ফ্যান্টাসিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা অত সহজ?

ইকারুসের গল্প জানেন? গ্রিক পুরাণে ইকারুসের বাবা সন্তানকে ওড়ার জন্য পালক, মোমের ডানা তৈরি করে দেন। সাবধানবাণী, সেই ডানায় ভর করে ইকারুস যেন খুব উঁচুতে কিংবা নিচু দিয়ে না ওড়ে। কিন্তু ইকারুস উড়ে গিয়েছিল সূর্যের কাছে।

Advertisement

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০০:৩৫
Share:

সত্যিকারের চেষ্টা আর উপরচালাকির ভাবসর্বস্বতার মধ্যে ফারাক কতটা? ভাবেশ জোশিকে দেখলেই আঁচ পাওয়া যায়। নির্দেশকের সযত্ন চেষ্টা নয়, চেষ্টার ভান ছিল। যে ছবির চরিত্ররা মজার ছলে ডিসি কমিক আর মার্ভেলের পার্থক্য আউড়ায়, ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ব্যাটম্যান ট্রিলজি’কে খানিক ‘অনুকরণ’ করার মতো স্পর্ধা রাখতে পারে, সেই ছবির আরও সাহসী, ক্ষুরধার হওয়ার দরকার ছিল। যার অভাবে বেশ ভাল গল্প, প্রথমার্ধের টানটান উত্তেজনা, ভাল অভিনয় থাকা সত্ত্বেও কোনও বার্তা দেওয়া তো দূরের কথা, মন অবধি ছুঁতে পারল না।

Advertisement

ইকারুসের গল্প জানেন? গ্রিক পুরাণে ইকারুসের বাবা সন্তানকে ওড়ার জন্য পালক, মোমের ডানা তৈরি করে দেন। সাবধানবাণী, সেই ডানায় ভর করে ইকারুস যেন খুব উঁচুতে কিংবা নিচু দিয়ে না ওড়ে। কিন্তু ইকারুস উড়ে গিয়েছিল সূর্যের কাছে। গলে, পুড়ে মরেছিল সে। ছবিতেও ওড়ার স্পর্ধা রেখেছিল ভাবেশ (প্রিয়াংশু), সিকন্দর (হর্ষবর্ধন)। আরব সাগরপারের রুপোলি নগরের অন্ধকার দুনিয়ায় জমে থাকা দুর্নীতির ধ্বজাধারী মন্ত্রী রানার (নিশিকান্ত) অন্যায় ফাঁস করে দেওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছিল তারা। তাই এক জনকে ঝরে যেতে হয় অকালে। আর এক জন বন্ধুর সমাজ বদলানোর স্বপ্নকে শিরোধার্য করে এগিয়ে চলে। কিন্তু উড়তে থাকা তরুণকে ধরে ফেলে খলনায়কের ‘শোনো বাছা একটা গল্প বলি’র সেই পুরনো অভ্যেস আর বদলালো না। যেমন বদলালো না বারের ভিতর ‘চুম্মে মে চবনপ্রাশ’-এর মতো গান জোর করে ঢোকানো।

ছবিতে ভাবেশ, সিকুর মাথায় চড়ে মুম্বইকে দুর্নীতিমুক্ত করার খেয়াল। মুখোশের আড়ালে লড়াই করে, ভিডিয়ো আপলোড করে, স্বঘোষিত প্রতিবাদী তারা। মুখোশ খসে পড়লে মুখোশ বদলাতে হয়। তবু কি শেষ রক্ষা হয়? ভাবেশ জোশি আসলে একটি নাম। যার আড়ালে জঞ্জাল সাফ করতে পারে যে কেউ। গথামকে বাঁচাতে ব্রুস ওয়েন ব্যাটম্যান হয়ে উঠতে গিয়ে যে উ়ড়াল নিয়েছিল, এখানে সেটারই অভাব। তাই রক্তমাংসের ভাবেশ মার খেলে খুঁড়িয়ে হাঁটে, যন্ত্রণায় ককিয়ে ওঠে। প্রেমিকার কাছে নিজের ভ্রান্ত মৃত্যুসংবাদ পাঠায়, নিরাপত্তার খািতরে। বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে সুন্দর বুনেছিলেন ছবির গল্প, চরিত্র, গতি। কিন্তু তা বিরতি অবধিই। দর্শকের প্রত্যাশাকে তিনি মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন দ্বিতীয়ার্ধে। ফ্যান্টাসিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে যে অঙ্ক কষতে হয়, সেটায় ভুলচুক করে ফেলেছেন তিনি।

Advertisement

ভাবেশ জোশি সুপারহিরো পরিচালনা: বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে অভিনয়: হর্ষবর্ধন, প্রিয়াংশু, নিশিকান্ত, আশিস ৫/১০

ছবির শুরুতে নাম দেখানো হয়েছিল ‘ভাবেশ জোশি’। এন্ড ক্রেডিটে তা ‘ভাবেশ জোশি সুপারহিরো’। ছবিটা সাধারণ মানুষের অতিনায়ক হয়ে ওঠার গল্প বলার চেষ্টা করলেও, তা ‘সুপারহিরো’ হয়ে উঠল কই?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন