‘মেঘনাদবধ রহস্য’-এর দৃশ্য।
ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগে এ যেন উল্টপুরাণ। মঙ্গলবার সন্ধে পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেও বাংলা সিনেমার কোনও টিকিট কেনা গেল না আইনক্স বা পিভিআর–এর মতো মাল্টিপ্লেক্সে। হিন্দি সিনেমার টিকিটে অবশ্য সে সমস্যা হচ্ছে না। সমস্যা শুধু বাংলা ছবির ক্ষেত্রে। টিকিট কাটতে গেলে দেখাচ্ছে, যান্ত্রিক সমস্যার জন্য টিকিট কাটা সম্ভব হচ্ছে না।
অনেকে মনে করছেন, সমস্যা হয়েছে বাংলা সিনেমার টিকিটের উপর রাজ্য সরকারের দেওয়া ছাড় নিয়ে। একশো টাকার কম দামের টিকিটের উপর জিএসটি-র হার ১৮ শতাংশ। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ভাগে ৯ শতাংশ করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বলেছে, তারা ৯ শতাংশ থেকে মাত্র ২ শতাংশ নেবে। বাকিটা ছাড় হিসেবে ফেরত দেওয়া হবে। সমস্যার সূত্রপাত এখান থেকেই। অনেক সিনেমা হলে এই ৭ শতাংশ ছাড় টিকিটে উল্লেখ করা থাকছে। কিন্তু আইনক্স অনলাইনে কেনা টিকিটের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থাটাই এখনও করেনি। কাউন্টার থেকে টিকিট কিনলে অবশ্য ছাড়ের টাকাটা ফেরত দিয়ে দিচ্ছে দর্শককে।
সমস্যা হচ্ছে না অন্য সিনেমা হলের ক্ষেত্রে। কলকাতার নন্দন, মেনকা, প্রিয়া থেকে বহরমপুরের সিলভার স্ক্রিন, অনেক সিনেমা হলে অনলাইনেই কাটা যাচ্ছে বাংলা সিনেমার টিকিট। পরিবেশক শ্যামল দত্ত বলছিলেন, ‘‘সমস্যার কোনও কারণ তো আমি দেখছি না। টিকিটে রাজ্য সরকারের রিবেট উল্লেখ করে দিলেই সমস্যা মিটে যায়।’’
মিত্রা সিনেমার ক্ষেত্রে আবার সমস্যাটা অন্য রকম। অনলাইনে টিকিট কাটার সাইটে মঙ্গলবার সন্ধে পর্যন্ত বাংলা ছবি ‘দেখ কেমন লাগে’র টিকিট কাটা যাচ্ছিল। মিত্রার কর্ণধার দীপেন মিত্রকে টেলিফোনে সে কথা জানাতেই, তিনি আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি নাকি অনলাইনে টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। ‘‘রাজ্যের রিবেটটা টিকিটের গ্রস দাম না নেট দামের উপর ধরা হবে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তাই আমি বলেছি এখনই অনলাইনে যাতে বাংলা সিনেমার টিকিট বিক্রি করা না হয়,’’ বলেন দীপেন মিত্র।
কিন্তু অনলাইনে বাংলা সিনেমার টিকিট কিনতে না পারায়, সমস্যায় পড়েছে বাংলা সিনেমা। অনেক দর্শকই টিকিট কিনতে না পেরে সিনেমা হলেই যাননি। এতে কি আখেরে বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিরই ক্ষতি হচ্ছে না?
ক্ষতি যে হচ্ছে সে কথা বলছেন ‘মেঘনাদবধ রহস্য’-র প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান। তাঁর কথায়, ‘‘২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বিক্রি কমে গিয়েছে অনলাইনে টিকিট না কাটতে পারার জন্য। যে সব জায়গায় অনলাইন নেই, সেখানে ছবি হাউসফুল গিয়েছে। আইনক্স, পিভিআর-এর মতো সংস্থা কেন যে একটা ব্যবস্থা করতে পারছে না জানি না!’’