Abir Chatterjee

পাখির ডাক আর গান শোনা, সিনেমা দেখা, ডায়েরি লিখলেন আবীর

করোনায় শুটিং বন্ধ, অখণ্ড অবসর। ডায়েরির পাতায় মন আবীর চট্টোপাধ্যায়-এর

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ২০:৩১
Share:

আবীর চট্টোপাধ্যায়।

করোনায় শুটিং বন্ধ, অখণ্ড অবসর। ডায়েরির পাতায় মন আবীর চট্টোপাধ্যায়-এর

Advertisement

সকাল ৮টা

এত পাখির ডাক কলকাতায়! তা-ও আমার বাড়ি থেকে শুনতে পাচ্ছি! ভাবতেই পারি না। আমার সারা জীবন ধরলেও এত পাখির ডাক একসঙ্গে শুনিনি। এই সকালগুলো কখনও ভয়ের, কখনও শ্লথ। আমি তো দাড়িও কামাচ্ছি না। অন্যরকম লাগছে কি? কে জানে!কাল সিনেমা দেখে শুতে শুতে অনেক রাত হল।কাল আবার টিভিতে ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ দিয়েছিল। আমি ঈশা, অর্জুন, ধ্রুব নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলাম। রাত ৩টে নাগাদ শুলাম।

Advertisement

সকাল ৯টা

আমাদের চোখেমুখে এখন অবসাদ।ধুলো জমছে মনে। অথচ বাড়ি থেকে সামনে হাইরাইজগুলোর দিকে সকালে উঠে যখন তাকাচ্ছি, কি ঝকঝকে! বেশ কিছু দিন আগেও এত স্পষ্ট দেখতে পেতাম না। কোথায় গেল সেই ধুলোর আস্তরণ? প্রকৃতি এ কি খেলা খেলছে?বুঝেছি, প্রকৃতি প্রতিশোধ নিয়ে বলছে,‘দেখ কেমন লাগে’। প্রকৃতি যেন এ ভাবেই আমাদের বলছে, ‘রোজ তোমরা আমায় অ্যাবিউজ কর। এ বার কিছু দিন আমার পালা!’আজ এই প্রসঙ্গে ভাবতে গিয়ে মনে পড়ল, গত সোমবার থেকে আজ সোমবার, এই আট দিন আমি বাড়ির নীচে অবধি যাইনি।বাড়ির লোক থেকে থেকেই এই ব্যাপারটা নিয়ে আওয়াজ দিচ্ছে আমায়।খিদে পাচ্ছে। এ বার ব্রেকফাস্ট।

সকাল সাড়ে ১০টা

শুট থাকলে বাড়ির ব্রেকফাস্ট আমি খুব মিস করি। গুছিয়ে মুসলি,ওটস, এ সব খাচ্ছি এখন। ডিম। সঙ্গে সবচেয়ে তেতো, সবচেয়ে কালো কফি। আমার কফি এতটাই তেতো যে অনেকেই বলে, আমি এটা খাই কী করে! আমি কিন্তু ওই স্বাদেই অভ্যস্ত। বাড়িতে মা-কে পাচ্ছি। এটা একটা পাওয়া। মা আর মামণি যদি চা বানিয়ে দেয় তবেই চা খাই। ওই স্বাদ কেউ আনতে পারে না।ওই চা খাওয়ার সুযোগ এখন। আর বই পড়ার।

দুপুর ১২টা

সকাল থেকেই মেসেজ ঢুকতে থাকে ফোনে।এখন করোনা নিয়েই সব লেখা। এসেই যাচ্ছে। আমি এটা খারাপ বলছি না।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমরা সতর্ক থাকার জায়গায়, করোনা নিয়ে কথা বলার জায়গায় এখন বেশ সচেতন। কিন্তু সত্যি এই মেসেজগুলো যাঁদের কাছে যাওয়া উচিত ছিল তাঁদের কাছে পৌঁছচ্ছে? সত্যি যদি পৌঁছত তাহলে ‘জনতা কার্ফু’-র দিন ক্রিকেট খেলা আর মাংসের দোকানে লাইন পড়ত না। এই সময় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে মাঝে মাঝে দূরে চলে যাচ্ছি আমি।নবনীতা দেবসেনের ভ্রমণকাহিনি। সঙ্গে ওই তেতো কফি। গৃহবন্দির সময় এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে? স্বাদ বদলও আছে।আন্দ্রে আগাসি-র আত্মজীবনীও পড়ছি।আমার স্ত্রী বাড়ি থেকে কাজ করছে। মান্থ এন্ড! মাঝে মাঝে বইয়ের পাতা থেকে মুখ তুলে দেখলেও দেখছি বেশ গম্ভীর মুখ। তবে কাজ ছাড়াও ওর মা-বাবাকে নিয়ে ও চিন্তায় আছে। দাদা বিদেশে, সেখানেও রোজ ভিডিয়ো কল চলছে। দুপুর নামছে…

দুপুর ২টো

আলুভাজা, ভাত, ডাল, মাছের ঝোল। এক্কেবারে বাড়ির খাওয়া। এটা খেয়ে ওয়ার্কআউট করলে শরীর দিব্যি থাকে।

দুপুর ৩টে

ভাতের পর নিপাট দিবানিদ্রা।এইটা বিশাল পাওয়া। আজকাল আমাদের ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা শুট হয়। পাওয়ায় ন্যাপ না নিলে আমি দেখেছি, ক্যামেরার সামনে কেমন ক্লান্ত ক্লান্ত লাগে। দশ-পনেরো মিনিটের পাওয়ার ন্যাপ আমি নিয়েই থাকি। তবে এ বার যা নিচ্ছি তা আর পাওয়ার নয়, পাওয়ারফুল ন্যাপ!

বিকেল সাড়ে ৫টা

সূর্য ডোবার আগেই ছাদে।ওয়ার্কআউট নিজের মতো করে। এর মাঝেও ছোটখাটো ওয়ার্কআউট চালিয়ে যেতে হচ্ছে। আমায় বাড়িতে থাকার খেসারত! আজ অবধি কোনও প্রযোজক বা পরিচালক যা আমায় দিয়ে করাতে পারেনি, আমার ছোট্ট মেয়ে ময়ূরাক্ষী তাই করায়। এমনিতে ও নিজের জগৎ নিয়ে থাকে। কিন্তু আমাকে দেখলেই আচমকা গান চালিয়ে দিয়ে বলবে,‘বাবা নাচো’। আর যে কোনও গানেই আমায় নাচতে হবে।নাচের গান না হলেও।

সন্ধ্যা ৭টা

ব্যস্ত জীবন থেকে সরে আসা। তাই আজকাল বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে বেশ গল্প করা হচ্ছে। অনেক বন্ধুদের সঙ্গে তোকল হচ্ছে।এই রকম সময়ে দেখেছি আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বললে মনটা হালকা হয়। এ রকম সময় এই কলগুলো মন ভাল করে দেয়। সৃজিতের খবর নিলাম টেক্সট করে। মিমির সঙ্গে তো প্রায়ই কথা হচ্ছে। নাহ... আজ বেশ ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে... একটু সিনেমা দেখি। ‘ফ্যামিলি ম্যান’ গতকাল শেষ করেছি। গানও শুনব অনেক ক্ষণ।এমন গান শুনি যা মন হালকা রাখে। কোক স্টুডিয়ো, চন্দ্রবিন্দু, লাকি আলি, তামিলে এ আর রহমান।রাত ১০টা নাগাদ ডিনারটা সেরে ফেলব। রাত হয়ে আসছে, এ বার নেটে সিনেমা দেখব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন