শুধু আজ বলে নয়। নিজের ছবি, অভিনয়— এ সব ছাপিয়ে অসংখ্য বার তিনি শিরোনামে এসেছেন। তাঁর অন্য পরিচয়ের সুবাদেই। কারণ তিনি যে ‘ব্যাড বয়’! বিতর্ক তাই কখনওই পিছু ছাড়ে না সলমন খানের।
এ বারও সাক্ষাৎকারে নিজের আসন্ন ছবি ‘সুলতান’-এর শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বসেছেন তিনি। একটি বিশেষ দৃশ্যের কথা বোঝাতে গিয়ে সলমন বলেছেন, শ্যুটিং শেষে তাঁর নিজেকে এক জন ‘ধর্ষিত মহিলার মতো’ মনে হতো। এই মন্তব্য প্রচারিত হওয়ার পরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
সলমন কী ভাবে এমন ‘কুরুচিকর’ মন্তব্য করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মহিলা কমিশন। কেন তিনি এমন বললেন, তা জানতে চেয়ে এই তারকাকে চিঠি পাঠিয়ে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছে কমিশন। উত্তর না পেলে তাঁকে ডাকা হবে কমিশনে। সলমনের মন্তব্য নিয়ে আপত্তি তুলে বান্দ্রায় তাঁর বাড়ির বাইরে আজ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন মহিলারা। সোশ্যাল মিডিয়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং মহিলা কমিশন— প্রত্যেকেই বলছে এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত সলমনের।
তবে তারকা নিজে নন, ছেলের হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন তাঁর বাবা, চিত্রনাট্যকার
সেলিম খান। টুইটারে একের পর এক টুইটে তিনি বলেছেন, ‘‘সলমন যা বলেছে, নিঃসন্দেহে সেই তুলনা টানা ভুল। ওর উদ্দেশ্য খারাপ ছিল এমনটা নয়। তবু ওর হয়ে ভক্ত-বন্ধুবান্ধবদের কাছে ক্ষমা চাইছি আমি।’’
ঠিক কী বলেছিলেন সলমন?
মধ্যবয়সি কুস্তিগিরের জীবন নিয়ে তৈরি ছবি ‘সুলতান’ সম্পর্কে জনা পঞ্চাশেক সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন তিনি। ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে আগামী ৬ জুলাই। এই ছবির জন্য নানা রকম প্রশিক্ষণও নিতে হয়েছে তাঁকে। সেই প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে সলমন বলেন, ‘‘শ্যুটিংয়ের সময় ছ’ঘণ্টা ধরে প্রচণ্ড ওজন তোলা, তার পর আবার মাটিতে ছুড়ে ফেলা! বেশ কঠিন ছিল কাজটা। ক্যামেরার জন্য দশ দিক থেকে দশ বার ১২০ কিলোগ্রাম ওজনের এক জনকে আমায় তুলতে হয়েছে। একই ভাবে ফেলতেও হয়েছে। এই কাজটা কিন্তু বাস্তব জীবনে কুস্তির লড়াইয়ে এত বার কাউকে করতে হয় না। তাই শ্যুটিং সেরে রিং থেকে যখন বেরোতাম, নিজেকে কোনও ধর্ষিত মহিলার মতো মনে হতো।’’ এত দূর বলেই নিজেকে সামলে আবার সলমন বলেন, ‘‘মনে হয় এটা বলা...।’’ তিনি কথাটা আর শেষ করেননি, তবে বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেছেন বুঝেই যে সলমন তখন থেমে যান, তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি কারও।
তবে সমালোচনা থামেনি তাতে। মহিলা কমিশনের প্রধান ললিতা কুমারমঙ্গলম বলেছেন, ‘‘এটা শুধু ভুল মন্তব্য নয়। অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা। যে মহিলা ভক্তদের জন্য আজ সলমন খানের এত খ্যাতি, এত অর্থ, তাঁদের কী মনে হবে? পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতাকেই তিনি প্রকট করে তুলছেন। বার বার তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যে মানুষ ক্ষিপ্ত হয়েছে।’’
সলমনের মন্তব্যে দুঃখ পেয়েছেন নির্ভয়ার মা-ও। তিনি বলেছেন, ‘‘ওঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত। কেন উনি এই মন্তব্য করেছেন আমি জানি না। ওঁর মতো মানুষ যখন এ ধরনের কথা বলেন, আমাদের সমাজে তার কী প্রভাব পড়বে?’’ সলমনের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে দাবি তুলেছে শিবসেনাও।
তবে সেলিম খানের মতো সলমনের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলিউডের কেউ কেউ। পরিচালক সুভাষ ঘাই ৫০ বছরের তারকার প্রতি সহমর্মিতায় বলেছেন, ‘‘ও একটা বাচ্চা। ভুলভাল অনুবাদের জন্যই যত বিতর্ক। এক জন মহিলা ধর্ষিত হলে তাঁর যন্ত্রণার সীমা থাকে না। ও সেটাই বোঝাতে চেয়েছে। মহিলাদের ও কতটা সম্মান করে, তা আমি জানি।’’ সলমনের হয়ে সরব হয়েছেন অভিনেত্রী নাগমাও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ছোটবেলা থেকে সলমনকে চিনি। মহিলাদের অপমান করতে ও ওই মন্তব্য করেনি। ক্ষমা চাইবে কি না, এটা ওর সিদ্ধান্ত। তবে সেলিব্রিটি হিসেবে কথা বলার সময় ওর আর একটু সাবধান হওয়া উচিত।’’
‘ব্যাড বয়’-এর শিরোনামে আসা শুরু সেই ১৯৯৯ সাল থেকে। সে বছর রাজস্থানে বিরল প্রজাতির কৃষ্ণসার হরিণ শিকারে নাম জড়ায় তাঁর। তার তিন বছরের মাথায় মুম্বইয়ের রাজপথে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে এক ফুটপাথবাসীকে মারার এবং তিন জনকে জখম করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। দু’টি মামলা এখনও বিচারাধীন। তার পর কখনও প্রাক্তন প্রেমিকা ঐশ্বর্যা রাইকে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ, কখনও বা ঐশ্বর্যার তৎকালীন প্রেমিক বিবেক ওবেরয়ের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়া, কখনও আবার আর এক প্রাক্তন প্রেমিকা ক্যাটরিনা কাইফের জন্মদিনে শাহরুখ খানের সঙ্গে তর্কাতর্কি, যা পরে গড়ায় ঠান্ডা লড়াইয়ে। এখানেই শেষ নয়। একটি পাক চ্যানেলে তিনি বলে বসেন, ২৬/১১ সন্ত্রাস নিয়ে বেশি হইচই হয় কারণ এতে অভিজাতদের আক্রমণের লক্ষ্য করা হয়েছিল।
অতি সম্প্রতি রিও অলিম্পিকসে ভারতের ‘শুভেচ্ছাদূত’ হিসেবে সলমন খানের নিয়োগ নিয়েও আপত্তি ওঠে। বিতর্কের সেই আঁচ নিভতে না নিভতেই ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আলটপকা মন্তব্য করে ফের ঘুম কেড়েছেন ‘ব্যাড বয়’!