বাংলাদেশের অভিনেত্রী মেহেরান সনজানা তসলিমা নাসরিনের বইপ্রকাশ করে হুমকিবার্তা পেলেন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
সদ্য শেষ হয়েছে ৪৮তম কলকাতা বইমেলা। এ বারই প্রথম এ শহরের বইপ্রেমীরা হাতের কাছে পাননি বাংলাদেশকে। কেন বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন হল না কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায়, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে।
কিন্তু কেমন আছে ও পার বাংলা, কেমন আছে ঢাকা?
চলছে ফেব্রুয়ারি, একুশের মাস। এ সময় আবেগ লুকিয়ে রাখতে পারে, এমন বাঙালি কমই আছে সারা বিশ্বে। ঢাকায় শুরু হয়েছে এক মাসের পুস্তক মেলা। কিন্তু সেখানেও এ বার অচেনা আবহ? বাংলাদেশের অভিনেত্রী সনজানা মেহেরানের অভিযোগ, এ বারের বইমেলায় ক্রেতার সংখ্যা কম। শুধু তা-ই নয়, নানা ভাবে তাঁর প্রকাশনা সংস্থাকে পেতে হচ্ছে হুমকি। কারণ একটাই, বিক্রয় তালিকায় রয়েছে তসলিমা নাসরিনের লেখা বই। হুমকি নিয়ে সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছেন প্রকাশক ও অভিনেত্রী সনজানা।
তাঁর দাবি, প্রতি বছরই তসলিমা নাসরিনের বই প্রকাশ করেন তিনি। বাংলাদেশ বইমেলায় ফি-বছর সেই বই বিক্রিও হয়। সে দেশে তসলিমার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় অল্পবিস্তর হুমকিও পেতে হয়। কিন্তু কোনও দিনই তা মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। তাই ডাকাবুকো অভিনেত্রী মাথা ঘামাননি কখনও। কিন্তু এ বছর নাকি একটু বেশিই ভয় পাচ্ছেন।
সনজানা জানিয়েছেন, এ বছরও তিনি প্রকাশ করেছেন তসলিমার ‘চুম্বন’ বইটি। তার পর থেকেই একের পর এক হুমকিবার্তা আসছে তাঁর কাছে। সমাজমাধ্যমে একের পর এক বার্তায় তাঁর দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলার সময়ও গলা কেঁপেছে তাঁর।
সনজানার অভিযোগ, “প্রতি বছর এক মাস ধরে এই মেলা চলে। আমরা সকলে খুব আনন্দ করেই যোগ দিই। কিন্তু এ বছর বেশির ভাগ ক্রেতাই মেলা বয়কট করেছেন। তাঁদের দাবি, এ বারের বইমেলা যেন জঙ্গিদের! আমি মনে করি না, তাঁরা খুব ভুল ভাবছেন।”
কিন্তু কী এমন ঘটেছে? সনজানা গত দু’দিনে বার বার তাঁর সমাজমাধ্যমে উল্লেখ করেছেন, তাঁর স্টল থেকে তসলিমার বই সরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। মেহরানের অভিযোগ, “দেশ জুড়ে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা। নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। হুমকির পর হুমকি আসছে!” ডাকাবুকো সনজানা কি তা হলে ভয় পাচ্ছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে অভিনেত্রী অকপটে জানিয়েছেন, ভয় পাচ্ছেন খানিকটা। তাঁর কথায়, “আমি নারী, আমার সংসার-সন্তান রয়েছে।” সনজানা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সাহসী হয়ে বই বিক্রি করতে গিয়ে তাঁকে হয়তো বইমেলাতেই আক্রান্ত হতে হবে। অবশ্য সে কারণে আপসের পথে হাঁটবেন না। কারণ সনজানা বিশ্বাস রাখেন দেশের মানুষের উপর।
তিনি বলেন, “শুক্রবার তসলিমার দ্বিতীয় বই ‘ছেঁড়া পাতা’ প্রকাশ করতে চলেছি। মুক্তমনাদের কথা না পড়লে মানুষের মন মুক্ত হবে কী করে?” তবে, নিজের দেশের বইমেলার চেহারা বেশ খানিকটা বদলেছে বলে দুঃখপ্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর আফসোস, “এ বছর মনোজ্ঞ পাঠকেরা অনেকেই আসেননি। তাঁরা মনে করছেন, বইমেলার চরিত্র বদলে গিয়েছে। তাঁরা পছন্দের দোকানের বদলে অপছন্দের দোকান দেখছেন বেশি।”
সনজানার উপর চাপ রয়েছে তসলিমার লেখা বই সরিয়ে ফেলার। তাঁর দাবি, যাঁরা তসলিমার ‘চুম্বন’ বইটির বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন, তাঁরা হয়তো জানেনই না ওটি আসলে একটি ছোটগল্পের সংকলন। কোনও উস্কানিমূলক লেখা নয়। তাঁর কথায়, “খুব খারাপ লাগছে যাঁরা বইমেলায় আসছেন, তাঁদের অনেকের মধ্যেই বই সম্পর্কে কোনও আগ্রহ নেই। তাঁরা বেড়াতে আসছেন! নিজস্বী তুলে, খাওয়াদাওয়া সেরে চলে যাচ্ছেন!”