আমি আমি জানি জানি

পরকীয়া ফাঁস করতে স্মার্টফোনে হাজির হাজারও অ্যাপস। লিখছেন অরিজিত্‌ চক্রবর্তীঅফিসের কাজে দিন পাঁচেকের জন্য দিল্লি যেতে হবে অর্পিতার। ছ’বছরের মেয়েকে কী করে সামলাবে ওই ক’দিন তা নিয়ে মাথার চুল ছেঁড়ার অবস্থা অনির্বাণের। একটাই ভরসা আইপ্যাডটা ধরিয়ে দিলে সারা বিশ্ব ভুলে যায় মেয়ে। কিন্তু ‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধে হয়’! খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আইপ্যাড! ‘কী করে যে মেয়ে আইপ্যাড হারায়?’ ভাবতে ভাবতে ‘ফাইন্ড মাই আইফোন’ অ্যাপটা ওপেন করে অনির্বাণ। এই অ্যাপসে বাড়ির সবার আইফোন বা আইপ্যাডের লোকেশন দেখা যায়। হারিয়ে যাওয়া আইপ্যাড পাওয়াটা কোনও সমস্যাই নয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০১:১৫
Share:

‘মার্ডার’: অ্যাপস থাকলে গল্পটা অন্য রকমও হতে পারত

অফিসের কাজে দিন পাঁচেকের জন্য দিল্লি যেতে হবে অর্পিতার। ছ’বছরের মেয়েকে কী করে সামলাবে ওই ক’দিন তা নিয়ে মাথার চুল ছেঁড়ার অবস্থা অনির্বাণের। একটাই ভরসা আইপ্যাডটা ধরিয়ে দিলে সারা বিশ্ব ভুলে যায় মেয়ে। কিন্তু ‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধে হয়’! খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আইপ্যাড! ‘কী করে যে মেয়ে আইপ্যাড হারায়?’ ভাবতে ভাবতে ‘ফাইন্ড মাই আইফোন’ অ্যাপটা ওপেন করে অনির্বাণ। এই অ্যাপসে বাড়ির সবার আইফোন বা আইপ্যাডের লোকেশন দেখা যায়। হারিয়ে যাওয়া আইপ্যাড পাওয়াটা কোনও সমস্যাই নয়।

Advertisement

মেয়ের আইপ্যাড পাওয়া গেল ঠিকই। সঙ্গে আর একটা ব্যাপারও জানতে পারল অনির্বাণ। অর্পিতার ফোনের লোকেশন দেখাচ্ছে গোয়া! সন্দেহটা যে মনের মধ্যে একেবারে ছিল না, তেমন নয়। ফোন করল বৌকে। ফোনে অর্পিতা জানাল দিল্লিতে ভাল ভাবেই পৌঁছে গিয়েছে, আর একটু পরেই মিটিং শুরু হবে!

অর্পিতা বা অনির্বাণ এই নামদু’টো কাল্পনিক হতে পারে, কিন্তু ঘটনাটা অনেকেই বুঝতে পারছেন সত্যি। এই তো মাস কয়েক আগে বেঙ্গালুরুতে এক বিবাহ-বিচ্ছেদ মামলায় সূত্র হিসেবে দাখিল করা হয়েছে হোয়াটস্‌অ্যাপ চ্যাটকে!

Advertisement

তাই এখন আর ডিনার টেবিলে ফোন উল্টে রেখে, যাতে ‘তার’ করা টেক্সট ‘সে’ না দেখে ফেলে বা অফিসের কাজে যাওয়ার নাম করে ‘তার’ সঙ্গে মরিশাস ট্রিপের ছবি ফোনের ভল্টে রেখে কিংবা ‘তার’ নাম ‘লো ব্যাটারি’ বলে সেভ করে রেখে যাতে ‘তার’ ফোন এলেই চার্জ দিতে অন্য ঘরে যাওয়া যায় সে দিন ফুরিয়ে এসেছে।

তাই সাবধানের মার নেই...

