এ ক্ষেত্রে ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি?

সময়ের চাহিদা মেনে হিন্দি ছবিতে পরপর উঠে আসছে বর্ণময় নারী চরিত্র

সামনের বছর একের পর এক হিন্দি ছবি আসছে, যা জোরালো নারীচরিত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এবং বেশির ভাগই তুলে আনা বাস্তব থেকে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share:

গুঞ্জন সাক্সেনা

সিনেমা কখনও নির্ভেজাল বিনোদন, কখনও সামাজিক বার্তাবাহী, আবার কখনও কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। বলিউড কিংবা টলিউডে নারীকেন্দ্রিক ছবি বানানোর প্রয়োজনীয়তা এই সময়ে দাঁড়িয়ে ঠিক কতটা, সেটা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বলিউড কাজটা কিন্তু শুরু করে দিয়েছে। তবে বাংলার চলচ্চিত্রকারেরা কতটুকুই বা এগিয়েছেন?

Advertisement

বলিউডের ট্র্যাডিশন

Advertisement

সামনের বছর একের পর এক হিন্দি ছবি আসছে, যা জোরালো নারীচরিত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এবং বেশির ভাগই তুলে আনা বাস্তব থেকে। ‘নীরজা’র সাফল্যের পর আর একটা ‘গুঞ্জন সাক্সেনা’ ভাবতে পেরেছে বলিউড। ১৯৯৯ সালে কার্গিলের রণক্ষেত্রে ‘চিতা’ হেলিকপ্টার ওড়ানো গুঞ্জন ছিলেন ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স কমব্যাট বাহিনীর প্রথম মহিলা পাইলট। তাঁর চরিত্রে অভিনয় করছেন ফিল্মি দুনিয়ায় সদ্য পা রাখা জাহ্নবী। মায়ের লেগাসি বহন করার গুরুদায়িত্ব জাহ্নবীর কাঁধেও, কেরিয়ারের গোড়াতেই। কারণ, ‘চাঁদনি’ থেকে শুরু করে হালের ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ পর্যন্ত একার ইনিংসেই হিরোদের দশ গোল দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন শ্রীদেবী। বলিউডের ‘ফিমেল সুপারস্টার’ বলতে তাঁর নামটাই সকলের আগে উঠে আসে। পরবর্তীকালে করিনা কপূর, বিদ্যা বালনরা তাঁদের দাপুটে অভিনয়ে ট্র্যাডিশন ধরে রেখেছেন যথাসম্ভব। করিনাকে ছাড়া যেমন ‘জব উই মেট’ বা ‘চামেলি’ হতো না, তেমনই বিদ্যাকে ছাড়া ‘ডার্টি পিকচার’ বা ‘কহানি’। মেঘনা মাথুর হিসেবে প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার পারফরম্যান্স উদাহরণ হয়ে থেকে গিয়েছে ‘ফ্যাশন’-এ। তারও পরবর্তী সময়ে দীপিকা পাড়ুকোনের ‘পিকু’, আলিয়া ভট্টের ‘হাইওয়ে’, ‘রাজি’র মতো ছবি ছাপ ফেলেছে। কনটেন্টের সঙ্গে সঙ্গত করে একার কাঁধে গোটা ছবি টেনে নিয়ে যেতে পারার প্রমাণ বার বার দিয়েছেন বলিউডের অভিনেত্রীরা। তবে এ সবক’টি উদাহরণই বিক্ষিপ্ত। বছরে বড়জোর দু’-একটি ছবিতেই সীমাবদ্ধ থাকত তা এত দিন। ছবিটা পাল্টাতে শুরু করেছে সাম্প্রতিক সময়ে।

তৈরি হোক রূপকথারা

শিগগিরই আসছে ‘মর্দানি টু’। আগামী বছরের প্রথমার্ধে আসছে এমন একগুচ্ছ ছবি, যার কেন্দ্রে ‘shero’রা। ঝাঁসির রানিকে নিয়ে ‘মণিকর্ণিকা’র পর জয়ললিতার বায়োপিক নিয়ে আসছেন কঙ্গনা রানাউত। ‘ছপাক’-এ দীপিকা করছেন অ্যাসিড আক্রান্ত লক্ষ্মী আগরওয়ালের চরিত্র। আবার সঞ্জয় লীলা ভন্সালী আলিয়াকে নিয়ে তৈরি করছেন ‘গঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়াড়ি’।

