মানসমুকুল পালের আগামী ছবিতেও সামিউল ইসলাম, নূর ইসলাম। ফাইল চিত্র।
একদিকে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ‘হে ভারত, ভুলিও না-নীচজাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই।’ সেই দেশের আনাচে-কানাচে একুশ শতকেও বর্ণাশ্রম, অস্পৃশ্যতা। পরিচালক মানসমুকুল পালের তাই ‘সহজপাঠ’-এ মন নেই!
শোনা যায়, এখনও দেশের অনেক জায়গায় নিচু জাতির প্রতিনিধিরা চণ্ডীমণ্ডপে পা রাখতে পারেন না। তাঁদের ছায়া, তাঁদের ছোঁয়া থেকে দূরে থাকেন সমাজের উচ্চবর্ণের মানুষ। পরিচালক নিজের চোখে দেখেছেন। নিজের কানে শুনেছেন। তিনি বর্ণাশ্রমের যুগের লড়াই নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। যা দেখে তাঁর মনে হয়েছে, বর্ণাশ্রমপ্রথা মুছল কই? সেই প্রথার অস্তিত্ব তাঁকে ব্যথিত করেছে। আনন্দবাজার ডট কম-এর কাছে সেই ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেছেন, “যাঁরা চাইলে সমাজ গড়তে পারেন, সাধারণ মানুষের ভাবনায় পরিবর্তন আনতে পারেন, তাঁরাই যদি সমাজে ভাঙন ধরান, মানুষে মানুষে বিভাজনকে প্রকাশ্যে সর্মথন করেন— তার চেয়ে ভয়ের, চিন্তার এবং দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে?”
‘সহজপাঠের গপ্পো’তে দুই শিশুশিল্পী সামিউল ইসলাম, নূর ইসলামকে নিয়ে পরিচালক মানসমুকুল পাল। ফাইল চিত্র।
এই ভাবনা থেকেই মানসমুকুলের দ্বিতীয় ছবি ‘চণ্ডীকথা’। এ খবর আনন্দবাজার ডট কম জুলাই মাসে প্রথম জানিয়েছিল। ‘সহজপাঠের গপ্পো’র ন’বছর পরে ছবির দুই শিশুশিল্পী সামিউল ইসলাম, নূর ইসলামকে নিয়েই দ্বিতীয় ছবি বানাচ্ছেন। তবে এখন আর তাঁরা শিশুশিল্পী নেই। আরও একবার এঁদের নিয়েই ছবির গল্প এগোবে। দুই বন্ধু জাতিতে ডোম। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া শিখছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন তাঁদের চোখে। তাঁদের সেই লড়াই ‘চণ্ডীকথা’র প্রতি দৃশ্যে, জানিয়েছেন পরিচালক। এ ছাড়া, থাকবেন নতুন অভিনেতা। মুর্শিদাবাদের ১০টি গ্রাম জুড়ে ছবির শুটিং হবে। কাজ শুরু হবে নতুন বছরের শেষে।
সমাজের নিচু শ্রেণির যাপিত জীবন শহরের ক’জন জানেন? কী করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন দুই অভিনেতা?
নূর কথা বলেছেন এই প্রসঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, “আমার আর আলমের চরিত্র মারাত্মক কঠিন। প্রতিটা দৃশ্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। ‘সহজপাঠের গপ্পো’-র যেমন প্রতিটা দৃশ্য মানসকাকু ধরে ধরে শিখিয়েছিলেন, এ বারও সেই ভাবেই আমরা তৈরি হচ্ছি। এত দিনে যা শিখেছি কাকুর থেকে এবং অন্যান্য সিনেমা-সিরিজে অভিনয় করে, যেটুকু অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেখান থেকেই চেষ্টা করব চরিত্রটাকে যতটা সম্ভব ফুটিয়ে তোলার।” অভিনয়ের সঙ্গে আরও একটি নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন দুই অভিনেতা। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ‘চণ্ডীকথা’র লোকেশন খুঁজে বার করা। “ডিরেক্টরিয়াল টিমের আকাশকাকু আর সায়নদার সঙ্গে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে ছবি তুলে মানসকাকুকে পাঠাচ্ছি রোজ। এই কাজটা করতে দারুণ লাগছে”, দাবি তাঁর।