ভল্টি স্টক

অ্যাপটা দেখতে স্টক মার্কেট ইনডেক্স চেক করার মতো। নামটাও তাই। তবে এর আসল কাজ গোপন ছবি স্টোর করে রাখা, যাতে সেই ছবিগুলো আর ‘ক্যামেরা রোল’য়ে না দেখা যায়। আর কেউ ভুল পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাপটা ওপেন করতে চাইলে ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরায় সেই হানাদারের ছবিও তুলে রাখবে ভল্টি স্টক।

কল অ্যান্ড টেক্সট ইরেজার

কাজ নামের মতোই। ব্যবহারকারীর ইচ্ছে অনুযায়ী কল ও এসএমএস ডিলিট করে দিতে পারে। আর ‘স্টেল্থ মোড’য়ে বিশেষ কারও কল বা এসএমএস-এর নোটিফিকেশনও গোপন করে দিতে পারবে। পরে শুধুমাত্র আপনিই সেগুলো দেখতে পাবেন।

টাইগার টেক্সট

এই অ্যাপটাকে এসএমএস-এর স্ন্যাপচ্যাট বলতে পারেন। স্ন্যাপচ্যাটে যেমন পাঠানো ছবি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ডিলিট হয়ে যায়, তেমনই টাইগার টেক্সট-এ পাঠানো এসএমএস-ও দেখার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিজে থেকেই ডিলিট হয়ে যাবে। ফলে গোপন এসএমএস-এর গোপনীয়তা বজায়ই থাকবে।

তবে মনে রাখবেন আপনি যদি বুনো ওল হন, তা হলে ‘সে’ কিন্তু বাঘা তেঁতুলও হতে পারে। কারণ, আপনার পরকীয়া ফাঁস করার ‘শার্লক’দের জন্যও নানা অ্যাপস্‌ হাজির বাজারে:

কাপলট্র্যাকার

গুগল প্লে স্টোরে অনেক দিন হয়ে গেল বেশ জনপ্রিয় এই অ্যাপ। এর মধ্যে প্রায় ৯ লক্ষ ডাউনলোডও হয়েছে। তবে এটা কিন্তু ‘মিউচুয়াল মনিটরিং অ্যাপস’, মানে দু’জনেই দু’জনের হালহদিশ জানতে পারবে। এসএমএস, কল হিস্ট্রি, ফেসবুকের মতো সোশ্যাল সাইটে উপস্থিতি আর লোকেশন দু’পক্ষই জানতে পারবে।

এমস্পাই

আইফোন, আইপ্যাড, অ্যান্ড্রয়েড তো ছিলই, গত সেপ্টেম্বরে নজরদারির তালিকায় যোগ হয়েছে উইনডোজ ডিভাইসও। বিনা পয়সায় হবে না, মাসে গড়ে হাজার টাকা দিতে হবে। অবশ্য ভাল জিনিস কবেই বা মুফতে পাওয়া যায়! আর সে কথা যে সত্য তা এর জনপ্রিয়তা দেখেই আন্দাজ করা যায়। গত তিন বছরে এমস্পাইয়ের ব্যবসা বেড়েছে ৪০০%! আর সেপ্টেম্বর ২০১৪তেই ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছাপিয়ে গিয়েছে দশ লাখের উপর।

এসএমএস, ফেসবুক-হোয়াটস্‌অ্যাপ চ্যাট, মেল বা লোকেশন তো জানা যাবেই। উপরি পাওনা হিসেবে আছে কি-লগার (কোন কোন ‘কি’ প্রেস করা হয়েছে, তা জানার উপায়) এবং স্ন্যাপচ্যাট (যে অ্যাপসের মাধ্যমে পাঠানো ছবি কয়েক সেকেন্ড পর নিজে থেকেই ডিলিট হয়ে যায়) কিছুই বাদ পড়বে না এমস্পাইয়ের নজরদারি থেকে। ফলে ‘গোপন’ কিছু ডিলিট করেও পার পাবেন না।

ফুটপ্রিন্টস

পুরো নাম ‘ফাইন্ড মাই কিডস্‌ ফুটপ্রিন্ট’। তবে যদি ভেবে থাকেন এ কেবল বাচ্চাদের মনিটর করার অ্যাপস, তা হলে ভুল করবেন। এই কিছু দিন আগেই একটা রিপোর্টে বলা হয়েছে যত ফুটপ্রিন্টস ইন্সটল করা হয়েছে তার ৪০% করা হয়েছে ‘সন্দেহভাজন’ সঙ্গীর হালহকিকত জানার জন্য!

এই অ্যাপস ব্যাকগ্রাউন্ডে চলবে ফলে আপনার সঙ্গী টেরও পাবে না। এছাড়া ‘প্যারেন্টাল কনট্রোল’ যার কাছে থাকবে, সে ছাড়া অ্যাপসটা বন্ধও করা যাবে না।

তাই তো বলি পরকীয়া করুন সাবধানে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন