বাহুবলী টু
বিদেশের ট্রেন্ড ভারতেও। বলা যায় বাংলাতেও। নামী পরিচালকেরাও এখন মেতেছেন ওয়েব সিরিজ তৈরিতে। বড় পরদার পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য তাঁরা কনটেন্ট তৈরি করছেন। অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো এখন বড় পরদা আর টেলিভিশনের সমান্তরাল। সহজ করে বললে, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, হটস্টারের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ক্রমশ বাজার দখল করছে।
দর্শকও সাগ্রহে স্ট্রিমিং চ্যানেলগুলো সাবস্ক্রাইব করছেন। সময় আর মর্জি মতো মোবাইলে দেখে নেওয়া যাচ্ছে শো। বিনোদনের পরিভাষা যে ভাবে দ্রুত হারে বদলাচ্ছে, তাতে একটা প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠে এসেছে। বিনোদন যত বেশি মুঠোবন্দি হচ্ছে, বড় পরদা কি সেই হারেই গুরুত্ব হারাচ্ছে?
বছর বছর সিনেমা থেকে হল কালেকশনের অঙ্ক যে ভাবে কমছে, তাতে আশঙ্কার কারণ আছে বইকী! ‘বাহুবলী’র মতো বিশাল ক্যানভাসের ছবি না হলে দর্শক হলমুখী হতে রাজি নন, এমন মতও উঠে আসছে। কিন্তু এ দিকে ‘গেম অব থ্রোনস’-এর মতো ওয়েব সিরিজ যে গ্র্যাঞ্জার দেখিয়ে দিয়েছে, তাতে অনলাইনের জয়পতাকাই নজরে আসে। শুধু ওয়েবসিরিজ নয়, শর্ট ফিল্ম এমনকী, ফিচার ফিল্মও তৈরি করছে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজনের মতো স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো। অনেক ইংরেজি ছবির প্রিমিয়ার আগে অনলাইনে হচ্ছে। পরে সিনেমা হলে দেখানো হচ্ছে। আসলে পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তিই রয়েছে।
গেম অব থ্রোনস
অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের নিজস্ব সংস্থা ওয়েব কনটেন্ট তৈরি করে। সুতরাং ব্যবসায়িক দিক দিয়ে যে বিষয়টি লাভজনক, সেটা জানেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আগামী প্রজন্ম ভীষণ ভাবে ওয়েবনির্ভর। তারা টেলিভিশন পর্যন্ত দেখে না। আমার ছেলে যেমন প্রায়ই বলে, সিনেমা হল বা টেলিভিশনে কিছু দেখতে হলে বাঁধাধরা সময় রয়েছে। অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের ক্ষেত্রে তা নয়। মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে যখন খুশি দেখে নেওয়া যায়। এই সুবিধেগুলোর জন্যই তো ওয়েব চ্যানেলগুলোর এত বা়ড়বাড়ন্ত।’’
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় আবার ওয়েব সিরিজের অন্ধভক্ত হলেও, তাঁর কাছে ব়ড় পরদার ম্যাজিক কোনও দিনই কমবে না। তিনি যেমন মোবাইল বা ল্যাপটপে সিনেমা হোক কি সিরিজ, কিছুই দেখতে পছন্দ করেন না। তাঁর বড় টিভি স্ক্রিন আর ডিজিটাল সাউন্ড না হলে মন ভরে না। সেই লজিকেই তিনি বলছেন, ‘‘সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার আবেদন কোনও দিনই কমবে না।’’
পোস্ত
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
প্র: আপনার ছবি মানে ভরদুপুরেও হলের বাইরে লম্বা লাইন। আপনিও ওয়েব সিরিজ বানাতে আগ্রহী?
