পরিচালক বনাম পুলিশ হুমায়ুনের সংঘাত

হাসনাবাদ থানায় বদলি হওয়া সুমনা একটি অজ্ঞাতপরিচয় মেয়ের (সিনেমায় পুলিশের ধারণা অনুযায়ী যৌনকর্মী) খুনের তদন্ত পায়। সেই মেয়েটি সুমনার ছোটবেলার বন্ধু আলেয়া (প্রিয়ঙ্কা) এবং তার খুনের তদন্ত ধরেই সিনেমা এগিয়েছে।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ০৭:০০
Share:

সিনেমার শুরুতেই নিউটাউনের পানশালায় লাস্যময়ী গায়িকার গানের ফাঁকে দাগি দুষ্কৃতীর গুলি, পুলিশি বাহাদুরি দেখে মনে পড়ে যাচ্ছিল একদা সল্টলেকের দুঁদে ডিএসপির কথা। বাহাদুরির ফলস্বরূপ তাঁকে বদলি হতে হয়েছিল। সিনেমার শুরুতেই তাই বদলির চিঠি পায় সাব ইন্সপেক্টর সুমনা রায় (তনুশ্রী)। সেখান থেকেই গল্পের শুরু!

Advertisement

হাসনাবাদ থানায় বদলি হওয়া সুমনা একটি অজ্ঞাতপরিচয় মেয়ের (সিনেমায় পুলিশের ধারণা অনুযায়ী যৌনকর্মী) খুনের তদন্ত পায়। সেই মেয়েটি সুমনার ছোটবেলার বন্ধু আলেয়া (প্রিয়ঙ্কা) এবং তার খুনের তদন্ত ধরেই সিনেমা এগিয়েছে। থ্রিলার কতই হয়। কিন্তু এখানে পরতে পরতে উঠে এসেছে নাবালিকা বিবাহ, তিন তালাক, সীমান্ত এলাকার জাল টাকার কারবার। উঠেছে বাংলার শিক্ষিত, অশিক্ষিত সমাজের ভিতরে-বাইরে জড়িয়ে থাকা ধর্মীয় বিদ্বেষ, দাঙ্গা। ধর্মীয় ভণ্ডামির আড়ালে লুকিয়ে থাকা অপরাধীরাও হয়ে উঠেছে গল্পের অপরিহার্য চরিত্র।

প্রথম ছবিতে এমন গল্প বলার জন্য হুমায়ুন কবীরের তারিফ করতেই হয়। শুধু থ্রিলারের আমেজে আটকে থাকেননি তিনি, সামাজিক ব্যাধি ও সংগঠিত অপরাধের ভিতরে ঢুকতে চেয়েছেন। অভিনয়ে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন মোহন্তরূপী কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। কণ্ঠস্বর, চাহনি, মেকআপে তিনি অনবদ্য। ছোট্ট চরিত্রে নিজেকে ফের চিনিয়েছেন গৌতম হালদার। প্রিয়ঙ্কার সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অভিব্যক্তি প্রশংসনীয়। তিন তালাকের বিরোধিতায় তাঁর চোখের ‘ক্লোজ আপ’ শট মনে দাগ কাটে। তনুশ্রী পুলিশ অফিসারের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে অতিনাটকীয়। পঞ্জাবি আইপিএসের চরিত্রে বাদশার কিছু করার ছিল না। ভুঁড়িওয়ালা ওসির চরিত্রে খরাজ সাবলীল। তাঁর কমেডি টাইমিং প্রশ্নাতীত।

Advertisement

আলেয়া পরিচালনা: হুমায়ুন কবীর অভিনয়: তনুশ্রী, প্রিয়ঙ্কা, সায়নী, কৌশিক, খরাজ, গৌতম ৫/১০

তবু কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। এত অপরাধ বললেন পরিচালক, কিন্তু এক বারও রাজনীতি এল না সিনেমায়! এই সামাজিক ব্যাধি, ধর্মীয় ভেদাভেদ, সংগঠিত অপরাধ রাজনীতির মদত ছাড়া হয়? সীমান্তের ও পার থেকে জাল টাকার আমদানির কথা এল, কিন্তু এ পার থেকে গরু পাচারের কথা সরাসরি এল না কেন? এত সাবধানী না হলেও পারতেন হুমায়ুন। পুকুরে ডোবার স্মৃতিরোমন্থন কখনও কখনও একঘেয়ে করে দেয়।

তবে শেষ ভাল যার সব ভাল। টুকটাক খামতি সত্ত্বেও প্রথম সিনেমায় পাশ করেছেন হুমায়ুন। বাকিটা বলবে বক্স অফিস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন