Akshay Kumar

নিজের চরকায় তেল দিন

অভিনব দর্শন তাঁর। কারও সমালোচনা করেন না। আবার নিজের সমালোচনাতে কান দেন না। হঠাৎ করে বিষ্যুদবার দুপুরে তিনি হাজির আনন্দবাজার আপিসে। আর তাঁকে, অক্ষয়কুমার-কে ঘিরে গোটা আনন্দplus টিমঅভিনব দর্শন তাঁর। কারও সমালোচনা করেন না। আবার নিজের সমালোচনাতে কান দেন না। হঠাৎ করে বিষ্যুদবার দুপুরে তিনি হাজির আনন্দবাজার আপিসে। আর তাঁকে, অক্ষয়কুমার-কে ঘিরে গোটা আনন্দplus টিম

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০০:০৩
Share:

অক্ষয়কুমারকে আনন্দplus-এর উপহার: স্ত্রী টুইঙ্কলের বই ও ছবির কোলাজ। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

• এত খ্যাতি! নামডাক। তবু অক্ষয়কুমার মানেই মাটিতে পা। কী করে সম্ভব?

Advertisement

পুরো কৃতিত্বটা আমার পরিবারের। আজ আমি যা, সব বাবা-মায়ের থেকে শেখা। সেই পনেরো বছর বয়সে কলকাতা এসেছিলাম। কলকাতার ওই দিনগুলো আমায় অনেক কিছু শিখিয়েছে। এই শহরের অলিগলি, চৌরঙ্গি আজও আমার মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। নিউ মার্কেটের কাছে এক সময় কাজ করেছি। তখন ওই সামান্য মাইনেতে গ্লোবে সিনেমা দেখা বা বাইরে খাওয়াদাওয়াগুলো ছিল বিরাট ব্যাপার। কলকাতায় এলে আজও ওই দিনগুলো সাংঘাতিক ভাবে মনে পড়ে।

Advertisement

• কলকাতা প্রসঙ্গে বছর দু’য়েক আগে আনন্দplus-কে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ‘মলম লেকে ঘুমতি হ্যায় ইয়ে সিটি...’

তাই? খুব গভীরতার জায়গা থেকে বলেছিলাম বোধহয়। আসলে ওই অল্প বয়সের অভিজ্ঞতাগুলোই এফোঁড় ওফোঁড় করে আজকের অক্ষয়কুমারকে তৈরি করেছে। দেখতে গেলে কলকাতার দিনগুলো আজও হেল্প করে।

• প্রথম বান্ধবী। প্রথম ড্রিঙ্কস। সেগুলোও নিশ্চয়ই এই শহরে?

নাই বা বললাম। ব্যক্তিগত বিষয়ে আজ কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। প্লিজ…

• আচ্ছা, একটা বিতর্ক গত সপ্তাহ অবধি চলছিল। নাসিরুদ্দিন শাহ-র কিছু মন্তব্য আপনার শ্বশুর রাজেশ খন্নাকে নিয়ে…

হুঁ।

• নাসির তো আপনার বহু দিনের সহকর্মী। ‘মোহরা’ করেছিলেন আপনারা। খারাপ লাগেনি?

আজ আমরা বরং পিস নিয়ে কথা বলি, পিসেস নিয়ে নয়। শান্তি নিয়ে কথা হোক, ভাঙা টুকরোগুলো নিয়ে নয়। আর তা ছাড়া নাসির তো ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। সেটা সব জায়গায় বেরিয়ে গেছে। আমার কাছে বিষয়টা মিটে গিয়েছে।

• ওকে, বিতর্ক বাদ দিলাম। ‘এয়ারলিফ্ট’ থেকে শুরু করে ‘রুস্তম’, আপনার সময়টা তো বেশ ভাল যাচ্ছে...

চোদ্দোটা ফিল্ম যখন ফ্লপ করেছিল, তখনও সময়টাকে একই ভাবে দেখেছি।

• শুনেছি, অনেক সময় আপনি সমালোচনা নিতে পারেননি...

তাই কি? আমার তো মনে হয় না আমি কোনও দিন কারও সঙ্গে লড়াই করেছি।

• খালিদ মহম্মদ-এর সঙ্গে আপনার শুনেছিলাম বিরাট ঝামেলা হয়েছিল ফিল্ম রিভিউকে কেন্দ্র করে। প্রায় দশ বছর কথা বলতেন না…

(থামিয়ে দিয়ে) দাঁড়ান, দাঁড়ান... আপনারা একটা ইন্টারভিউ দেখান তো দেখি, যেটা পড়ে আপনাদের মনে হয়েছে আমি সমালোচনা নিতে পারিনি? বা সমালোচককে পাল্টা আক্রমণ করেছি। আমার সামনে গুগল খুলে দেখান তো।

• গুগলে হয়তো নেই। কিন্তু শুনেছিলাম…

পাবেন না...আসল কথা, আমার সম্পর্কে অনেক কিছু শোনা যায়। তাই শুনেছেন। আমি শিওর কোথাও পড়েননি। আর শুনে তো কোনও সিদ্ধান্তে আসা যায় না। আমিও আপনাদের সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি বলতে পারি...তাতে কী প্রমাণ হয়?

