দিন দিন ময়লা হয়ে যাচ্ছে। এখানে বাঁচতে কষ্ট হচ্ছে। থিয়েটার করা তো আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আসলে গ্রামের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে আমাদের চেতনায়, ভাবনায়, বোধে যে স্তর পড়েছে তা সারিয়ে আরও বেশি অর্গ্যানিক হওয়ার চেষ্টা করছি। এই ভাবনা থেকে নতুন থিয়েটারের জন্ম হচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস।’’ আপাতত মাসে একটা করে শো করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। আর এই প্রজেক্টের কারণে শহরে কাজের সংখ্যাও কমিয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় এই নতুন ভাবনা। ‘দেবীমঙ্গল কাব্য’-র পর অন্য নাটক নিয়েও নিশ্চয়ই কাজ করার ইচ্ছে আছে? মণীশ বললেন, ‘‘মোহন রাকেশের নাটক ‘আষাঢ়কা এক দিন’ এবং কালিদাসের ‘ঋতুসংহারম’ আমার খুব প্রিয়। এগুলো নিয়ে কাজের ভাবনা রয়েছে।’’
ভক্তিরসের সমান্তরালে মানুষ আর মানুষের বেঁচে থাকা মঙ্গল কাব্যের বৈচিত্র। এই নির্যাস থেকেই গড়ে উঠেছে ‘দেবীমঙ্গল কাব্য’। প্রায় ৫০ জন শিল্পী এতে অংশ নিয়েছেন।
নাটকের সঙ্গে পর্যটনের ভাবনাটা কেমন?
ঠিক সময়ে শান্তিনিকেতন স্টেশনে পৌঁছনোর পরে সংশ্লিষ্ট দর্শকের ভার নেবেন ‘অর্ঘ্য’র সহায়ক কর্মীরাই। প্রথমে গাড়ি করে বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতন ঘোরাবেন তাঁরা। লাঞ্চে থাকবে বাঙালি মেনু। সন্ধ্যে নামতেই ‘বীরভূম ব্লসম থিয়েটার’ প্রাঙ্গনে ‘দেবীমঙ্গল কাব্য’-র উপস্থাপনা। ঠাণ্ডার মোকাবিলায় এবং নাটকের প্রয়োজনে জ্বালা হবে বড় বড় অগ্নিকুণ্ড। গ্রামের অন্ধকার পরিবেশে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হবেন দর্শক। এক রাত্রির হোটেল ভাড়া সমেত এক জনের প্যাকেজ ফি ৩৫০০ টাকা। আর দু’জনের জন্য (হোটেলে একই ঘরে থাকলে) ৪৫০০ টাকা।