বছরটা শুরু হয়েছিল ‘প্রাক্তন’-এর গান দিয়ে। এখন রেডিও থেকে টিভি চ্যানেল—বাজছে ‘ক্ষত’ আর ‘সাহেব বিবি গোলাম’-এর গান।
অন্য দিকে অলিম্পিক্সের বিজ্ঞাপন বিরতিতেও চেনা, চেনা সুর। গায়কের নাম অনুপম রায়। সুজিত সরকারের পরিচালনায় এই প্রথম জাতীয় স্তরে বিজ্ঞাপনের গান গাইলেন, এর পরই পুজোয় আসছে সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘জুলফিকার’।
‘‘কোনও দিন মৃত্যুর জন্য গান লিখতে হবে ভাবিনি,’’ বলছিলেন অনুপম। ‘জুলফিকার’-এ থাকছে আরও চমক, যার পুরোটা এক্ষুনি জানাতে নারাজ তিনি। শুধু বললেন, ‘‘নচিকেতা চক্রবর্তীকে এই ছবি অন্য ভাবে আবিষ্কার করবে।’’
তবে, এত গানের মাঝে ফের অন্য রাস্তায় হাঁটছেন অনুপম। ইলিশ মাছের চেয়ে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার চেয়ে একলা আড্ডা দেওয়ার ইচ্ছে তাঁর বরাবরের, এবং সেই ভিনদেশি মন নিয়ে নয়-নয় করে
লিখে ফেলেছেন ৪৭টা কবিতা। কবিতারা জড়ো হচ্ছে তাঁর নতুন বইয়ের মলাটে।
ঝুলিতে অগুন্তি হিট গান, কিন্তু হিট কবিতা কি লেখা যায়?
প্রশ্নটা শুনে অল্প হাসলেন অনুপম। ‘‘এখন গান তৈরি করার সময় মনে হয় এই দু’টো লাইন অন্য ভাবে লিখি। সুরটা ভেঙে দিই। তা হলে হয়তো গানটা হিট হবে। কিন্তু কবিতা লেখার সময় এ সব মাথায় থাকে না। হিট কবিতা লেখার স্বপ্ন দেখি না।’’
আসলে সামনে যা বলা যায় না, গানে যা লেখা যায় না, তাই কবিতায় বলছেন অনুপম। এর আগেও লিখেছেন দুটো কবিতার বই। তবে, তৃতীয় প্রয়াসে তাঁর কলমে অন্য সুর। ‘‘আমার মেজাজে বদলে যাওয়ার ইঙ্গিত আছে, ঘনিষ্ঠ হওয়ার তাগিদ আছে, অহঙ্কার আছে,’’—কবিতার কথা ছন্দ মিলিয়ে লেখেননি তিনি। বরং তৈরি করেছেন ‘বাক্স কবিতা’—বাক্সের বাঁধনে বন্দি কয়েক লাইন।
কবিতায় সমকালের ঘটনার কথাও বিশেষ নেই। ‘‘কিছু ঘটলেই যে কবিতা লিখে বোঝাতে হবে এমনটা আমার মনে হয় না,’’ বলছিলেন তিনি। নতুন কবিতায় এ বার প্রেমের শব্দ। ভালবাসার গন্ধ। ভ্যালেন্টাইনের কথা।
একের পর এক ছবির গান হিট। তবু তাঁর মন পড়ে আছে অ্যালবামের জন্য। “ছবির জন্য প্রেমের গান, দুঃখের গান, হাসির গান লিখতে লিখতে কোথাও মনে হচ্ছে স্টিরিওটাইপ হয়ে যাচ্ছি।”
নিজেকে ভাঙতেই এ বার প্রাইভেট অ্যালবামের কথা ভাবছেন অনুপম।
২০১৬-র সাউন্ডস্কেপ তৈরি করতে চান তিনি। মনে করেন সময়ের একটা শব্দ থাকে, সুর থাকে।
বেশির ভাগ বাংলা ছবি একটা পিরিয়ড নিয়ে চলে, তাই আজকের সময়ের সাউন্ডস্কেপটা কোথাও ধরা যায় না। আজকের সময়কে গানে নিয়ে আসতে ইচ্ছেমতো গান বাঁধছেন তিনি।
কবি অনুপম, না গায়ক অনুপম? কাকে তিনি বেশি এগিয়ে রাখেন? খানিক ভেবে বললেন, ‘‘দু’জনের মধ্যে কোনও রেষারেষি নেই, দু’ই অনুপমই এখন শেখার স্তরে। কিছু বছর যাক দেখি কে বেশি ইমপ্রুভ করে।’’
আসলে শহরজুড়ে বৃষ্টির মাঝে, পাল্টাচ্ছে অনুপমের মেজাজ।
বোধহয় মনও!
তোমাকে ‘চা’-ই: ডাবিং-এর ফাঁকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল