ছবি: কৌশিক সরকার।
সুজয় ঘোষের সঙ্গে কথা হল? কঙ্গনা রানাউত তো ‘দুর্গা রানি সিংহ’তে থাকছেন না?
হ্যাঁ, কথা হয়েছে। অন্য কেউ থাকবেন।
বলিউডে ব্রেক আটকাচ্ছে না?
(হেসে) না। ওটা হচ্ছেই।
গান তো সব তৈরি?
অনেকটা। সুর সবই তৈরি হয়ে গিয়েছে। অ্যারেঞ্জমেন্টও প্রায় হয়ে এসেছে। গান লেখা চলছে। কয়েকটা হয়েছে, কয়েকটা হয়নি। এটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রোজেক্ট। প্রথম ন্যাশনাল লেভেলে পা রাখা। থ্যাঙ্কস্ টু সুজয়দা (পরিচালক সুজয় ঘোষ)।
আপনার গানে কথা সব সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ বার তো আর নিজে হাতে গান লিখতে পারছেন না। মন খারাপ হচ্ছে না?
সেটা একটা সমস্যা। আমি হিন্দিতে গান লিখতে পারি না। অকপটে স্বীকার করছি, আমার হিন্দি জ্ঞান খুব সীমিত। আমার বাংলা যতটা সমৃদ্ধ, হিন্দিটা তার ধারেকাছে যেতে পারে না। আমার হিন্দি শেখা তো হিন্দি সিনেমা আর হিন্দি গান থেকে। পপুলার কালচারের মাধ্যমে আমরা যা পাই তা থেকে তো একটা ভাষাকে যে পুরোপুরি শিখে ফেলা যাবে এমন তো নয়। তার জন্য একটা প্রথাগত শিক্ষার দরকার থাকেই। সেই অর্থে আমি হিন্দিতে গান লিখতে পারছি না। আমি শুধু সাহায্য করতে পারছি যে, কোনখানে কোন শব্দটা বসলে ভাল লাগবে। কারণ আমি মিটারটা জানি। এটাও একটা স্ট্রাগল। কারণ আমার অস্ত্র খালি সুর আর সঙ্গীত-আয়োজন। লিরিকসের অস্ত্রটা এ বার নেই বললেই চলে (হেসে)।
প্রথমবার যখন সঙ্গীত পরিচালনায় এলেন তখন দেবজ্যোতি মিশ্র সাহায্য করেছিলেন। এ বার আর একটা নতুন অধ্যায়, কতটা আত্মবিশ্বাসী?
‘অটোগ্রাফ’ বানানোর সময় আমি প্রায় কিছুই জানতাম না। বেঙ্গালুরুতে থাকতাম। দু’টো গানের সুর রেকর্ড করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর দেবুদা সঙ্গীত আয়োজন করেছিলেন। ‘চলো পাল্টাই’ থেকে কিন্তু একাই করে গিয়েছি। অনেকেই সাহায্য করেছেন। একটা প্রসেসের মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে বদলেছি, সমৃদ্ধ হয়েছি। এখন কোন শব্দটা শুনতে চাই, সেটা মাথার মধ্যে পরিষ্কার থাকে। আর তা নিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী।
সুজয়দাও ভীষণ সাহায্য করেছে। ‘অটোগ্রাফ’ রিলিজ করার সময় থেকেই ওর সঙ্গে আলাপ। তবে সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে ছবির পরিচালকের টিউনিংটা ভাল হতেই হবে। দিনের শেষে তার যেটা পছন্দ সেটাই কিন্তু যাবে ছবিতে। আমার নিজের যে সাউন্ডটা পছন্দ সেটার জন্য তো নিজের অ্যালবাম আছে।
নিজের অ্যালবাম তো সামনেই রিলিজ করবে?
হ্যাঁ, রেকর্ডিংই হয়ে গিয়েছে। মিক্সিংয়ের কাজ চলছে। টাইটেল দিয়েছি, ‘বাক্যবাগীশ’। কভার ডিজাইন নিয়ে এখন বেশ ব্যস্ত। অ্যালবামটা বাংলাদেশেও রিলিজ করবে।
‘দূরবিনে চোখ রাখব না’, ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ তারপর ‘বাক্যবাগীশ’ একটা স্যাটায়ারের গন্ধ পাচ্ছি...
সোশ্যাল কমেন্ট্রি বলতে পারেন। প্রেমের বাইরে গিয়ে আমরা আর কী কী ভাবে অ্যাফেক্টেড হচ্ছি বেঁচে থাকায়। সেই কারণেই এই অ্যালবামে কোনও প্রেমের গান নেই। ‘বাক্যবাগীশ’ গানটা যেমন এমন একটা লোকের কথা বলছে, যে খালি সমস্যার কথা বলে, সমাধানের কোনও কথা বলে না। সমকামিতা নিয়েও একটা গান আছে। একটা অটোবায়োগ্রাফিকাল গানও আছে। আমার পাড়া ঋতুর বদলের সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে পাল্টে গিয়েছে, তা নিয়ে ‘মাটির রং’ বলে একটা গান আছে।
শুনেছি আনন্দplus-এর জন্য একটা গান থাকছে অ্যালবামে?
হ্যাঁ, অনেক দিন আগে আনন্দplus-এর জন্য একটা গান লিখেছিলাম আড্ডা নিয়ে। আড্ডার মানে কী ভাবে পাল্টে গিয়েছে। সেই ‘ঘরকুনো ঘাস’ গানটা এই অ্যালবামে রাখছি। আড্ডা তো সবাই মারি। কিন্তু তার ধরনটা পাল্টে গিয়েছে। এখন আমরা স্কাইপে আড্ডা দিই। এটাও কিন্তু প্রেমের গান না।
প্রেমকে এত বাদ দিচ্ছেন কেন?
প্রেম নিয়ে তো অনেক কথা হয়েছে। এ বার ওটা একটু তোলাই থাক না।
কেন? প্রেম হেন জিনিস তোলা থাকবে?
আসছে বছর আবার হবে। (হাসি)
প্রেমহীন এই অ্যালবামে শ্রোতারা তবে কী পাচ্ছেন?
আমার তো প্রায় তিন-সাড়ে তিন বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থাকা হয়ে গেল। এ বার ইচ্ছে করে কিছু চেঞ্জ করেছি। ‘বাবুরে’ বলে একটা গান আছে। যেটাতে একটু ‘ফোকিশ’ সাউন্ড দিয়েছি। অ্যারেঞ্জমেন্টেও পরিবর্তন এনেছি। একটা ব্যাপার তো স্বীকার করবেন, এই ইন্টারনেটের যুগে গান শোনাটা অনেক সুবিধার। ২০১৪তে যে অ্যালবাম বেরোচ্ছে সেটাও আমরা শুনে নিতে পারছি। সুতরাং আন্তর্জাতিক প্রভাব অনেকটাই আছে অ্যালবামে। বাংলারও খুব প্রভাব আছে। বাংলা বলতে আমি ‘সাউন্ড অব বেঙ্গল’ মিন করছি। তাল নিয়েও অনেক মজা করেছি।
আন্তর্জাতিক প্রভাবেই কি আপনার টুইটার হ্যান্ডেল @aroyfloyd?
হ্যাঁ। পিঙ্ক ফ্লয়েড সব সময় আমাকে ইন্সপায়ার্ড করেছে। আসলে প্রথম যখন মেল আইডি তৈরি করতে যাই। বছর কুড়ি বয়স তখন। একটা আইডেনটিটির দরকার হচ্ছিল। মাথার মধ্যে ছিল পিঙ্ক ফ্লয়েডের গান। ওটা দিয়েই আইডি করলাম। তারপর সেটাই টুইটার-ফেসবুকে চলে এসেছে।
এখন তো আইডেনটিটি প্রতিষ্ঠিত। বাংলা সঙ্গীত পরিচালকদের মধ্যে নিজেকে কোন পজিশনে রাখবেন?
এই রে! পজিশন বলার আমি তো কেউ নই। সবাই যেটা বলবেন সেটাই।
লেখক অনুপমের কী হল? পুজোয় কিছু লিখছেন?
আমি তো আসলে কিছু ঠিক করে লিখি না। যখন মন চায় লিখি। না, পুজোর জন্য এখনও তো কিছু ঠিক করিনি।
শেষ প্রশ্ন করি, যদি ‘সব পেলে নষ্ট জীবন’ হয়, আপনার জীবন নষ্ট হবে কী পেলে?
এক কথায় বলা তো মুশকিল। (একটু ভেবে) যদি দু’টো শব্দে বলতে হয়, তবে বলব, অদ্ভুত মুগ্ধতা।