সুর আর সংসারের চেনা ছন্দ ছিল না তাঁর। গতানুগতিক গানের রাস্তা তাঁকে টানেনি। বাবা লালজির মতোই বুনো গন্ধ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েছিলেন আমৃত্যু। সেই ছকভাঁঙা গায়িকা, গোয়ালপড়িয়া গানকে সর্বজনাদৃত করে তোলা প্রতিমা পাণ্ডে বড়ুয়ার জীবনকেই ৮৬ মিনিটের ফ্রেমে বেঁধেছেন পরিচালক ববি শর্মা বড়ুয়া। নাম ‘সোনার বরণ পাখি’। টরন্টোর চলচ্চিত্র উৎসবের পরে লস এঞ্জেলেস চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হবে সেই ছবি।
অভিজিৎ নন্দীর ক্যামেরায়, কখনও প্রতিমাদেবী কাদায় চিৎ হয়ে শুয়ে পৃথিবী থেকে শুষে নিচ্ছেন জীবনরস, কখনও জানালার সামনে সিগারেটে সুখটান দিতে-দিতে ভাঁজছেন গান। প্রতিমা পাণ্ডে বড়ুয়ার জীবনের বিভিন্ন দিককে, তর্ক-বিতর্ককে, প্রতিভা ও টানপড়েনকে ছবিতে তুলে ধরা সহজ ছিল না।
গৌরীপুরের রাজকন্যা প্রতিমাকে মা সাবধান করতেন, নিম্নশ্রেণীর মানুষের মুখচলতি 'দেশী' গান গাওয়া রাজবাড়ির মেয়ের পক্ষে শোভা পায় না। কিন্তু বিখ্যাত হাতি শিকারী ও জঙ্গলপ্রাণ প্রকৃতিশচন্দ্র বড়ুয়ার মেয়ের রক্তেই তো বন্যতার টান, ছাপোষা সুর তাকে টানবে কেন? তাই তো কলকাতার গোখেল মেমোরিয়ালের ছাত্রী অসমে ফিরে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে পাশে সরিয়ে রাজবংশী ভাষা, কামতাপুরী ভাষার গানকেই প্রাণ করে নেয়। যা পরে গোয়ালপড়িয়া নামে পরিচিত হয়। অবশ্য রাজপরিবারের বর্তমান সদস্যদের দাবি, ভাষা ও অঞ্চলগত দিক থেকে প্রতিমাদেবীর গানকে কমতাপুরিয়া গান বলাই বাঞ্ছনীয়।
আরও পড়ুন
মেধাবী ইশানকে খরচা দিয়ে ডেকে পাঠালেন অ্যাপলের সিইও
আকাশবাণী গুয়াহাটিতে প্রতিমার রাজবংশী ভাষার গানকে বাংলা গান বলা হয়েছিল। তারও উল্লেখ আছে ববিদেবীর ছবিতে। ভূপেন হাজরিকার সংস্পর্শে এসেই মুখচোরা প্রতিমা আর তাঁর গান প্রচারের আলোয় আসে। ভূপেনবাবু তাঁর 'এরা বাটর সুর' ছবিতে প্রতিমার গান ব্যবহার করেন। ধীরে, 'হস্তীর কন্যা' নামে পরিচিত হন প্রতিমাদেবী। মাহুত, মহিষাল, নাওরিয়াদের মুখচলতি লুপ্তপ্রায় গান ফের নবজীবন ও জনপ্রিয়তা পায় তাঁর কন্ঠে ভর করে। ভূপেনপর্বও তুলে ধরা হয়েছে ক্যামেরায়। 'সোনার বরণ পাখি'তে প্রতিমাদেবীর তিন ভিন্ন বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুস্মিতা রায়, প্রণামি বোরা ও আরতি বড়ুয়া। শিক্ষক গৌরীশঙ্কর পণ্ডার সঙ্গে প্রতিমাদেবীর বিয়ে হয়।
ববিদেবী জানান, "পদ্মশ্রী প্রতিমা বড়ুয়ার জীবনকে সিনেমা হিসেবে তুলে ধরায় অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে, গায়কদের মত নিয়ে, গবেষণা করে এবং কিছুটা কল্পনার আশ্রয় নিয়ে নান্দনিকতা ও প্রকৃতিকে মিশিয়ে ছবিটি তৈরি করেছি।" ছবির ভাষা প্রধানত রাজবংশী। শুটিং হয়েছে কলকাতা, গৌরীপুর, গুয়াহাটি ও মানসে। লস এঞ্জেলেস ছাড়াও মুম্বই, কলকাতা ও ঢাকা -সহ ন'টি চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বচিত হয়েছে ‘সোনার বরণ পাখি’।
ছবি: ববি শর্মা বড়ুয়ার সৌজন্যে।