মর্দানি টু

কাজেই বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও চমকে দিচ্ছে বলিউড। রাজনীতিক বা খেলোয়াড়দের বায়োপিক, অ্যাসিড অ্যাটাক ভিক্টিম, ঐতিহাসিক চরিত্র— কোনও ক্ষেত্রের সুপারউওম্যানদেরই বাদ রাখা হচ্ছে না। এমনকি, ফিমেল সুপারহিরো ফিল্মের পরিকল্পনাও করা হয়ে গিয়েছে। ‘ওয়ান্ডার উওম্যান’ গাল গ্যাডোট কিংবা ‘ব্ল্যাক উইডো’ স্কারলেট ইয়োহানসনের মতো দেশি সুপারহিরো হিসেবে দীপিকাকে কেন ভাবতে পারব না আমরা? দীপিকাই আবার আগামী এক ছবিতে দ্রৌপদীর ভূমিকায়।

কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলা

কঙ্গনা, দীপিকা কিংবা আলিয়ারাই শুধু নন, তাপসী পন্নু, ভূমি পেডনেকরদেরও ছবির প্রধান মুখ হিসেবে অবলীলায় ভাবছে বলিউড। এই জায়গায় কিন্তু এখনও পিছিয়ে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। এক সময়ে কোয়েল মল্লিকের কমার্শিয়াল ছবি ‘অরুন্ধতী’ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কিন্তু তাঁর ‘মিতিন মাসি’ দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে সম্প্রতি। ‘পরিণীতা’র সাফল্যও একই কথা বলে। রাজ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এখনও পুরুষশাসিত। এখানে নায়িকাদের স্ক্রিন স্পেস একটু বেশি দিলে এখনও নায়করা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। পরিচালনা বা প্রযোজনার জায়গাতেই বা ক’জন মহিলা আছেন? বাংলায় জোরালো অভিনেত্রী নেই, তা নয়। তবে নায়িকাপ্রধান ছবি চলে না, এমন একটা ধারণা ছিল এত দিন। এখন যেটা ভাঙছে। ‘পরিণীতা’, ‘মিতিন মাসি’ই সেটা প্রমাণ করেছে।’’

মিতিন মাসি

এক সময়ে ‘দহন’ কিংবা ‘পারমিতার একদিন’-এর মতো ছবি ভাবতেন মুষ্টিমেয় পরিচালক। তা ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক। টলিউডের মেনস্ট্রিম থেকে কিন্তু আজও বর্জিত নারীকেন্দ্রিক ছবি। কেন? পরিচালক ও রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘সমাজে, পরিবারে মহিলাদের গুরুত্ব দেওয়ার চল তো এখনও তেমন নেই, তাই হয়তো সিনেমার ক্ষেত্রেও গুরুত্ব পান না তাঁরা। তাঁদের সমস্যাগুলো তুলে ধরি না আমরা। এখন নারকীয় ঘটনাগুলো উঠে আসছে বলেই প্রশ্ন উঠছে। এর পর হয়তো এখানকার পরিচালকরাও ভাববেন এ বিষয়ে।’’

নারীকেন্দ্রিক ছবির প্রভাব জনমানসে কতটাই বা পড়ে? অরিন্দম শীল মনে করিয়ে দিলেন ‘থিয়েটারে লোকশিক্ষে হয়’-এর অমোঘ বাণীটি। বললেন, ‘‘বাংলা সিনেমা ১০০ বছর পার করে ফেললেও নারীদের নিয়ে ছবি তৈরিতে এগোতে পারিনি আমরা। ‘মায়াকুমারী’ও নারীর সোশ্যাল এক্সপ্লয়েটেশনের গল্প।’’

আশা করা যায়, ভাবনা আর রূপায়ণের ফারাক ঘুচবে টলিউডেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন