বাঙালি কেতায় গুপ্তধনের খোঁজ

সিনেমার শুরুতেই টাইটেল কার্ডের সর্বত্র বাংলা শব্দ। যেমন ‘সৃজন প্রযোজনা’র মতো শব্দবন্ধ ব্যবহার সেই ‘রূপে’র খোলস ছাড়ানোর প্রথম ধাপ। আবার ‘উৎসর্গ’ অংশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সত্যজিৎ রায়, হেমেন্দ্রকুমার রায়, নীহাররঞ্জন রায় প্রমুখের নাম ব্যবহার বাঙালির বৌদ্ধিক-চর্চা মনে পড়়ায়।

Advertisement

অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ১২:৪৮
Share:

‘মিশর রহস্য’ থেকে ‘যকের ধন’— গুপ্তধন খুঁজতে বাঙালি সাহিত্যিক হন বা পরিচালক, কেউই কম যান না। এই তালিকায় এ বার সংযোজন ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’। সেই সংযোজনে পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় সচেতন ভাবেই উস্কে দেন বাঙালি মধ্যবিত্তের ফিল্মি-রূপ।

Advertisement

সিনেমার শুরুতেই টাইটেল কার্ডের সর্বত্র বাংলা শব্দ। যেমন ‘সৃজন প্রযোজনা’র মতো শব্দবন্ধ ব্যবহার সেই ‘রূপে’র খোলস ছাড়ানোর প্রথম ধাপ। আবার ‘উৎসর্গ’ অংশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সত্যজিৎ রায়, হেমেন্দ্রকুমার রায়, নীহাররঞ্জন রায় প্রমুখের নাম ব্যবহার বাঙালির বৌদ্ধিক-চর্চা মনে পড়়ায়।

শুভেন্দু দাসমুন্সী ও ধ্রুবর গল্পটি সোজাসাপ্টা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সুবর্ণ সেন ওরফে সোনাদা (আবীর চট্টোপাধ্যায়) দেশে ফিরেই চলে যায় আত্মীয় আবিরের (অর্জুন চক্রবর্তী) মামাবাড়ি মণিকান্তপুরে। প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো বাড়িতে মুঘল আমলের রেশ। সেই রেশ ধরেই মামা অর্থাৎ হরিনারায়ণ সিংহরায় (‌গৌতম ঘোষ) ভাগ্নের জন্য রেখে গিয়েছেন কিছু সঙ্কেত, সবটাই ধাঁধার ছলে। সেই ধাঁধার সমাধান, দশানন দাঁ’র (রজতাভ দত্ত) লোভ ও হামলা, শেষমেশ বাড়ির মন্দিরে মুঘল রাজপুত্র শাহ সুজার রেখে যাওয়া গুপ্তধনের ডেরায় পৌঁছনো, মোটামুটি এই গল্প। সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে আবির ও তার মামার বন্ধুর মেয়ে ঝিনুকের (ইশা সাহা) পূর্বরাগ, অনুরাগ ও প্রেম-পর্যায় চলে নিজস্ব গতিতে।

Advertisement

তবে গল্প নয়, এই সিনেমার সংলাপই দর্শককে বেশি টানে। সেই সংলাপে কখনও লেগে থাকে বাঙালি হেঁশেলের মাছ ও কষা মাংসের ঝোলের আস্বাদ। কখনও বা থাকে প্রচলিত ফিল্মি গান থেকে বৈষ্ণব পদাবলির অনুষঙ্গ!

অভিনয়ে রজতাভ দত্ত, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীলরা সাবলীল। কিন্তু মেকআপ ছাড়া ‘ব্যোমকেশ’ আবীরের সঙ্গে ‘সোনাদা’ আবীরের পার্থক্য তেমন নজরে পড়ে না। ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও..’ গানে লিপ দেওয়ার দৃশ্যটি ছাড়া উতরে গিয়েছেন ইশা। এই সিনেমার সেরা অভিনেতা অর্জুন। সংলাপ বলা, দেহভঙ্গিমায় ভিতু প্রেমিক ও প্রয়োজনে বুদ্ধিমান বাঙালি ফুটিয়ে তোলায় তিনি সাবলীল। অর্জুনের চরিত্রের সঙ্গে ‘এমকেডি’ (মা কালীর দিব্যি) মার্কা মেসেজ-ভাষা ব্যবহারে রয়েছে মুনশিয়ানা। রজতাভর চরিত্রটি একবগ্গা। সে শুধুই বুঁদ গুপ্তধন
খুঁজে পেতে।

গুপ্তধনের সন্ধানে

পরিচালনা: ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়

অভিনয়: আবীর, ইশা, অর্জুন, রজতাভ, অরিন্দম, গৌতম

৬/১০

সিনেমাটোগ্রাফিতে সৌমিক হালদার দারুণ। আবহ ও সঙ্গীতের ব্যবহারও প্রশংসনীয়।

শেষমেশ সাম্প্রতিক প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে এই সিনেমা থেকে কিছু সামাজিক বার্তাও পড়়তে পারেন দর্শক। যেমন, টাকার লোভে বাড়ি না বিক্রির সিদ্ধান্ত আসলে বাংলায় ছড়িয়ে থাকা ইতিহাসকে সংরক্ষণের কথা বলে। আবার শাহ সুজার গুপ্তধন মন্দিরগর্ভে লুকিয়ে রাখা, তা-ও মনে পড়ায় বাংলার সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন