বন্ধুবিয়োগ...
বয়সের পার্থক্য মাত্র চার বছরের। সহ-অভিনেতা, বন্ধু শশী কপূরের প্রয়াণের খবরে স্বাভাবিক ভাবেই স্মৃতিমেদুর অমিতাভ বচ্চন। মঙ্গলবার রাত সওয়া একটা। নিজের ব্লগে শশীর স্মৃতিচারণায় কলম ধরেছিলেন বিগ বি। অমিতাভের লেখার প্রতিটি লাইনে উঠে এসেছে, তাঁদের বন্ধুত্ব, সম্পর্ক এবং বন্ধুবিয়োগের যন্ত্রণা।
লেখার শুরুতেই বলিউডের সবচেয়ে ‘চার্মিং’ এবং সুদর্শন পুরুষ হিসেবে শশী কপূরের প্রশংসা করেছেন অমিতাভ। লিখেছেন, ‘বলিউডে পা রাখার আগে মনে হয়েছিল,যেখানে ইন্ডাস্ট্রিতে এত সুদর্শন সব পুরুষ রয়েছেন,সেখানে কোনওভাবেই আমার পক্ষে দর্শকের মনে দাগ কাটা সম্ভব নয়।’ শশীজির চেহারা নিয়ে অমিতাভের বর্ণনা, ‘দুনিয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, একটি মার্সিডিজ স্পোটর্স গাড়ির গায়ে হেলান দেওয়া সুদর্শন পুরুষটি যেন সকলের থেকে আলাদা। তিনি পৃথ্বীরাজ কপূরের ছেলে,রাজ এবং শাম্মি কপূরের ছোট ভাই। এ রকম একজন ব্যক্তিত্বের পাশে আমার নিজেকে নেহাৎই নগণ্য মনে হয়েছিল’।
এর পর শশী কপূরের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হওয়ার দিনের কথা শেয়ার করেছেন অমিতাভ। পর পর এসেছে, তাঁদের একাধিকবার দেখা হওয়ার মূহূর্ত, নম্র স্বভাব, চুলের স্টাইল, কথা বলার ভঙ্গি নিয়ে নানান স্মৃতিকথা।
অমিতাভ লিখেছেন, ‘...তাঁর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল।ব্যক্তিগত আদানপ্রদান, কাজের জগতের আলোচনা এবং সব শেষে পারিবারিক যোগ তৈরি হয়েছিল...’।
১৯৭৫ সালে যশ চোপড়ার ‘দিওয়ার’ ছবির একটি দৃশ্যে অমিতাভ ও শশী। ছবি— সংগৃহীত।
অমিতাভের মনে হয়েছে, স্ত্রী জেনিফার কেন্ডেলের মৃত্যুর পর থেকেই যেন বেশি ভেঙে পরেছিলেন শশী। বিগ বি লিখেছেন, ‘এর আগে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর কয়েক বার আমি ওঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি এ ভাবে কোনওদিন তাঁকে দেখতে চাইনি। আমি কোনওদিন আমার অত সুপুরুষ এক জন বন্ধুকে সমাধি হতে দেখতে চাইনি, যেভাবে ওঁকে শেষ বার হাসপাতালে দেখেছিলাম... আমি আজও পারিনি।’
আরও পড়ুন, জীবনে কোনও রবিবার কাজ করেননি শশী
আরও পড়ুন, ‘তোমাকে মিস করব’, শোক ছাড়িয়ে গেল সিনে দুনিয়ার গণ্ডি
শুরুর মতো লেখার শেষদিকে রুমি জাফরির লেখা দু’টি লাইন শেয়ার করেছেন অমিতাভ। যার বাংলা তর্জমা, ‘কত দিন আমি জীবনের এই দামি বইটিকে সংরক্ষণ করে চলব; বইটির পাতাগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে...’।
ব্লগের একেবারে শেষে অমিতাভ জানিয়েছেন, শশী কপূর তাঁকে আদর করে ‘বাব্বুয়া’বলে ডাকতেন। অমিতাভের উপলব্ধি, শশী তাঁর শেষযাত্রায় ‘বাব্বুয়া’কে এক বিশাল স্মৃতির সাগরে ফেলে রেখে জীবনের অনেক অজানা, অদেখা মুহূর্তকে নিজের সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন।