কফি শপ বা অলিপাবে বসার প্ল্যান নাকচ করা হল কারণ সেখানে এত সেলফি তোলার অনুরোধ আসবে যে ইন্টারভিউটাই হবে না। অগত্যা ফোরাম মলে মোহিতো আর ফিশফ্রাই। সেখানেও অবশ্য সেলফি তোলা হল বেশ কয়েকটা। মেয়োনিজ সসে ফিশ ফ্রাই ডুবিয়ে শুরু হল আড্ডা...
• চিন্তা করবেন না, এই রেস্তোরাঁয় ডেবিট কার্ড চলে...
(হাসি) কী কাণ্ডটাই না চলছে তিন সপ্তাহ ধরে।
• আপনি খুব একটা খরচা করেন এমন অভিযোগ তো নেই। ডিমনিটাইজেশনের পর কী করছেন?
(হাসি) ব্যাপারটা পুরোটা বুঝতেই পারছি না, তাই কমই খরচ করছি। তার ওপর সে দিন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচের পর থেকে আমি বাড়িতেই থেকেছি মাত্র দু’দিন। এতদিন আউটডোরে ছিলাম, কালকে গোয়া চলে যাচ্ছি ইন্ডিয়ান প্যানোরমা-তে ‘বাস্তুশাপ’য়ের স্ক্রিনিংয়ে। ওখান থেকে কলকাতা ফিরলে ব্যাপারটা পুরোটা বুঝব।
• এমনিতে আপনি ডিমনিটাইজেশনের পক্ষে না বিপক্ষে?
যা হয়েছে সেটা ভাল কিন্তু ইমপ্লিমেন্টেশনটা খারাপ। কোনও ডাক্তার যদি আমাকে সিগারেট ছেড়ে দিতে বলে, তা হলে উইথড্রল সিম্পটম হলে তার দায়িত্বটাও তো ডাক্তারকে নিতে হবে। এখানে সিগারেট তুমি কেড়ে নিলে, কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই আর ‘উইথড্রল’ কি ‘উইথড্রল সিম্পটম’ নিয়ে তেমন কোনও রকম ব্যবস্থা তুমি রাখছ না (হাসি)। এটা ঠিক নয়...
• ‘উইথড্রল’ কি ‘উইথড্রল সিম্পটম’টা কিন্তু ভাল কম্পারিজন...
ঠিক কি না বলুন? আর আমি তো ব্যোমকেশ বক্সী। টাকা পোড়ানোটাই তো ‘আদিম রিপু’র শেষ সিন, তাই আমার ব্যাপারটা বেশ লেগেছে। কাকে যেন বলছিলাম, ব্যোমকেশের ‘অর্থমনর্থম’ করার সেরা সময় এটা (হাসি)।
• সে দিন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। শুনছিলাম, ‘বিসর্জন’ ছবির আউটডোরে গত কুড়ি দিনে আপনার খুব ধকল গেছে।
হ্যাঁ, তা একটু হয়েছে বইকী।
• এটা নাকি বেশি হয়েছে কারণ জয়া এহসানের সঙ্গে প্রচুর কাদা মাখামাখির সিন ছিল, তাই?
(হাসি) তা একটু ছিল। তবে জয়ার সঙ্গে আমার তিনটে ছবি করা হয়ে গেল। তাই এ সব নিয়ে ভাবছি না।
• জয়া এহসানের সঙ্গে তো আপনার এখন খুব ভাব? কখনও কাদায় মাখামাখি, কখনও পাহাড়ে আউটডোর।
(হাসি) এটা যতটা না হয়েছে, তার থেকে বেশি ছড়াচ্ছে কৌশিকদা। আমরা কি শুধু এটা নিয়েই কথা বলব?
• না, না, অন্য প্রসঙ্গে যাচ্ছি। আচ্ছা প্রায়ই শুনি, আবীর চট্টোপাধ্যায়ের নাকি আনন্দplus-এর ওপর প্রচুর রাগ, ক্ষোভ, অভিমান। একটু বলবেন, কেন সেটা?
সিরিয়াসলি কোনও রাগ নেই। তবে আগের বার যখন ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম, তখন আমার মনে ক্ষোভ ছিল। কিন্তু রাগ বা অভিমান তো তাদের ওপরই হয়, যাদের কাছে এক্সপেক্টেশনটা বেশি থাকে।
• সেটাই তো জানতে চাইছি, কীসের রাগ? বহু অভিনেতার থেকে তো আপনাকে বেশি দেখা যায় আনন্দplus-এর পাতায়...
সেটা ঠিকই, আই অ্যাডমিট। আসলে একটা সময় আমার মনে হয়েছিল, আমার কাজগুলো তেমন হাইলাইট করা হচ্ছে না। এটা আমারই ইমম্যাচিওরিটি ছিল। আমি নিজের দিকটাই দেখছিলাম স্বার্থপরের মতো। আজকে বুঝি, আপনাদেরও একটা হিসেব থাকে। তবে রাগ-অভিমান একটু থাকা ভাল, না হলে রোবট হয়ে যাব।
• এটা তো অভিনেতা হিসেবে আপনার দারুণ ফেজ চলছে। পরমব্রত-শাশ্বতদের অনেকটাই টেক্কা দিয়ে দিয়েছেন গত এক বছরে।
যিশু কিন্তু দারুণ কাজ করছে। ওর কাছেও সলিড কিছু প্রোজেক্ট আছে।
• মানে পরমব্রত, শাশ্বত, ঋত্বিক নন। যিশু আপনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী?
না, না, সবাই কম্পিটিটর। কিন্তু ইয়েস, যিশু এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বড় কম্পিটিটর। তবে এটা একটা কন্সট্যান্ট জার্নি। আজকে আমার কাছে কী যিশুর কাছে ভাল প্রোজেক্ট আছে, কালকে অন্য কারও কাছে থাকবে। তাই প্রতি পাঁচ কিলোমিটার অন্তর নিজে কতটা এগোলাম না দেখে, প্রতি পাঁচশো কিলোমিটার পর কোথায় এলাম সেটা দেখা বোধহয় বেশি ইম্পর্ট্যান্ট।
• আপনি সেই হিসাবটা রাখেন?
অবশ্যই রাখি। আর একটা জিনিস বুঝেছি, আমাদের এখানে কাজের সময়টার থেকে ফাঁকা সময়টায় কী করলাম, সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ওই ফাঁকা সময়টায় চলে ধৈর্যের পরীক্ষা। হয়তো এক মাস ভাল কাজ এল না, দু’মাস এল না, তিন মাস এল না... ঠিক এই সময়টায় ভুল করে বাজে প্রোজেক্টে সাইন করে ফেলি আমরা অভিনেতারা। ওই সময়টায় দেখেছি ধৈর্যটা ভাইটাল হয়ে ওঠে।
‘ঠাম্মার বয়ফ্রেন্ড’। ঠাম্মা আর তাঁর বয়ফ্রেন্ড।
• কিন্তু আজকে তো আপনার কাছে এক দিকে ‘ব্যোমকেশ’ অন্য দিকে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বিসর্জন’, সঙ্গে ‘ঠাম্মার বয়ফ্রেন্ড’য়ের মতো অফবিট ছবি, আবার অনীক দত্ত...
শুধু আমারটাই দেখছেন! যিশুর কাছে কমলদার (কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়) ছবি, শিবুদা (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) আর নন্দিতাদির (নন্দিতা রায়) ‘পোস্ত’। এ বার পুজোর সময় যিশুর ‘ব্যোমকেশ’ ভাল চলল...
• অপোনেন্টকে তো প্রায় ম্যান মার্কিংয়ে রেখেছেন দেখছি!
(হাসি) ওইটুকু তো রাখতেই হবে। কে কোথায় রয়েছে সেটা সাইডভিউ মিরর কী রিয়ারভিউ মিররে দেখব না? আমিও শিওর যিশুও দেখছে (হাসি)। তবে ‘পোস্ত’র ব্যাপারে বলি, শিবুদা আমাকে দু’দিনের জন্য চেয়েছিল ছবিটায়। আমি ওকে বলি, প্লিজ, আমি দু’দিনের কাজ চাই না, আমাকে ২৩-২৪ দিনের কাজ দাও। অনেক ‘গেস্ট’ অ্যাপিয়ারেন্স করেছি, এ বারে একটু ‘হোস্ট’ হতে চাই (হাসি)। শিবুদাও খুব মজা পেয়েছিল শুনে।
• আপনার লেটেস্ট রিলিজ ‘ঠাম্মার বয়ফ্রেন্ড’য়ের প্রসঙ্গে আসছি। ছবিটা কি করলেন শুধুমাত্র সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করতে পারবেন বলে?
না, আমাকে যখন পরিচালক অনিন্দ্য ঘোষ এবং প্রযোজক কান সিংহ সোধা গল্পটা বলেছিল, তখনও আমি জানতাম না সাবুপিসি ছবিটা করবে। আমার কনসেপ্টটাই দারুণ লেগেছিল।
• এখানেই কি আপনি অনেককে পিছিয়ে দিচ্ছেন? এই যে নতুন কনসেপ্ট দেখতে পাওয়া, সেটা আপনার সমসাময়িক অনেকেই পাচ্ছেন না।
সেটা আমার সমসাময়িক যারা, তারা বলতে পারবে। কিন্তু এই ছবিগুলোতে আমি বিশ্বাস করি। আমি ‘ব্যোমকেশ’ করছি, যেটা যথেষ্ট সিরিয়াস। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে শুধু সিরিয়াস, ভারী ভারী গল্পের পাশাপাশি এমন ছবিও থাকা দরকার যেগুলো পুরো পরিবারের সঙ্গে বসে দেখা যাবে। যাকে বলে ‘হোলসেল এন্টারটেনমেন্ট’। ‘ঠাম্মার বয়ফ্রেন্ড’ আমার কাছে সেই রকম একটা ছবি।
আর সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করা তো পুণ্যের ব্যাপার। আরে, উত্তমকুমার ওঁর অভিনয়কে সমীহ করতেন। সৌমিত্রজেঠু বলেছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের সামনে উনি সাবধানি হয়ে যেতেন। এই সুযোগ কেউ ছাড়ে!
• কী শিখলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে?
শিখলাম, প্রত্যেকটা সিনের ব্যাপারে খুঁতখুঁতানিটা কোন লেভেলে যেতে পারে। আজকে ওঁর কাউকে কিছু প্রমাণ করার নেই কিন্তু ওঁর ডেডিকেশনটা কল্পনা করতে পারবেন না। এবং সঙ্গে ওই এনার্জিটা। ম্যাজিকাল।
• একটা উদাহরণ দিন প্লিজ।
ধরুন রিহার্সাল হচ্ছে। সিনটায় হয়তো ওঁকে উঠে দাঁড়াতে হবে। রিহার্সালের সময় দেখছি, উঠতে গিয়ে সাবুপিসির পায়ে একটা ব্যথা হচ্ছে, যেটা মুখে ফুটে উঠছে। কিন্তু ও মা, যেই শটটা শুরু হল, দেখলাম ওই ব্যথার এক্সপ্রেশনটা হাওয়া। ওই ব্যথাটা কিন্তু সাবুপিসি হিসেবে রেখেছিলেন, এবং শট চলাকালীন ঠিক লুকিয়ে কিছু একটা ধরে তড়াক করে উঠে পড়লেন। এই না হলে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়! ওঁর বিষয়ে আর একটা জিনিস বলব কি না, ভাবছি... (হাসি)
• বলুন বলুন!
সেটা সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের সেন্স অব হিউমার। আমরা শিশু তার সামনে...
• কী রকম?
একদিন বিশ্বজিৎদার (চক্রবর্তী) সঙ্গে আমরা সবাই আড্ডা মারছি। আমি, অরুণিমা, সাবুপিসি। এমনি কথা হচ্ছে, বিশ্বজিৎদা নাকি দারুণ হাত দেখতে পারে।
যেমন আড্ডা চলার চলছে, কেউ বলছে বিশ্বজিৎদা শুধু মেয়েদের হাত ভাল করে দেখে... ইত্যাদি ইত্যাদি। পুরো সময়টা ধরে সাবুপিসি চুপচাপ শুনছিলেন আমাদের কথাবার্তা।
হঠাৎ দেখি, আড্ডা থামিয়ে, মাথা নিচু করে বলছেন, “আচ্ছা বিশ্বজিতের বুঝি এখনও হাত ব্যবহার করতে হয়’’ (হাসি)।
বিশ্বাস করুন, কোনও এক্সপ্রেশন ছাড়া এটা বলে সাবুপিসি আবার চুপচাপ নিজের কাজ করতে লাগলেন। তার পর আমাদের হাসি বোধহয় দশ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা গেছিল।
• আবার একটু রাগ-অভিমানের ফেজ-এ ফিরছি। শুনছিলাম, আপনার নাকি একটা দেব হ্যাংওভার আছে। অনেকেই বলেন, আপনি মনে করেন আপনি দেবের থেকে ভাল, কিন্তু মিডিয়া দেবের প্রতি পার্শিয়াল।
না, পার্শিয়াল মনে হয় না। তবে দেব তো এখন আমাদের, মানে আমি পরম, যিশুর মতো ছবি করছে আজকাল। ‘জুলফিকার’য়ে ভাল করেছে শুনলাম। কিন্তু এখনও দেবের ঘরানাটা আলাদা। ঘরানাটাই যখন আলাদা, তখন হ্যাংওভার কী করে থাকবে?
• ব্যক্তিগত জীবনে তো আপনি দেবের থেকে জিতের বেশি ক্লোজ।
হ্যাঁ, সেটা ঠিক, জিৎ আমার ভাল বন্ধু।
• কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় সে দিন জয়ার সঙ্গে আপনার কাদা মাখামাখির কথা ছাড়াও বলছিলেন, আজকাল আপনার কনসেনট্রেশন নাকি সাঙ্ঘাতিক বেড়ে গেছে। সেটে ঢোকার পর থেকে আপনি টপ ব্যাটসম্যানের মতো কনসেনট্রেট করেন।
আমি মেথড অ্যাক্টর নই। কিন্তু যখন স্ক্রিপ্ট শুনি, কী শ্যুটিংয়ের দু’দিন আগে, আমি একটা জোনে চলে যাই।
যে চরিত্রটা আমি করছি সেই চরিত্রটার সঙ্গে আমার নিজের কী মিল আছে, সেটা খুঁজে বার করি। এবং একবার সেই চরিত্রটার সঙ্গে নিজের মিল পেয়ে গেলে আমি সেটা নিয়ে ভাবি। সেটাই আমার কনসেনট্রেশন।
• এক সময় আপনাকে ‘ডিসেন্ট অ্যাক্টর’ বলা হত। কিন্তু এ রকম কনসেনট্রেশনের জন্যই কি এখন বলা হয়, আবীর ‘ইভল্ভড অ্যাক্টর’?
সেটা আমার পরিচালকরা বলতে পারবেন। তবে অভিনয় নিয়ে কৌশিকদা কী অরিন্দমদার (শীল)সঙ্গে আমার অনেক আলোচনা হয়। সেটাতে অভিনয়টা ইমপ্রুভ করছে আমার।
এখানে আর একটা কথা বলি, কৌশিকদার সঙ্গে কাজ করে, আর কী হয় আমি জানি না, আমার মনের আরাম হয়। আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে মানুষ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে নিজের অনেক মিল খুঁজে পাই। আমার স্ত্রী নন্দিনী তো বলেই দিয়েছে, আই অ্যাম ইন লাভ উইথ কে জি। এটা পুরো প্রেম।
• প্রেমের প্রসঙ্গ যখন তুললেন, তাই এই প্রশ্নটা করতেই হবে। সবাই বলে, হিরোইনদের ব্যাপারে আপনার যে একটা গুডবয় ইমেজ আছে...
ইমেজ কী? ওটাই তো সত্যি...
• না, অভিযোগটা হচ্ছে, যতটা গুডবয় আপনাকে বলা হয়, ততটা গুডবয় আপনি নন।
একদম বাজে কথা। হিরোইনদের সঙ্গে ক্রসচেক করে নিতে পারেন। আর এখানে এত বাঘা বাঘা সাংবাদিক রয়েছে, প্রচুর গোয়েন্দা রয়েছে। কিছু হলে আপনারা ঠিক জেনে যেতেন। আর আমার সঙ্গে সব হিরোইনের দারুণ ভাব।
• নুসরত?
নুসরত ইজ শিয়ার বিউটি। তবে নুসরত যদি বকতে শুরু করে, ও কিন্তু নন স্টপ পাঁচ ঘণ্টা বকতে পারে। ওর টুইটার হ্যান্ডলটা একদম ঠিক আছে। নুসরতচির্পস। সারা দিন বকবক করছে।
• তবে আবীর চট্টোপাধ্যায় যেটা করতে পারেন সেটা অনেকেই করতে পারেন না কিন্তু!
যেমন?
• যেমন মিমি চক্রবর্তীকে উইশ করে টুইটারে অম্লান বদনে লিখে দিলেন ‘আই লাভ ইউ’, এটা যিশু সেনগুপ্ত পারবেন না।
যিশু লিখতেই পারে, তার পর কী হবে আমি জানি না (হাসি)। তবে মিমির সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক, তাই লিখেছি। মিমি বলেই লিখেছিলাম। সব হিরোইনের ব্যাপারে লিখব না।
• আগের বার যখন আপনার ইন্টারভিউ করেছিলাম, বেশির ভাগ প্রশ্ন ছিল গোয়েন্দা নিয়ে। এতক্ষণে গোয়েন্দা নিয়ে একটাও প্রশ্ন হল না।
ভাল তো সেটা। আবীর মানেই গোয়েন্দা এই ইমেজটা ভাঙতে পেরেছি তার মানে।
• শুনেছিলাম সব্যসাচী চক্রবর্তী ফেলুদা হওয়াতে আপনি নাকি খুশি হননি।
এটা আমি একটু ক্লিয়ার করতে চাই। যে দিন আনন্দplus-এ প্রথম পড়লাম সব্যসাচী চক্রবর্তী ফেলুদা হচ্ছেন আবার করে, সত্যি বলতে আমি খুশি হয়েছিলাম।
খুশি হয়েছিলাম এটা ভেবে, যাক আমার জেনারেশনের কাউকে ফেলুদা হিসেবে পাওয়া গেল না আমার পরে। এটা অ্যাক্টরের সেলফিশনেস। তার পরে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, বেণুদা ফেলুদা করলে বয়স বেশি লাগবে না? তাতে আমার বক্তব্য ছিল, অবশ্যই লাগবে কারণ বইতে ফেলুদার বয়স আছে ২৭ থেকে ৩৫। তাই বড় লাগতে বাধ্য।
পরে সেটা নিয়ে বিতর্ক হয়। খবরটা বেরোনোর পর আমি বেণুদাকে ফোন করে কথাও বলেছিলাম। বেণুদা নিজের স্টাইলে, ‘ছাড় ছাড়। ও সব নিয়ে ভাবিস না’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিল আমার কথা।
• কিন্তু সেই তো পরের মাসে, ১৬ ডিসেম্বর একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে ফেলু বনাম ব্যোমকেশ?
এটা আমি কী বলব। রিলিজ তো আমার হাতে নেই।
• সব্যসাচীর প্রসঙ্গ ছেড়ে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গে আসি?
আমি জানতাম (হাসি)।
• শোনা যায়, সৃজিতের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ভাল নয়?
সৃজিত আমাকে বলে, ও আমাকে স্নেহ করে, কিন্তু আমি নাকি বুঝতে পারি না। কিন্তু আমার প্রশ্ন, সেই স্নেহের প্রতিফলন তো ওর সিনেমাতেও হবে না কি? সেটা তো দেখি না। সৃজিতকে আমি বলেছি, ওর সঙ্গে আমার ঝগড়া চলছে এবং চলবে।
• এটা কি ‘রাজকাহিনী’র পর থেকে আরও বেশি করে মাথা চাড়া দিয়েছে?
না, ‘হেমলক’য়ের পর থেকে।
• ‘হেমলক’য়ে তো আপনি ছিলেন না?
হ্যাঁ, ছিলাম না। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল আমি ‘হেমলক’টা করতে পারতাম। তার পর ‘জাতিস্মর’য়ে আমাদের আর এক বন্ধু রাণা সরকার আমাকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছবিটা করতে বাধ্য করে (হাসি)।
• ‘রাজকাহিনী’ নিয়ে তো আপনি খুশি হননি?
না, ‘রাজকাহিনী’ নিয়ে আমি সৃজিতের ওপর খুশি হইনি এমনটা নয়। আমি আমার ওপর খুশি হইনি। সৃজিত কিন্তু আমার কোনও সিন কাটেনি। কিন্তু আমি স্ক্রিপ্টটা ওভারএস্টিমেট করেছিলাম, মিসরিড করেছিলাম, মিসইন্টারপ্রেট করেছিলাম। আমার ভুল হয়েছিল স্ক্রিপ্টটা বুঝতে। এবং ছবিটা দেখার সময়েও আমার ভাল লাগেনি দর্শক হিসেবে।
• সেটা সৃজিতকে বলেছিলেন?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, বলেছিলাম। আর একটা কথা, লাস্ট তিনটে ছবি থেকেই দর্শক হিসেবে আমার সৃজিতের ছবি ভাল লাগছে না।
• লাস্ট তিনটে মানে?
‘নির্বাক’, ‘রাজকাহিনী’, ‘জুলফিকার’। ‘জুলফিকার’ও আমাকে অফার করা হয়েছিল, কিন্তু স্ক্রিপ্টটা পছন্দ হয়নি।
আমার মনে হয় সৃজিতের দিকে আমরা সবাই তাকিয়ে থাকি কিন্তু কেন জানি না সৃজিত আমাদের বারবার ডিসঅ্যাপয়েন্ট করেছে। হয়তো ও একটা অন্য জোনে আছে। এটা ওকে বললে হয়তো ভাববে জ্ঞান দিচ্ছি। তবে ভাল লাগছে না ওর ছবি।
• একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। গত সপ্তাহে শুনলাম সিঙ্গাপুরে আপনি নাকি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে স্টেজে নেচেছেন।
(হেসে) আমি ঋতুদির নাম দিয়েছি সচিন তেন্ডুলকর। ঋতুদি ওপেন করা থেকে ইনিংসের শেষ অবধি খেলবে ঠিক করেছে। সিঙ্গাপুরে শুধু আমি একা নই, শাশ্বতদা আর কৌশিকদা (সেন)-কেও স্টেজে নাচিয়ে ছাড়ল। ওদের একটা করে গানে নাচতে হল, আমি জুনিয়র বলে আমাকে দু’টো গানে নাচতে হল। নজরুল মঞ্চ হলে তবু পালিয়ে যেতে পারতাম, সিঙ্গাপুর থেকে পালিয়ে যাব কোথায়? (হাসি)
• ঋতুপর্ণার সঙ্গে স্টেজে নাচলেন। তা হলে কি অচিরেই ঐশ্বর্যা আর রণবীরের মতো ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’য়ের বঙ্গীয় সংস্করণে দেখা যাবে আপনাদের দু’জনকে?
না, আপাতত সেই রকম কোনও প্ল্যান নেই। তবে যদি ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ হয়, তা হলে আমি জানতে চাই অনুষ্কা শর্মার রোলটা কে করছে? আর যেহেতু এ রকম বড় ম্যাগনাম ওপাস ছবি সৃজিত করে থাকে, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, আমি রণবীর কপূরের রোলটা করতে পারব না। সৃজিত আমাকে ঠিক ফাওয়াদ খানের রোলটা দেবে (হাসি)।
‘বিসর্জন’য়ের সেটে জয়া-আবীর।
• অনেকেই জানে না একটা অন্য দিক আছে আপনার ব্যক্তিত্বের। শুনি মাঝেমধ্যে আবীর চট্টোপাধ্যায় নাকি ডিপ্রেশনে চলে যান। তিন দিন কারও সঙ্গে কথা বলেন না, খিটখিটে মেজাজে থাকেন। সেটা ঠিক?
ডিপ্রেশনটা খুব স্ট্রং শব্দ। তবে মাঝে মধ্যে আমি চুপচাপ হয়ে যাই। একটা ফিলিং অব হোপলেসনেস কাজ করে। সেটা আমাদের চারপাশে যে সব সামাজিক বা রাজনৈতিক ঘটনা ঘটছে, সেটা ভেবেও হয়। তা ছাড়া এটা ভেবেও খারাপ লাগে, আগের থেকে কত বেশি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি আমরা, কত বেশি গালাগালি দিই, কত একা হয়ে গেছি আমরা সবাই।
ডিপ্রেশন না হলেও এই একটা ডিট্যাচমেন্ট আমার হয়। আমার মনে হয় এই ডিট্যাচমেন্টটা ভাল। সে সময় আমি বাড়িতে সিনেমা দেখি একা একা। শ্যুটিংয়ে অফ পেলে বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম ভাঙলে চুপচাপ শুয়ে থাকি ।
• ডিট্যাচমেন্টটা কেন ভাল বলছেন?
এটা ভাল, কারণ আমরা অভিনেতারা কী নামী পরিচালকরা এত অ্যাটেনশন পাই সব জায়গা থেকে — এই ডিট্যাচমেন্টটা আমাদের মাটিতে পা রাখতে সাহায্য করে।
• আপনাকে মাটিতে পা রাখতে ফ্যানরা আর দিচ্ছে কোথায়? নিউ ইয়র্কের বঙ্গ সম্মেলনেও তো আপনাকে নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি হল।
(হাসি) স্বার্থপরের মতো বলি। আমার কিন্তু ব্যাপক লেগেছিল যখন দেখলাম সবাই সেলফি তুলছে কী অটোগ্রাফ চাইছে আমার কাছ থেকে।
• অ্যাটেনশনের র্যাঙ্কিংয়ে কিন্তু আপনি এক-য়ে ছিলেন। যিশু দুইয়ে। তিনে পরমব্রত।
(হাসি) সেটার জন্যই আরও ভাল লেগেছিল। যদি বলি ভাল লাগেনি তা হলে মিথ্যে বলা হবে।
• আপনার এত ফ্যান, হাতে বড় বড় পরিচালকের ছবি। কিন্তু অনেকেই বলেন, আবীর বড্ড মিডলক্লাস। কিপটে। একজন স্টারের যে ফ্ল্যামবয়েন্স দরকার, সেটা নাকি আপনার নেই?
আই অ্যাডমিট আমি মিডলক্লাস। আমি এ রকম ভাবেই বড় হয়েছি। এবং আমি নিজেকে বদলাতে পারব না। আমি নর্ম্যাল মধ্যবিত্ত বাঙালি। গাড়িতে তেল ভরানোর সময় আড় চোখে দেখে নিই মিটারটা শূন্যে আছে কি না।
আর কিপটে ব্যাপারটা তো মানুষের গুণও হতে পারে। আজকে স্টার বলে খোলামকুচির মতো টাকা ওড়ালাম, মদ খেয়ে বাড়ি ফিরলাম রোজ রাতে, এগুলো আমি পারব না।
আমি দশটার সময় বাড়ি গিয়ে নন্দিনী আর মেয়ের সঙ্গে গল্প করলাম, বাবার সঙ্গে বিরাটের অন ড্রাইভ নিয়ে আড্ডা মারলাম, মাকে বললাম খেতে দাও। এই লাইফটাই আমার পছন্দ।
• থ্যাঙ্ক ইউ আবীর। দারুণ আড্ডা হল। ফিশফ্রাই খেয়ে পেটও ভরে গেছে। বাড়ি গিয়ে নো ডিনার।
আমারও নো ডিনার মনে হচ্ছে। তবে বাড়ি গিয়ে টেবিলের ওপর রাখা বাটিগুলোর ঢাকনা তুলে দেখব কী রান্না হয়েছে। যদি দেখি পেঁয়াজকলির তরকারি তা হলে নো ডিনার। মাংস থাকলে একটু খেয়ে নেব। আফটার অল মিডল ক্লাস না... (হাসি)।