শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উপরে অভিমানী অনামিকা সাহা। ছবি: ফেসবুক।
ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা পেরিয়ে গিয়েছে। লাভার পাহাড়ি পথ শুনশান। স্থানীয়রা গভীর নিদ্রায়। বাইরে অঝোরে বৃষ্টি। ভূত থাকুক না থাকুক, পাহাড়ি পথে, ঝোপ-জঙ্গলে জোঁকের প্রচণ্ড উপদ্রব। যখন তখন পা বেয়ে উঠে পড়ছে! সকলের হাতে হাতে নুনের পুঁটুলি! এ রকম পরিবেশে রবিবার রাত ২টো পর্যন্ত শুটিং করলেন অনামিকা সাহা। তিনি অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের শীতের ছবি ‘ভানুপ্রিয়া ভূতের হোটেল’-এ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন।
সোমবার সকালেও ভিজে আবহাওয়া লাভাতে। ফোনের নেটওয়ার্ক ঠিকমতো কাজ করছে না। রাত ৩টের পর হোটেলে ফিরেছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। তাতে কী? অনামিকা সকাল সকাল উঠে পড়েছেন। আনন্দবাজার ডট কমের তরফ থেকে যোগাযোগ করতেই কণ্ঠস্বরে উচ্ছ্বাস।
এই প্রথম উইন্ডোজ় প্রযোজনা সংস্থার ছবিতে কাজ? “শিবুর উপরে আমার কী যে অভিমান! ও তখন খুবই ছোট। আমারও বয়স কম। একটি ছবিতে আমরা অভিনয় করেছিলাম। সেই যোগাযোগ শুরু।” এর পর থেকে পরিচালক জুটির প্রত্যেক ছবির বিশেষ প্রদর্শনে আমন্ত্রিত তিনি। “কয়েক বার প্রিমিয়ারে গিয়েওছি। শেষে একদিন প্রচণ্ড অভিমানে শিবুকে বললাম, তোমাদের ছবিতে না নিলে আমায় আর প্রিমিয়ারে ডেকো না!” তার বেশ কিছু দিন পরেই প্রযোজনা সংস্থার ফোন। অনামিকাকে তারা তাদের প্রথম কৌতুকধর্মী ভৌতিক ছবির জন্য বেছেছেন। বড় পর্দার ‘বিন্দু মাসি’ খুশি। জানিয়েছেন, পরিচালক অরিত্র হলেও ছবির নিবেদক নন্দিতা-শিবপ্রসাদ। তিনি তাতেই সন্তুষ্ট।
অনামিকা মানেই দাপুটে, ধূসর চরিত্র। শোনা যাচ্ছে, এ বার নাকি তিনি অশরীরী ?
কোন চরিত্রে দেখা যাবে সে বিষয়ে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী একটি কথাও বলেননি। তাঁর বক্তব্য, “সাড়ে তিনশো-রও বেশি ছবি করে ফেললাম। এই ধরনের চরিত্র এর আগে কেউ আমায় দেননি। এটুকু বলতে পারি, আমায় দেখে দর্শকদের মনে মায়া, সহানুভূতি তৈরি হবে।” আরও জানালেন, সকলে মিলে কী যে মজা করে শুটিং করছেন। ভূতের ছবি। গা ছমছমে পরিবেশ পর্দায় ধরতে রোজ মাঝরাত থেকে শুটিং হচ্ছে। তাঁরা যে হোটেলে উঠেছেন তার থেকে ৫০ কিলোমিটার নীচে নেমে শুটিং করেছেন রবিবার। “প্রচণ্ড বৃষ্টিতে চারদিক ঝাপসা। পায়ে জোঁক। ইউনিটের ছেলেপুলেরা নুনের পুঁটুলি নিয়ে দাঁড়িয়ে। একটা করে দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হচ্ছে। আমরা নুন দিয়ে পা থেকে জোঁক ছাড়াচ্ছি। আবার পরের শটে চলে যাচ্ছি। বুঝতেই পারিনি কী ভাবে সময় কেটে গিয়েছে।”
সোমবার ‘ভানুপ্রিয়া ভূতের হোটেল’-এর অভিনেতারা পৌঁছে যাবেন স্থানীয় পাইন বনের জঙ্গলে। সারা রাত সেখানে শুটিং। “সারা দিন তাই বিশ্রাম, আড্ডা, খুনসুটি, খাওয়াদাওয়ায় কেটে যাচ্ছে। মনে পড়ে যাচ্ছে পুরনো দিনের কথা। তখনও আমরা এ ভাবেই এক পরিবার হয়ে কাজ করতাম”, স্মৃতি উজাড় করলেন অনামিকা।