• এই ধৈর্য কি মার্শাল আর্টসে ট্রেনিংয়ের জন্য?

আসলে কী জানেন, কারও কোনও বিষয়ে মন্তব্য করার অধিকার আমার নেই। আমার পরিবার এরকমই শিখিয়েছে আমায়। আমি মনে করি, কারও সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করা আমার উচিত নয়। বিশেষত যখন আমি ইন্ডাস্ট্রিতে আছি।

কারও অভিনয় নিয়ে, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমি কেন মন্তব্য করব? আমার নিজের জীবন আছে। আর বলাই হয়—‘নিজের চরকায় তেল দাও।’ আমি তাই মেনে চলি। স্কুলেও টিচাররা বলতেন ‘মাইন্ড ইয়োর ওন বিজনেস।’ এখন বুঝি ‘নিজের চরকায় তেল দাও’ কথাটা বলার পিছনে একটা কারণ আছে। সমস্যা তখন শুরু হয় যখন অন্যের জীবন, অন্যের কাজ নিয়ে আপনি মম্তব্য করতে শুরু করেন। এটার বাইরে নিজেকে রাখলে দেখবেন অনেক সোজাসাপ্টা জীবন কাটানো যায়।

• সত্যি কি সমালোচনা আপনাকে একটুও দুঃখিত করে না?

না। আরে, লোকে কত দিন সমালোচনা করবে? তিন মাস? চার মাস? তার পর এক দিন তো থামতেই হবে। কাজেই মন্ত্র হল সব ভুলে নিজের কাজ করে যাও।

একটা সময় ছিল যখন লোকে আমাকে ‘ফার্নিচার’ অবধি বলেছে। আরে, ফার্নিচার কী, আমার সেই সময়ের অভিনয় যা ছিল—পুরো ফার্নিচারের শো-রুম ছিলাম আমি (হাসি)। যাক গে, আমার অভিজ্ঞতা শিখিয়েছে যখন কেউ আমার অভিনয় নিয়ে সমালোচনা করে, সেটা তার ব্যক্তিগত মত। আমি তার সমালোচনাকে ভিতর থেকে অ্যাপ্রিশিয়েট করি না, বরং এড়িয়ে চলি। যদি সমালোচনা নিয়ে বসে থাকি, তা হলে ক্ষতি আমারই। (দু’ হাত বাড়িয়ে) সামনের লক্ষ্য থেকে সরে যাব আমি।

• বড্ড বেশি বিনয় হয়ে যাচ্ছে না! আপনার সেই পঞ্জাবি খুন্নাসটা গেল কোথায়?

না, না বিশ্বাস করুন, ও সব পঞ্জাবি খুন্নাস-টুন্নাস আমার নেই।

• ‘খিলাড়ি’ থেকে ‘মোহরা’, ‘হেরা ফেরি’ থেকে ‘রুস্তম’। ২৫ বছরে অক্ষয়কুমারের এনার্জি বা স্পিরিট কোথাও তো কম পড়ল না! এই এনার্জিটা পান কোথা থেকে বলুন তো?

(প্রচণ্ড হেসে) চ্যবনপ্রাশ খেয়ে! হাহা, ইয়ার্কি বাদ দিয়ে আমি সোজা কথাটা সোজা ভাবেই বলছি।

আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসলে টাকা রোজগারের জন্য এসেছিলাম। কিন্তু যত সময় এগোল, দেখলাম কাজটাকে ভালবাসতে শুরু করেছি। শেষ তেরো-চোদ্দো বছর ধরে কাজটা আমার প্যাশন হয়ে উঠেছে।

এখনও ঘুমোতে যাওয়ার সময়, পরের দিনের শ্যুটিংয়ে কী হবে সেটা নিয়ে ভাবি, কেমন করে সংলাপ বলব, এগুলো মাথায় ঘুরতে থাকে। এই এক্সাইটমেন্টের জন্য আমার এনার্জি লেভেল আজ পর্যন্ত কমেনি। এই তো যখন ফ্লাইটে কলকাতায় আসছি, তখনও খুব এক্সাইটেড লাগছিল। ভাবছিলাম, কলকাতা যাব। নতুন লোকজনকে মিট করব। নতুন ছবির কথা বলব। তাদের রিঅ্যাকশন দেখব।

যে দিন এই এক্সাইটমেন্টটা মরে যাবে, সে দিন নিজেই ছবির জগৎ থেকে সরে যাব। এই এনার্জিটা অমিতাভ বচ্চনের মধ্যে মারাত্মক দেখেছি। যখন স্যরের সঙ্গে কথা বলেছি, উনি অ্যাক্টিং নিয়েই কথা বলেছেন। উফ্ কী প্যাশন! এই স্পিরিটটাই একজন অভিনেতাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়।

• আপনার স্ত্রীর বাবা হলেন রাজেশ খন্না। ভারতের প্রথম সুপারস্টার। মা এমন নামডাকওয়ালা সুন্দরী অভিনেত্রী। এই রকম একটা পরিবারে বড় হয়েও টুইঙ্কলের মধ্যে এমন ব্যালান্স এল কী করে?

এটা সত্যি ভুলে যাওয়ার মতো নয় যে টুইঙ্কল দেশের প্রথম সুপারস্টারের মেয়ে। ও এই ইন্ডাস্ট্রির সবটা দেখেছে। শুধু একবার টুইঙ্কলের ছোটবেলাটা ভাবুন তো! ওদের লাল ইম্পালা গাড়ি ছিল। সেই আমলে ইম্পালা! গাড়িটা চড়ে ঘুরে বেড়াত ওরা। সিনটা ভাবুন! হুড খোলা। রাস্তা দিয়ে যখন যেত হাওয়ায় চুলগুলো উড়ত। এগুলো ও নিজেই আমাকে বলেছে। মনে হত যেন একেবারে হলিউড-এর কোনও ছবি। যার ছোটবেলা এমন কেটেছে, তার পরের সময়টা একটু অন্য রকম ছিল। সব মিলে টুইঙ্কলকে একটা অদ্ভুত ব্যালান্সড পার্সোনালিটি বানিয়েছে। পাশাপাশি আমার ছোটবেলা ভাবুন। আমি সাধারণ পরিবারের ছেলে, পনেরো বছর বয়স থেকে কাজ করছি। দু’টো আলাদা আলাদা পৃথিবী থেকে যেহেতু আমরা এসেছি, একটা অদ্ভুত ব্যালান্স তৈরি হয়ে গেছে। এমন নয় যে, একদিন রাতে আমরা ঠিক করেছিলাম কাল থেকে ব্যালান্স রাখতে হবে। একদমই নয়। ওটা জাস্ট হয়ে গেছে।

• আচ্ছা, আপনার এত ফ্যান। আপনি কার ফ্যান ছিলেন?

আমি সিনেমার ফ্যান। একটা সময় ছিল যখন প্রতি শনিবার আমি, বাবা-মা আর বোন মুম্বইয়ের রূপম সিনেমা হলে যেতাম। ব্রেকফাস্টের টাকা বাঁচিয়ে গুরুকৃপা দোকানের সামোসা খেতাম। ওটাই ছিল আমাদের আউটিং, আমাদের একমাত্র এন্টারটেনমেন্ট।

• আর কোনও বিশেষ অভিনেতার ফ্যান?

সঞ্জীবকুমার….

• দ্বিতীয়জন?

(একটু ভেবে) দ্বিতীয়জন…. মেহমুদ সাব।

• একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। ‘ঢিশুম’ ছবিতে আপনি সমকামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বলিউডে তো অনেকেই এ রকম চরিত্র করতে চান না। মেনস্ট্রিম ছবির নায়ক হয়ে কতটা কঠিন ছিল আপনার কাজটা?

‘রুস্তম’-এ নৌ-সেনা অফিসার-এর চরিত্র যেমন, এটাও তেমন একটা চরিত্র মাত্র। ব্যক্তিগত ভাবে আমি সমকামিতায় ভুল কিছু দেখি না। হ্যাঁ, তবে এটা ঠিক যে মেনস্ট্রিমে আমিই প্রথম এ রকম একটা চরিত্রে অভিনয় করলাম। আমার মনে হয়েছিল স্ক্রিপ্ট ভাল, রোলটা ইন্টারেস্টিং। তাই করলাম।

• আচ্ছা, ‘মিসেস ফানি বোনস’ বইতে বা নিজের কলামে টুইঙ্কল যেভাবে আপনাকে মজা করে ‘ম্যান অব দ্য হাউজ’ বলে সম্বোধন করেন, তাতে আপনি আপত্তি করেন না?

(হেসে) না, না। একদমই না। আমি কী আপত্তি করব!

• কিন্তু বাড়িতে টুইঙ্কল-কে কী ভাবে সামলান, সেটা প্লিজ একটু বলবেন...

বাড়িতে তো আমি একেবারে হীনবল! কিছু বললে টুইঙ্কল আমায় চড় মারবে। শি উইল স্ল্যাপ মি (হাসি)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন