জাত চেনালেও ছবির গতি শ্লথ

ওঁর ‘হারবার্ট’ তো বটেই। ‘কাঙাল মালসাট’-এর ‘হ্যাংওভার’ থাকলেও মুশকিল।

Advertisement

দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৭ ০০:০১
Share:

ওঁর ‘হারবার্ট’ তো বটেই। ‘কাঙাল মালসাট’-এর ‘হ্যাংওভার’ থাকলেও মুশকিল।

Advertisement

এমনকী ওঁর মঞ্চের থিয়েটারগুলো, যেগুলো ওঁর ঘরানাটাকে ধরিয়ে দেয়, সে ‘তিস্তা পারের বৃত্তান্ত’ থেকে ‘রাজা লিয়র’ হয়ে ‘যারা আগুন লাগায়’, বা ‘বিসর্জন’, সেই রসায়নটাকেও যদি আঁকড়ে ধরে এ ছবি জরিপ করেন, ধাঁধায় পড়বেন।

‘অসমাপ্ত’র পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় এখানে যেন আত্মবীক্ষার খেলা খেলেছেন।

Advertisement

আবার তারই সঙ্গে মানবিক যে-কোনও সম্পর্ককে দূর গ্রহে বসে দেখছেন। শ্যুটিং স্পট যেখানে লাভা, কোলাখাম, ঋষিখোলা— বাঙালি মাত্রই মন-কেমনিয়া টানে ঝুঁকবেন। আর কাহিনির গায়ে যখন এলোমেলা সম্পর্কের যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ, সিনেমাপ্রেমী স্মৃতিকাতরতায় ভুগবেনই। সে স্মৃতি কখনও ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র, তো কখনও ‘তিতলি’, কখনও...।

সেই সিড়িঙ্গি সিড়িঙ্গি গাছ, সবুজ পাহাড়ের গায়ে মেঘের উড়ান, ময়ালের মতো শুয়ে থাকা আলুঢালু রাস্তা... আর আনতাবড়ি অমসৃণ সম্পর্কের রক্তারক্তি কাটাছেঁড়া। —এ আর নতুন কী, বলে পাশ-ফেরা মনে যখন আনমনা হবেন, তখনই ছোট্ট ছোট্ট ‘মাস্টারস্ট্রোক’। সংবিৎ ফেরাবেই। অনেকটা ‘বিরাট কোহলি’র মতো। চল্লিশ করলেও জাত চেনাতে ভোলেন না!

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সেমি-অটোবায়োগ্রাফিকাল উপন্যাস ‘আশ্চর্য ভ্রমণ’। তার থেকেই ক’দিেনর গল্প ফেঁদে এই ‘অসমাপ্ত’। কোন ছোট্টবেলায় বাবার সঙ্গে দার্জিলিংয়ে এসে পাহাড় দেখেছিল ইন্দ্র (ঋত্বিক চক্রবর্তী)। এবার সে তার শৈশব ফিরে পেতে গিয়ে পাহাড়ে আসে আবারও। ওঠে কলেজ-বন্ধু মলয়ের (ব্রাত্য) বাড়ি। সে বাড়িতে থাকে মলয়ের স্ত্রী শুচিস্মিতাও (স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়)। হঠাৎ আবির্ভাব হয় ইন্দ্রর প্রাক্তন প্রেমিকা (পাওলি)। সে বেড়াতে এসেছে তার ননদ (পৌলমী দাস) আর বরকে (অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়) নিয়ে, এই পাহাড়েই। শুরু হয় সম্পর্কের আলোছায়া ট্র্যাপিজের খেলা।

এটুকু পড়লে মনে হতেই পারে, এতে আাবার কী ‘মাস্টারস্ট্রোক’ থাকবে! আছে। আছে। কিন্তু কোথায়?

মার্জিনের বাইরে দাঁড়িয়ে যখন এক ঋদ্ধমনা চিত্রপরিচালক মানুষের অসম্পূর্ণতাকেই চ্যাম্পিয়ন করে দেন! নীরবতাকে করে তোলেন গল্পের চরিত্র! বেতালা, বেসুরো গলায় গান গাইয়ে ‘ফাইন টিউনিং’-এ যান কাহিনির। অন্ত্যজ চেলু (দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য)-কে সূক্ষ সূক্ষ আঁচড়ে বানিয়ে তোলেন পাক্কা দার্শনিক!

ছবির দ্বিতীয় ও তৃতীয় বাজি ক্যামেরা আর অভিনয়। লো-অ্যাঙ্গল, টপ-অ্যাঙ্গল শটের লাগাতার মিলমিশে কিছু দৃশ্য অনবদ্য!...পাহাড়ি রাস্তায় মলয়ের এলোপাথাড়ি দৌড়, একলা ফলের নালায় গড়িয়ে পড়া, আকাশ ছুঁয়ে, সবুজের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে মদের গ্লাসে ‘জুম’ করে ক্যামেরার স্থানু হয়ে থাকা....।

মালিন্য আর মায়ার অদ্ভুত চলাচলে অনন্য স্বস্তিকা। মধ্যবিত্তের আগলভাঙা জীবন টপকাতে চাওয়া নারী হয়ে পাওলিও তুখড়। ঋত্বিক মনে করায় ‘দূরত্ব’, ‘গৃহযুদ্ধ’র সময়কার ‘ন্যাচারালিস্টিক’ অঞ্জন দত্তকে। কিন্তু ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ অবশ্যই ব্রাত্য বসু। তাঁকে দেখে মনে হল, চেনা ঘূর্ণি পিচে মুথাইয়া মুরলীধরন যেন! খ্যাপাটে, সন্দেহপ্রবণ, ক্ষিপ্রমনা, আবার কখনও বোবা অসহায় হয়ে মরা মাছের দৃষ্টি মেলে মলয় বড় জ্যান্ত ব্রাত্যীয় নড়াচড়ায়, কথা বলায়।

এত ক্লাস শটের পরও ‘অসমাপ্ত’র গতি কেন এত সরলরৈখিক, শ্লথ! তাতে ছবিটিও যে হয়ে গেল অহেতুক প্রলম্বিত!

নির্মাণে অসম্পূর্ণ! অসমাপ্ত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন