দেশে ফিরে বয়ান দেওয়ার জন্য ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়েছেন সময় রায়না। ছবি: সংগৃহীত।
করোনা অতিমারির পর থেকেই তুঙ্গে উঠেছে সমাজমাধ্যমের রমরমা। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন অনেক মানুষ— কেউ সাজতে শেখান, কেউ রান্না। আবার কেউ নেহাতই রসিকতা করেন। কিন্তু এই রসিকতার মধ্যে হাস্যরস কতটা আর কতটা অন্যের প্রতি কটাক্ষ, কতখানি রয়েছে অশালীন ইঙ্গিত তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। সেই বিতর্কেই ঘৃতাহুতি দিয়েছেন এক নেটপ্রভাবী— রণবীর ইলাহাবাদিয়া। আর তারই সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছেন সময় রায়না। রণবীর হাস্যরসাত্মক ভিডিয়ো তৈরি করেন না। বরং তিনি জীবনধারা সংক্রান্ত বিষয়েই নানা মত রাখেন নিজের চ্যানেলে। সময়ের হাস্যরস পরিবেশনের ধরন নিয়ে অবশ্য দীর্ঘ দিন ধরেই রয়েছে বিতর্ক। মাত্রাছাড়া অশালীন মন্তব্য করতে ওস্তাদ তিনি। কিন্তু তাঁর সর্বশেষ অনুষ্ঠানে ‘মা-বাবার সঙ্গম মুহূর্ত’ সংক্রান্ত রণবীরের মন্তব্যের পর নড়ে বসেছে গোটা দেশ।
২ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য এই মামলায় খানিক স্বস্তি দিয়েছে রণবীরকে। কিন্তু সে স্বস্তি তো আইনি। সমাজমাধ্যমের দৌলতে আমজনতার দরবারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই যুবক কি আর সেই যশ ফিরে পাবেন? সন্দেহ রয়ে যাচ্ছে। এর আগেই সময়কে ‘ইন্ডিয়া’জ় গট ল্যাটেন্ট’ অনুষ্ঠানের সমস্ত পুরনো ভিডিয়ো মুছে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, গোটা ঘটনায় তিনি অবসাদগ্রস্ত, খানিক আতঙ্কিতও। যদিও এই সময় তিনি রয়েছেন কানাডায়। সেখানে কৌতুকানুষ্ঠান করছেন পুরোদমে।
সময়ের এক বন্ধু, আর এক ইউটিউবার শ্বেতাভ গঙ্গওয়ার জানিয়েছেন, সময় আতঙ্কে ভুগছেন, হয়ে পড়েছেন অবসাদগ্রস্ত। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শ্বেতাভ বলেছেন, “মানুষটা একেবারে ভেঙে পড়েছে। প্রথম প্রথম যখন বিতর্ক শুরু হয়, তখনও আমি সময়ের পুরনো চেহারাটাই দেখেছিলাম। কিন্তু শেষ বার যে দিন ফোন করলাম, মনে হল ও একেবারে ভেঙে পড়েছে... অবসন্ন, বিষাদগ্রস্ত, ভীত।”
বন্ধুর বিপদে পাশে দাঁড়াতে চাইছেন শ্বেতাভ। তাই নিজের কাজ থেকে সাময়িক বিরতিও নিয়েছেন। তিনি বলেন, “মানসিক ভাবে আমিও বিধ্বস্ত। সময়কে এ ভাবে দেখতে পারছি না। তবে শুধু সময় নয়, রণবীর, অপূর্বা মুখিজা, আশিস চাঁচলানিও একই ভাবে বিপর্যস্ত।”
এই মুহূর্তে সময় কানাডায় রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি মঞ্চ উপস্থাপনা করছেন তিনি। ‘ইন্ডিয়াজ় গট ল্যাটেন্ট’ বিতর্কের প্রেক্ষিতে নিজের দেশে ফিরে বয়ান দেওয়ার জন্য আগামী ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়েছেন তিনি। কিন্তু কানাডায় কি স্বস্তিতে অনুষ্ঠান করতে পারছেন?
সমাজমাধ্যমে শুভম দত্ত নামে তাঁর এক অনুরাগী লিখেছেন, “প্রথম বার ২৫ বছরের ওই যুবককে দেখলাম দারুণ মানসিক চাপে মাথা নিচু করে মঞ্চে আসতে। চোখের নীচে কালি, বিষণ্ণ মুখ, অবিন্যস্ত চুল, মলিন কালো হুডি। মাইকে তিনি প্রথমেই বললেন, ‘আমার আইনজীবীর পারিশ্রমিকটা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ’।” সেখানে নিজের পরিস্থিতি নিয়েও রসিকতা করতে ভোলেননি সময়। তিনি বলেন, “এই অনুষ্ঠানে অনেক সময় দর্শকের মনে হতে পারে আমি খুবই মজার কথা বলব, কিন্তু ঠিক সেই সময় আপনারা এক বার ‘বেয়ার বাইসেপস’ (রণবীরের চ্যানেল)-এর কথা মনে করে নেবেন।”
যদিও এই রসিকতাকে মোটেও ভাল চোখে দেখছে না সুপ্রিম কোর্ট। ২ মার্চের শুনানিতে রণবীরকে শর্তসাপেক্ষে তাঁর কিছু পডকাস্ট ফিরিয়ে আনার অনুমতি দেওয়া দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু সময়ের নাম না-করে সে দিন বিচারপতি স্পষ্টই বলেন, “এই যুবসম্প্রদায় বড্ড বেশি সপ্রতিভ হয়ে উঠেছে। তাঁরা ভাবছেন আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এঁদের মধ্যে একজন কানাডা গিয়ে নানা কথা বলছেন। জানেন না, এই আদালত কী করতে পারে। তবে আমরা বুঝি, বয়স কম বলেই কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে না।”