নস্টালজিক: বসন্ত বিলাপের সেই দৃশ্য ।নিজস্ব চিত্র
কয়লার ইঞ্জিনের ধোঁয়া উড়িয়ে প্যাসেঞ্জার ট্রেনটা সদ্য প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে গিয়েছে। দ্রুত পায়ে ফুট ওভার ব্রিজের সিঁড়ি ভেঙে স্টেশনে পৌঁছে থমকে গেলেন ‘অনুরাধা’ অপর্ণা সেন। ‘শ্যাম’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাহলে অভিমান করেই চলে গেলেন! মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত অনুরাধা ধীর পায়ে রেলের ফুটব্রিজের সিঁড়ি ভাঙতে শুরু করলেন। এমন সময় শ্যামের ডাক!
জনপ্রিয় বাংলা সিনেমা ‘বসন্ত বিলাপ’-এর শেষ এই দৃশ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মেদিনীপুর স্টেশনের ফুটব্রিজটি। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। তারপরে ৪৩টা বছর পেরিয়ে গিয়েছে। নস্টালজিয়ায় মোড়া সেই ফুটব্রিজই এ বার সংস্কার হচ্ছে।
বসন্ত বিলাপে যে ফুটব্রিজটি দেখা যায়, তার শেড ছিল না। আশির দশকে অবশ্য শেড হয়। এ বার যে সংস্কার হচ্ছে, তাতে ফুটব্রিজের পুরনো চেহারা পুরোটাই বদলে যাবে। রেল সূত্রের খবর, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মেদিনীপুর-বাঁকুড়া লাইনে আগে হাতে গোনা ট্রেন চলত। এখন দিনে ১৭ জোড়া লোকাল, ১০ জোড়া প্যাসেঞ্জার, দূরপাল্লার এক্সপ্রেস, মালগাড়ি-সহ প্রায় শ’খানেক ট্রেন চলাচল করে। বেশ কয়েক বছর আগে পুরনো ফুটব্রিজের দু’প্রান্তের ওঠা-নামার ল্যান্ডিং চওড়া করা হয়েছিল। কিন্তু মূল ফুটব্রিজে যাতায়াতের জায়গা-সহ ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ওঠা-নামার ল্যান্ডিং ছিল অপরিসর। ফলে, ট্রেন থামলে ভিড়ে যাত্রীদের খুবই সমস্যা হয়। তা ছাড়া, পুরনো ওভারব্রিজটি মাত্র এক মিটারের একটু বেশি চওড়া। সংস্কারের পরে তা আড়াই মিটার চওড়া হবে। দু’প্রান্তে প্ল্যাটফর্মের বাইরের দু’টি ল্যান্ডিং জুড়ে দিয়ে সমান্তরাল নতুন ওভার ব্রিজটিও প্রায় আড়াই মিটার চওড়া হচ্ছে। এ জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা।
আরও পড়ুন: টানা চার দিনের ছুটিতে দিঘায় ভিড়, বাড়ছে দুর্ঘটনাও
এই ফুটব্রিজেরই ভোলবদল হবে। নিজস্ব চিত্র
অ্যাসোসিয়েশন ফর মিডনাপুর-হাওড়া ডেইলি প্যাসেঞ্জার্স-এর সাধারণ সম্পাদক তথা জোনাল রেল ইউজার্স কনসাল্টেটেটিভ কমিটির (জেডআরইউসিসি) সদস্য হিমাংশু পাল বলেন, “বসন্ত বিলাপের সঙ্গে পুরনো ফুটব্রিজের স্মৃতি জড়িত। কিন্তু এখন ব্রিজটি চওড়া করা প্রয়োজন।” তবে সমস্যা রয়েছে আরও কিছু। ২ এবং ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে শৌচাগার নেই। অতিরিক্ত প্ল্যাটফর্মও প্রয়োজন। ১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরনোর জন্য বাঁকুড়ার দিকে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের স্বার্থে সাবওয়ে তৈরিরও দাবি তুলেছেন হিমাংশুবাবুরা।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করে ফুটওভার ব্রিজটি চওড়া করা হচ্ছে। ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দু’টি মডিউলার টয়লেট বসানো হবে। জেলা সদরের স্টেশন হওয়ার জন্য যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”