উ: হ্যাঁ। কারণ সিনেমা একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বানাতে হয়। অনেক সময় পরিচালকের তার বাইরেও কিছু বলার থাকে। একবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আমাদের সিনেমা থেকেই ওয়েব কনটেন্ট বানাতে হবে। তখন আমি ‘মুক্তধারা’র কথা ভেবেছিলাম। ওই ছবিটাতে যা দেখিয়েছি, তার বাইরে আরও অনেক কিছু বলার ছিল। এমন অনেক ভাবনাই আছে, যেখানে ওয়েব সিরিজের মতো দৈর্ঘ্য প্রয়োজন। অনেক দিন আগে ‘প্রথম আলো’ নিয়ে ওয়েব সিরিজ করার কথা ভেবেছিলাম। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই লেখাকে সিরিজ ছাড়া আর কী ভাবেই বা ফুটিয়ে তুলবেন আপনি!
প্র: অনলাইন স্ট্রিমিং, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের জন্য কি বড় পরদা ক্রমশ গুরুত্ব হারাচ্ছে?
উ: আমার মনে হয় না। একটা পার্সোনাল ভিউয়িং। আর একটা কালেকটিভ। এইচডি টিভি তো চলে এসেছে বাজারে। তাও কেন মাঠে গিয়ে খেলা দেখার জন্য দর্শকের এত আগ্রহ? আমরা তো অ্যাপেই গান শুনতে পাই। তাও রহমানের শোয়ের টিকিটের জন্য মারামারি হয়। সে রকমই সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার প্রবণতা কোনও দিনই বদলাবে না।
শিবপ্রসাদ
প্র: দিনে দিনে সিনেমার টিকিট বিক্রি যে হারে কমছে, তা কি ওয়েব কনটেন্টের জনপ্রিয়তার দিকে ইঙ্গিত করছে না?
উ: আমাদের ভাল সিনেমা বানাতে হবে। তা হলেই দর্শক প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবি দেখবেন। দর্শক তো ‘পোস্ত’ দেখতে হলে গিয়েছেন। ‘দঙ্গল’, ‘বাহুবলী’ এমনি এমনি এত টাকার হল কালেকশন করেছে! আমরা খারাপ কনটেন্ট দেব আর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উপর দায় চাপাব, সেটা হয় না।
অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী
প্র: অনলাইনের জনপ্রিয়তার কারণেই কি শর্ট ফিল্ম তৈরির চিন্তাভাবনা?
উ: এখনকার দিনে ডিজিটাল বুম অস্বীকার করা যায় না। স্বল্প পরিসরে গল্প বলার এটা ভাল মাধ্যম।
প্র: অনলাইন চ্যানেলের দাপটে কি সিনেমা হল ক্রমশ পিছু হটছে?
উ: আমার মনে হয় না। সিনেমা হলের ম্যাজিক সব সময়ই থাকবে। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আর বড় পরদা পাশাপাশি চলবে। এতে তো কোনও সমস্যা নেই। যতই আমরা পিৎজা খাই, ভাত না হলে চলে!
অনিরুদ্ধ
প্র: আধুনিক প্রজন্ম যে ভাবে মোবাইল-অ্যাপ নির্ভর, তাতে ভবিষ্যতে বড় পরদার জনপ্রিয়তা কমার আশঙ্কা কি থেকে যায় না?
উ: নেটফ্লিক্স, অ্যামাজনের সাবস্ক্রিপশন তো মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে, তাই আগ্রহও বাড়ছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, এই প্রজন্মই ‘গোলমাল’ হিট করাচ্ছে। এরাই হলে গিয়ে ‘পিঙ্ক’ দেখেছে। ভাল জিনিস বানালে দর্শক হলে যাবেনই। যতই ওয়েবসাইটে খবর দেখি না কেন, খবরের কাগজ না হলে চলে না। আমি যেমন এখনও রেকর্ড কিনি, তা-ও দ্বিগুণ দাম দিয়ে। এটা নস্ট্যালজিয়া। পরিবার নিয়ে হলে গিয়ে ছবি দেখাটাও তেমনই।