সুমন মুখোপাধ্যায়।— ফেসবুকের সৌজন্যে।
• পঁচিশ বছর পরে আবার মঞ্চের আলোয় সুমন মুখোপাধ্যায়। অন্ধকারের নির্দেশনা থেকে এ বার নিজে আলোকিত মঞ্চে! হঠাৎ মঞ্চের আলো মাখতে ইচ্ছে হল যে!
আমি অভিনেতার কাজ ছেড়েই দিয়েছিলাম। সেই একটু আধটু ‘মারীচ সংবাদ’-এ মেরি বাবার গান গেয়েছি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল, বাংলা থিয়েটর থেকে অনেক দিন বিচ্ছিন্ন, শহর ছাড়ার জন্য। এ বার কি ফিরব? নীল তখন পাগলের মতো খুঁজছে তার এই নাটকের এক চরিত্রকে। তখন আমি বললাম দেখ, তোরা যদি আডজাস্ট করে করতে পারিস আমি অভিনয় করব। আমি মুম্বই থেকে এসে এসে ১২-১৪ ঘণ্টা করে রিহার্সাল করেছি। এখানকার অভিনেতাদের থেকে আগেই সময় নেওয়া হয়েছিল। এ ভাবেই তিনটে ফেজে কাজ হয়ে গিয়েছে। আসলে এটা তো একটা মিউজিক্যাল। বাদ্য, নৃত্য অনেক কিছু আছে এখানে।
• খুব এক্সাইটিং লাগছে, একটু বিষয়টা বলুন না...
নীল খুব অন্য রকম ভাবে নাচ আর গানের বিষয়টা ধরছে এখানে। আসলে ১৯৯৪-এ আমার বাবা অরুণ মুখোপাধ্যায় ‘দুখিমুখী যোদ্ধা’ বলে এই নাটকটা করেছিলেন। এটা বিদেশি নাটক ‘ম্যান অব লামাঞ্চা’ থেকে অনুবাদ করা। ব্রডওয়ে-তে খুব সফল নাটক এটি। ছবিও হয়েছে। বাবা যখন নাটকটা করেন, আমি তখন অনেকগুলো গানের সুর দিয়েছিলাম। সেগুলোও এ বার ফিরছে।
• কিন্তু নামবদল হল কেন?
প্রথম কথা ‘দুখিমুখী যোদ্ধা’-র যে প্রেক্ষিত ছিল, সেটা এখন অনেকটাই বদলে গেছে। তাই ‘ডন’ নাম দেওয়া হল। সমকালীন সময়কে আমরা এই নাটকের শরীরে ধরতে চাইছি। আজকের মানুষের কথা এখানে বলা হবে। নীলকে আমি খুঁচিয়েছি আজকের রাজনৈতিক বিভ্রাট, সমাজ, সময় নিয়ে কথা বলতে।
• আজকের রাজনৈতিক বিভ্রাটের সত্যতা কি এ নাটকে প্রকাশ্যে আসবে?
আসলে এই নাটকে আগে থেকে কিছু আরোপ করতে হয়নি। আমি বরাবরই তো নাটকের মধ্যে দিয়ে সমকালের কথা বলেছি অকপটে, সেটা বিভ্রাট হলে সেটাও বলব। সমঝতা তো করিনি কক্ষনো।
আরও পড়ুন, ওই চাহনি, ওই হাসি এবং উত্তমকুমার
• কী রকম রাজনৈতিক বিভ্রাট যদি একটু বলা যায়…
এই নাটকটা খুব প্রকট ভাবে শুরু হচ্ছে। ১৯৮০তে যেমন সাফদার হাসমি স্পষ্ট বক্তব্যের জন্য খুন হন, সে রকমই ২০১৭-য় এক জন শিল্পী রাস্তায় দাঁড়িয়ে এমন কিছু কথা বলছেন এই নাটকে, যেখানে রাষ্ট্র আর ধর্ম অপমানিত হচ্ছে। তাঁকে জেলে পুরে দেওয়া হচ্ছে। সে তখন জেলে গিয়ে কয়েদিদের দিয়ে নাটক করাচ্ছে। উজ্জীবিত করছে। মানে নাটকের মধ্যে নাটক শুরু হচ্ছে। এই আঙ্গিকটা খুব মজার। অন্য একটা বয়ান তৈরি হচ্ছে নাটকের মধ্যেই।
• এই বয়ান তো আস্ত একটা পরিবারের। আপনি আবার চেতনায় ফিরলেন তা হলে?
হ্যাঁ, বাবার অনূদিত নাটক করছি আমরা। বাবা এখন তিরাশি। কিন্তু ছোট একটা চরিত্রে অভিনয় করছেন। নীল আমার পরিচালক।
• সমস্যা হচ্ছে না? মানে বলতে চাইছি দুই ভাই, আবার দুই পরিচালক! মতের অমিল নিশ্চয়ই হচ্ছে!
বাবা, বিভাস চক্রবর্তী আর আমি ছাড়া কারওর নির্দেশনায় কাজ করিনি আগে। কিন্তু এখানে কতগুলো ব্যাপার আছে। দেখুন, নাটকটা ভাল না লাগলে প্রথমেই আমি না করতাম। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যখন অভিনেতা হিসেবে কাজ করব, তখন আমার পরিচালকের চেয়ারটা আমি নিজেই সরিয়ে রাখলাম। পরিচালকের মাথা যদি এখানে আমার সারা ক্ষণ কাজ করে, আমি অভিনয় করতে পারব না। এটা জানি আমি।
• পরিচালকের মাথা কখনও চাড়া দিয়ে ওঠেনি বলছেন?
হ্যাঁ। উঠেছে। পরামর্শ আমি অবশ্যই দিচ্ছি, কিন্তু সেটা যদি নীল পরিচালক হিসেবে গ্রহণ না করে তা হলে আমার রেগে যাওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে খুব সুন্দর সাজাচ্ছে ও, আমাদের রসায়নটা ভাল কাজ করছে। এই নাটকে তিন প্রজন্ম আসছে। বাবা, আমরা দুই ভাই, নীলের ছেলে, ও গিটারিস্ট, আর নীলের স্ত্রী— আমরা সব্বাই মিলে কাজ করছি।
স্বস্তিকার সঙ্গে খোশ মেজাজে।— ফেসবুেকের সৌজন্যে।
• তা হলে সুমন মুখোপাধ্যায় বিরোধিতা ভুলে আবার চেতনায়?
নাহ্। এটা ঠিক নয়। আমি কোনও বিরোধ নিয়ে চেতনা থেকে সরে যাইনি। দু’জন পরিচালক এক দলে থাকলে দু’জনেরই কাজের সময় কমে যায়। আমি এটা বিশ্বাস করেছিলাম। তাই তৃতীয় সূত্র করেছিলাম। চেতনার সঙ্গে তৃতীয় সূত্রের কোন বিরোধিতা ছিল না কিন্তু। আমার সঙ্গে কেউ কেউ এসেছিলেন সেটাকে বলা হয়েছিল, যে আমি দল ভাঙালাম! এটা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। বিরোধ ছিল না বলেই আজ আমি আবার ফিরছি আর মনের মধ্যে একটা প্রশান্তিও তৈরি হয়েছে।
• মেক আপ, আলো, হল ভর্তি দর্শক— নার্ভাস লাগছে না?
অন্ধকারে থেকেছি। সামনের আলোকিত মঞ্চে তখন অভিনেতাদের শব্দ, রং, উন্মাদনা— আমি অন্ধকার থেকে দেখেছি। কলকাঠি নেড়েছি। এ বার নিজে রং মাখব, গায়ে এসে পড়বে মঞ্চের গন্ধ, আলো বেশ— নস্ট্যালজিক!
• তা হলে কি সুমন কলকাতায় ফিরছেন?
না এই মুহূর্তে হবে না। আমার সামনের সব কাজ মুম্বই ঘিরে। মুম্বইতে খুব শিগগিরি হিন্দি নাটক করব। ওয়েব সিরিজের কাজ হবে।
আরও পড়ুন, ২০১৭ সালে বি-টাউনে ঝড় তুলেছিল অন্য স্বাদের এই ছবিগুলি
• ওয়েব সিরিজের কথা কেন ভাবছেন?
যে বিষয় নিয়ে কাজ, সেটা দু’ঘণ্টার পরিসরে হবে না। এক্ষুনি বলছি না, বিষয়টা পাকা হলে আপনাকেই বলব। এক জীবন্ত চরিত্র নিয়ে কাজ!
• কাশ্মীর নিয়ে কাজ করার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পুরস্কার পেলেন তো?
হ্যাঁ। শ্রীনগরে গিয়ে বেশ কিছু দিন কাজ করে এলাম।
• আর টেগোর স্কলারশিপের কাজ কত দূর?
আমি দুটো টেক্সট বেছেছি। দেবেশ রায়ের ‘বরিশালের যোগেন মন্ডল’ আর একটা রবীন্দ্রনাথের ‘যোগাযোগ’। প্রথমটা নাটকের চেহারা দেওয়ার ইচ্ছে আছে, পরেরটা ছবি। আসলে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে বাঙালির কর্তৃত্ব করার বিষয়টা আজও এত প্রবল, চাইলেও বেশি কিছু করা যায় না। জাতির সময় লাগবে এই পুরনো বোধ থেকে বেরিয়ে আসতে। তবে, কলকাতা সুমন মুখোপাধ্যায়কে গড়েছে। মাঝে মাঝেই ফিরব। আমার ছেলেও বড় হচ্ছে। ও তো বইয়ের পোকা। ফরাসি শিখছে। গিটার শিখছে। দেখা যাক। শেষে কি করে!
• ২৯ এপ্রিল প্রিমিয়ারে ব্রাত্য বসু, কৌশিক সেন আসছেন?
আমি অতিথি তালিকা তৈরি করিনি। তবে ব্রাত্য আর কৌশিকের সঙ্গে প্রায়ই মুম্বই থেকে ফোনে কথা হয়। ওরা আমার বন্ধু।
আরও পড়ুন, ‘বিয়ে সুরজিত্ আর পরমেশ্বরী কনীনিকাকে অনেক পরিণত করেছে’
• আর বান্ধবীর কী খবর?
এই প্রশ্নটা আবার কোথা থেকে এল?
• আমি সোজাই জানতে চাই। স্বস্তিকার সঙ্গে সম্পর্ক আছে, না নেই?
নাহ্ প্রশ্নটা এ রকম নয়। আছে বা নেই ওই রকম কোনও প্রসঙ্গের মধ্যেই এখন নেই। দু’জনে দু’শহরে থাকি। ফলে একটা শারীরিক দূরত্ব তো তৈরি হয়েই যাচ্ছে। অতিক্রম করা যাচ্ছে না। কাজের জন্য। আমরা দু’শহরে। দু’জনের কাজই বেড়ে চলেছে। দেখাসাক্ষাৎ এতটাই কমে গেছে! কী আর বলব!