এ বার হাল্কা হতে পারবে বলিউড

কেশব অবশ্য এক জুগাড়ের বন্দোবস্ত করে। স্টেশনে দাড়িয়ে থাকা ট্রেনে বাথরুমের পরামর্শ দেয়। একদিন জয়াকে বাথরুমে বন্দি করেই ছেড়ে দেয় ট্রেন। অপমানিত জয়া পাড়ি দেয় বাপের বাড়ি।

Advertisement

অরিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ১১:২০
Share:

ছবিতে অক্ষয়-ভূমি

টয়লেট: এক প্রেম কথা

Advertisement

পরিচালনা: শ্রী নারায়ণ সিংহ

অভিনয়: অক্ষয়কুমার, ভূমি পেডনেকর, অনুপম খের

Advertisement

৫.৫/১০

উনিশ বছরের প্রিয়ঙ্কা ত্রিপাঠীকে শাশুড়ি বলেছিলেন, ‘বাড়িতে শৌচালয় নেই তো কী হয়েছে? মাঠে চলে যাও’। মাঠে যাননি প্রিয়ঙ্কা। চলে গিয়েছিলেন বাপের বাড়ি। বাস্তবের এই ঘটনার উপর ভিত্তি করেই লেখা ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’। তবে বাস্তবের সঙ্গে মিল বলতে এইটুকুই। বাকিটা পুরোদস্তুর বলিউডি রসে জারানো।

মাঙ্গলিক কেশবের (অক্ষয়কুমার) বয়স পেরিয়ে গেলেও বিয়ে হয় না। বিয়ের ইচ্ছেয় ডগমগ কেশবের সাধের অন্তরায় সংস্কৃতে পণ্ডিত বাবা। এমন অবস্থায় তার দেখা হয় জয়ার (ভূমি পেডনেকর) সঙ্গে। এবং প্রথম দর্শনেই প্রেম। শুরুতে গররাজি হলেও কেশবের নাছোড়বান্দা প্রেমিকসত্তাকে ফেলতে পারে না জয়া। বিয়ে হয় দু’জনের। কিন্তু ফুলসজ্জার পরের দিন ভোররাতে এক অন্য ভারতের সঙ্গে দেখা হয় জয়ার। আসে লোটা পার্টির আমন্ত্রণ। যেখানে ভোরের আলো ফোটার আগেই শৌচকর্ম করতে লোটা নিয়ে দূরে যেতে হয় মহিলাদের। পড়াশোনায় স্বর্ণপদক পাওয়া জয়া তা মেনে নিতে পারে না।

কেশব অবশ্য এক জুগাড়ের বন্দোবস্ত করে। স্টেশনে দাড়িয়ে থাকা ট্রেনে বাথরুমের পরামর্শ দেয়। একদিন জয়াকে বাথরুমে বন্দি করেই ছেড়ে দেয় ট্রেন। অপমানিত জয়া পাড়ি দেয় বাপের বাড়ি। বাকিটা নিশ্চয়ই আর বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। শুরু হয় কেশবের অভিযান। সমাজের বস্তাপচা রীতির বিরুদ্ধে। গ্রামের লোকের মানসিকতার বিরুদ্ধে। আর অবশ্যই সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে। ছবির বাকি অংশ জুড়ে কেশবের সেই লড়াইয়ের কাহিনি। এ লড়াই পরিচিত লড়াই নয়। অ্যাটাচড বাথরুমে অভ্যস্ত শহুরে সমাজের কাছে নতুন। তাই দেখতে মন্দ লাগবে না।

সে দিক থেকে কাহিনিকার জুটি সিদ্ধার্থ সিংহ ও গরিমা ওয়াহলের প্রশংসা না করে উপায় নেই। ভারতের অন্যতম বড় সমস্যা খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করাকে যে ভাবে খোলাখুলি তুলে ধরেছেন, তার জন্য সাধুবাদ প্রাপ্য। পরিচালক শ্রী নারায়ণ সিংহও প্রশংসার দাবি রাখেন। সামাজিক সমস্যাকে বেশ সুন্দর মজার মোড়কে তুলে ধরেছেন পরদায়। তবে সামাজিক বার্তা দিলেই তো আর ছবিকে ভাল বলা চলে না। তা হলে সিনেমা আর তথ্যচিত্রের সঙ্গে তফাতটা হল কোথায়!

‘টয়লেট...’ ছবিতে সেটা মাঝে মাঝে চোখে পড়বে। তবে চিত্রনাট্যের ছোটখাটো খামতি পুষিয়ে দিয়েছে সংলাপ। অক্ষয়কুমারের কমিক টাইমিং নিয়ে নতুন কিছু বলতে যাওয়া ধৃষ্টতা। সংলাপ যোগ্য সংগত দিয়েছে। ছবির গুণ ও দোষ দুটোই অক্ষয়কুমার। দোষটা অবশ্য তাঁর নিজের নয়। সে প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে।

অনেক বছর ধরে একার কাঁধে অনেক সিনেমাকেই বয়ে চলেছেন তিনি। ‘জলি এলএলবি টু’ তার অন্যতম উদাহরণ। এ ছবির ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। ফ্লপে ভরা বলিউড এ বার একটু হাল্কা হতে পারবে। ছবিতে তাঁর চরিত্র কেশব নিখুঁত নয়। আর সেটাকে যথাযথ ফুটিয়ে তুলেছেন অক্ষয়। বান্ধবীর সঙ্গে ব্রেকআপের দৃশ্য তো ছেলেরা টেমপ্লেট করে রাখতে পারে। দেহাতি মস্তিতে যেমন তিনি স্বচ্ছন্দ, প্রতিবাদের দৃশ্যেও। যে মানুষটা বিয়ের পর দিন বউকে লোটা পার্টিতে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের কথা বলে, সে-ই বউয়ের সম্মান রক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পরে সমাজের বিরুদ্ধে। বিশ্বাসযোগ্যভাবে চরিত্রের এই বদলটা অক্ষয় করেছেন।

শুধু তাঁর হিরোইজমটা একটু বেশি হয়ে গেল। মশলা পরিমাণ মতো হলেই ভাল। না হলে মুখে বড্ড লাগে। পেটের পক্ষেও ভাল না। কেশব লুকিয়ে লুকিয়ে মোবাইলে অত ছবি তুলে যাচ্ছে আর কেউ টের পাচ্ছে না! এমনকী নায়িকাও। ভূমির অবশ্য সারা ছবি জুড়ে তেমন কিছু করার ছিল না। শুধু দুটো চোখা সংলাপই তাঁর জন্য বরাদ্দ। সেটুকুতে তিনি ত্রুটিহীন। বাকি ছবি জুড়ে হয় নায়কের যুক্তিপূর্ণ সংলাপে অবাক হলেন না হলে যুক্তিহীন কথার ব্যাকগ্রাউন্ডে সানাই শুনলেন। ভূমির মতো অভিনেত্রীকে পুরোপুরি ব্যবহারই করলেন না পরিচালক।

আর ব্যবহার করেননি ছবি সম্পাদনার কোনও প্রযুক্তি। মনে হল শ্যুটের কোনও দৃশ্য বাদ দেওয়ায় বিশ্বাস করেন না সম্পাদক। পরিচালক এডিটিংয়ের দায়িত্ব নিলে যেমনটা হয় আর কী! ছবির অন্য ত্রুটি হল অতি সরলীকরণ। গোটা ছবিজুড়ে প্রতিষ্ঠা করার আপ্রাণ চেষ্টা, উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম করার জন্য দায়ী সমাজ। গ্রামে টয়লেট তৈরি না হওয়ার যত দোষ আমলাতন্ত্রের। সরকার প্রায় ধোয়া তুলসিপাতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্তুতি ছবির ব্যবসার জন্য ভাল হতে পারে, কিন্তু তাতে ছবির গুণমান নষ্ট হয়। অবশ্য নুন আর গুণ নিয়ে কী যেন একটা কথা আছে না! প্রধানমন্ত্রী যাঁর ছেলের গাল টিপে আদর করেন, তাঁকে তো... যাক গে।

সব মিলিয়ে ছবিটা মন্দ নয়। অজানা সমাজব্যবস্থার কথা আছে। তার সমস্যা আছে। সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা আছে। আর অবশ্য আছেন অক্ষয়কুমার। খিলাড়ি রূপে, জলি এলএলবি রূপেও। তবে ছবি দেখে বেরিয়ে খুব জোরে চাপলে শুধু রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়বেন না। তা হলে ছবির সৎ প্রচেষ্টায় জল পড়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন