Dance Bangla Dance Controversy

রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্যের সঙ্গে হিন্দি গান! তীব্র নিন্দায় মানসী, মালবিকারা, কী সাফাই দেবলীনার?

‘ডান্স বাংলা ডান্স’-এর মঞ্চের একটি পরিবেশনাকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই বিশেষ পর্বে মঞ্চে বিশেষ লুকে দেখা যায় অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তকে। বিতর্কের মুখে কী বললেন তিনি?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৫ ১৮:৫৯
Share:

বিতর্কের মুখে কী বললেন দেবলীনা দত্ত? ছবি: সংগৃহীত।

রবীন্দ্রনাথের একটি নৃত্যনাট্যে হিন্দি সিনেমার গান জুড়ে দেওয়ার ঘটনায় বিতর্কের ঢেউ! গত রবিবার টিভিতে সম্প্রচারিত হয়েছে ‘ডান্স বাংলা ডান্স’-এর একটি বিশেষ পর্ব। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’র সঙ্গে সত্তর দশকের বিখ্যাত হিন্দি ছবির একটি গানের প্রয়োগ এবং তার উপস্থাপনা ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ওই অনুষ্ঠানের প্রতিযোগী অনুষ্কা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘চণ্ডালিকা’র একটি বিশেষ পর্বে নৃত্য পরিবেশন করেছেন অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত। নৃত্যনাট্যে গৌতম বুদ্ধের প্রিয় শিষ্য আনন্দের বেশে অভিনেত্রী দেবলীনা। একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ঠিক যেমন দেখতে হয় সে ভাবেই ক্যামেরার সামনে ধরা দেন দেবলীনা। মাথা ন্যাড়া, পরনে গেরুয়া বস্ত্র।

Advertisement

অভিনেত্রী প্রথমে যখন এই ‘লুক’ সমাজমাধ্যমের পাতায় ভাগ করে নিয়েছিলেন, তখনই দর্শকমনে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। কিন্তু উপস্থাপনা দেখে হতাশ দর্শক, যার মধ্যে রয়েছেন টলিপাড়ার একাংশও। রবিবার রাত থেকে আলোচনা, সমালোচনা চোখ এড়ায়নি দেবলীনারও। এর আগেও মঞ্চে ‘চণ্ডালিকা’ পরিবেশনা করেছেন অভিনেত্রী। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোরিওগ্রাফি নিয়ে নানা জনের নানা মন্তব্য পড়ে এবং শুনে দেবলীনা প্রশ্ন তুললেন, আদৌ কি ‘চণ্ডালিকা’ নৃত্যনাট্য বা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তাঁরা?

অভিনেত্রীর যুক্তি, “এর আগে আমি তিন বার চণ্ডালিকার ‘প্রকৃতি’-কে মঞ্চস্থ করেছি। ঠাকুরের এই লেখা আমার সবচেয়ে প্রিয়। তাই ‘চণ্ডালিকা’ নিয়ে আমি অনেক পড়াশোনা করেছি। তার ভিত্তিতে বলছি, প্রকৃতির আনন্দের প্রতি প্রেম ছিল বললে খুব কম বলা হবে। চণ্ডালিকার আনন্দের প্রতি যে পাগলের মতো ভালবাসা সেটাই নিজের লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন ঠাকুর।”

Advertisement

এর আগে যখন রবীন্দ্রনাথের লেখা কোনও গান অন্য ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন কোনও সঙ্গীতশিল্পী, তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা মন্তব্য সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। তবে দেবলীনার পরিবেশনায় এই ‘চণ্ডালিকা’ দেখে একজন লিখেছেন, “না, মানে এটা ঠিক কী!” ‘চণ্ডালিকা’র সঙ্গে গুলজ়ার পরিচালিত ‘আঁধি’ ছবির জনপ্রিয় গানের মিশেল অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। এ প্রসঙ্গে নৃত্যশিল্পী তথা অভিনেত্রী মালবিকা সেন বললেন, “নতুন প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলাই এখন আমাদের অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরাও অনেক সময় ফিউশন নাচ করি। সারা বিশ্ব জুড়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আমাদের মননে মিশে আছেন। সেখান থেকে সরে গিয়ে এই হিন্দি গান জুড়ে দেওয়া! আমি তীব্র আপত্তি জানাচ্ছি।”

যদিও এ ক্ষেত্রে দেবলীনার যুক্তি অন্য। তাঁর দাবি, রবি ঠাকুর যে মাত্রায় ফিউশন ব্যবহার করেছেন তাঁর নৃত্যনাট্যগুলিতে সেই সময়ে দাঁড়িয়ে, তার ধারে কাছেও আমরা ঘেঁষতে পারিনি এখনও। ঠাকুরের লেখা ভাল ভাবে খুঁটিয়ে পড়লে দেখা যাবে, তাঁর লেখায় ইউরোপীয় সাহিত্য, উর্দু ভাষা থেকে পারসি কবির প্রভাব দেখা যায়। তাঁর লেখায় স্কটিশ সাহিত্য, জার্মান সাহিত্যের প্রভাবও দেখা গিয়েছে। আর তা ছাড়া, কবির লেখায় ইংরেজি কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের প্রভাব বিশেষ ভাবে লক্ষ করা যায়। অভিনেত্রী যোগ করেন, “উর্দু থেকেই হিন্দি এসেছে। যাঁর নিজের লেখায় উর্দু সাহিত্যের প্রভাব ছিল, তিনি জীবিত থাকলে তাঁর কাজে হিন্দি ভাষার ব্যবহার করা হয়েছে বলে রাগ করতেন না। গোটা ঠাকুর পরিবার পারসি সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। এটাও তো ভাষার সঙ্গে ভাষার মিশেল। ঠাকুর নিজে এবং তাঁর পরিবার বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে বার বার মিশেছেন। এ দিকে, আমরা যাঁরা বাঙালি তাঁরা নিজেদের সংকীর্ণ করে ফেলছি ‘হিন্দি ভাষার ব্যবহার কেন হল’ এই বলে।”

দীর্ঘ দিন ধরে নাচের এই অনুষ্ঠান টিভির পর্দায় দেখছেন দর্শক। অভিনেত্রী-পরিচালক মানসী সিংহের মেয়ে এই অনুষ্ঠানের ভক্ত। কিন্তু সে দিন মঞ্চস্থ হওয়া এই পরিবেশনা তাঁরও ভাল লাগেনি। নিজের সমাজমাধ্যমের পাতায় মতামত জানিয়েছেন তিনি। আনন্দবাজার ডট কমকে মানসী বলেন, “সব জগাখিচুড়ি হয়ে যাচ্ছে। আর বাঙালি নিজেদের ঐতিহ্য ভুলে গেলে যা হয় সেটাই হচ্ছে। অনেকেই এঁদের মধ্যে চণ্ডালিকা পড়েননি। ফিউশন করতেই পারে। কিন্তু মানেটা ভুলে গেলে কি চলে? আনন্দকে প্রেমিক হিসাবে চেয়েছিল চণ্ডালিকা, না কি মুক্তির অবলম্বন হিসাবে চেয়েছিল? সেটাই আগে জানা উচিত। শিখতে হয়। এটা দেখে যাঁরা ভাল বলছেন তাঁদের শত কোটি প্রণাম। আমি আর দেখব না এই অনুষ্ঠানটা।”

মানসীর এই বক্তব্যে অভিনেত্রীর জবাব, 'চণ্ডালিকা' ঠিক করে পড়লে জানা যাবে, চণ্ডালিকা-আনন্দকে মুক্তির অবলম্বন হিসাবে চাননি। বরং প্রেমিক হিসাবে চেয়েছিলেন। অভিনেত্রী যোগ করেন, "যে কারণে ডাকিনি বিদ্যার প্রয়োগ করে তাঁকে আনিয়েছিলেন, যাঁর ফলস্বরূপ মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হয়।"

দেবলীনার সহ-অভিনেত্রীরাও যে মঞ্চস্থ হওয়া এই পরিবেশনা নিয়ে আলোচনা করছেন তা লক্ষ করেছেন অভিনেত্রী। নৃত্যনাট্যে চণ্ডালিকার মাথায় জল ঢেলে দেওয়ার যে দৃশ্য দেখানো হয়েছে তা দেখে ধেয়ে এসেছে একের পর এক নিন্দার বাণ। অভিনেত্রীর যুক্তি, “রূপক অর্থে দেখানো হয়েছে এই দৃশ্য। কালিমালিপ্ত জীবন জল দিয়ে ধুয়ে কালিমামুক্ত হল। আমার অনেক সহকর্মী এই জল ঢালার ছবি পোস্ট করে লেখালেখি করেছেন। সৃজনশীল মানুষেরা অর্থ না বুঝে এমন পোস্ট করলেন, সত্যিই মায়া লাগল। আমার মুখের ছবি আবার বাদ দিয়ে পোস্ট করেছেন। ওই জল ঢালার যে দৃশ্য দেখানো হয়েছে তাতে আমার পূর্ণ সম্মতি রয়েছে।” অভিনেত্রীর দাবি, তাঁর ছবি দিয়ে যদি পোস্ট করা হত তাতে তিনি বেশি খুশি হতেন। কারণ, এই পরিবেশনার দায়িত্ব তাঁরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement