শট শেষ হতেই রং মাখিয়ে দিল

তাঁর সাম্প্রতিক টিভি-ছবি ‘গোয়েন দা’র শ্যুটিং করতে ফের জেলায় ফিরলেন ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য। কেন তিনি বারবার ফিরছেন নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে? নিজেই জানালেন আনন্দবাজারকে।আমার বাপের বাড়ি তেহট্টে। মায়ের বাড়ি বহরমপুরে। বাবা চাকরি সূত্রে বহরমপুরে চলে আসেন। আমার জন্ম, বড় হওয়া তাই বহরমপুরেই। এখন থাকি কলকাতায়। গত বারো বছরে ছবির লোকেশন খুঁজতে বারবার কলকাতার বাইরে বেরিয়েছি। বিভিন্ন শ্যুটিংয়ে বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা হয়। তবে সব থেকে ভাল লাগে যখন নিজের জায়গায় শ্যুটিং করতে ফিরে আসি। তেহট্টে, বহরমপুরে। লোকেশন বেছে নেওয়ার সময়ে চেনা জায়গাগুলো নতুন করে চিনতে পারি। শ্যুটিং করার সময় সেই চেনাটা আরও অন্য রকম হয়ে যায়।

Advertisement

প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৭
Share:

তেহট্টে ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ ছবির শ্যুটিংয়ে মাধবী মুখোপাধ্যায় ও ঋত্বিক চক্রবর্তী।

আমার বাপের বাড়ি তেহট্টে। মায়ের বাড়ি বহরমপুরে। বাবা চাকরি সূত্রে বহরমপুরে চলে আসেন। আমার জন্ম, বড় হওয়া তাই বহরমপুরেই। এখন থাকি কলকাতায়।

Advertisement

গত বারো বছরে ছবির লোকেশন খুঁজতে বারবার কলকাতার বাইরে বেরিয়েছি। বিভিন্ন শ্যুটিংয়ে বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা হয়। তবে সব থেকে ভাল লাগে যখন নিজের জায়গায় শ্যুটিং করতে ফিরে আসি। তেহট্টে, বহরমপুরে। লোকেশন বেছে নেওয়ার সময়ে চেনা জায়গাগুলো নতুন করে চিনতে পারি। শ্যুটিং করার সময় সেই চেনাটা আরও অন্য রকম হয়ে যায়।

টিভির বাইরে যে ছবিটার দৌলতে এখন আমার কিছুটা পরিচিতি তৈরি হয়েছে, সেই ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’র অর্ধেক শ্যুটিং হয়েছে নদিয়ার তেহট্টে। ছবিটায় পরিচিত অভিনেতারা ছাড়াও বহু সাধারণ মানুষ অভিনয় করেছিলেন। তার মধ্যে আমার কাকা, পিসি, দাদা, বন্ধু অনেকে ছিলেন। ছবিটায় একটা দোলের দৃশ্য আছে। শ্যুটিং হয়েছিল আমার রাঙাকাকুর বাগানে। প্রচুর রং, আবির আনা হয়েছিল। অভিনেতাদের বলেছিলাম সত্যি সত্যি দোল খেলতে, আমরা আমাদের মতো শ্যুট করে নেব। সবাই আনন্দের সঙ্গে দোল খেললেন। শটটা খুব চমৎকার হল। এর পর আরও শ্যুটিং বাকি। আমার এক বউদি অভিনয় করছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমরা সবাই রং খেললাম আর পিল্টিশ (আমার ডাকনাম) রং মাখবে না?’ বলা মাত্র সবাই মিলে ধরে আমাকে রং মাখিয়ে দিলেন। বেশ খানিকক্ষণ আমিও দোল খেলায় মেতে গেলাম। সেই রং নিয়েই পরের দৃশ্য শুরু করলাম। কাজ করতে এসেছি না আনন্দ করতে এসেছি, সেটাই গুলিয়ে যাচ্ছিল।

Advertisement

বাকিটা ব্যক্তিগত

ওই ছবিতেই বোলান গানের একটা দৃশ্য ছিল। আমি বোলানের বিষয় বলে দিয়েছিলাম। পালার নাম ছিল ‘হারানো মানিক’। তেহট্টে আমাদের পাড়ায় একটি ছেলে আছে — উত্তম, ভ্যানরিকশা চালায়। শ্যুট করার সময়ে দেখি সেই উত্তম মূল চরিত্রে অভিনয় করছে। অসাধারণ অভিনয় করছিল। আমি জানতামই না উত্তম বোলানে অভিনয় করে। পরে জানতে পেরেছিলাম উত্তম অভিনয়ের ব্যাপারে অসম্ভব প্যাশনেট। এ রকম ভাবে অনেক দেখেও অদেখা জায়গা, চিনেও অচেনা মানুষ আবিষ্কার করেছি আর অবাক হয়ে গিয়েছি।

কিছু দিন আগে টিভির জন্য একটা ছবি, ‘গোয়েন দা’ করতে ফিরলাম আবার বহরমপুরে। গোটা শ্যুটিংটাই মুর্শিদাবাদের সদরে আর লালবাগে। ফুটি মসজিদে। ‘পিঙ্কি আই লাভ ইউ’ ছবিটাও তো ওখানে শ্যুট করা। চেনা রাস্তা। চেনা মুখ। এ বার তো অদ্ভূত অভিজ্ঞতা হল। জীবনে প্রথম নিজের শহরে এসেও বাড়িতে না থেকে হোটেলে থাকা। বহু বার যে রাস্তা দিয়ে গিয়েছি সেই রাস্তায় শ্যুট করতে গিয়ে অন্য রকম অনুভূতি। বহু দিনের একটা ইচ্ছে ছিল, নিজের পাড়ায় শ্যুট করব। খানিকটা করতে পেরেছি।

একটা ঘটনা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। একটা শট নেওয়া হচ্ছে — একটি চরিত্র সাইকেল নিয়ে যাচ্ছে আর আমরা গাড়িতে করে তাকে ফলো করছি। পাড়া দিয়ে যাচ্ছিলাম। ক্যামেরা চালু ছিল। হঠাৎ দেখি, মামা বসে কাগজ পড়ছে। অদ্ভূত ভাল লাগার অনুভূতি হল। শটটা কেটে মামার সঙ্গে দেখা করে এলাম।

বাকিটা ব্যক্তিগত

বহরমপুরে ‘কপিলের মাঠ’ নামে একটা মাঠ আছে গঙ্গার ধারে। আমরা ফুটবল খেলতে যেতাম। আশপাশে অনেক বাড়ি। আমার একটা পুরোনো বাড়ি দরকার ছিল। এ বার লোকেশন দেখতে গিয়ে খবর পেলাম, কপিলের মাঠের পাশে একটা পুরোনো বাড়ি আছে। গেলাম। বাড়িটার পাশ দিয়ে অনেক বার গিয়েছি। কখনও সে ভাবে খেয়াল করিনি। ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেলাম। আমার ছবির মূল চরিত্র ইলিয়াস সিজারের জন্য ঠিক এই ধরনের বাড়িই চাইছিলাম। ২০০ বছরের পুরোনো বাড়ি। আশ্চর্য স্থাপত্য। অসাধারণ ভিশ্যুয়াল পেয়ে গেলাম। এত দিন ধরে দেখা বাড়িটার ভিতরে এ রকম মণিমুক্তো লুকিয়ে রয়েছে, কে জানত!

আমি চিরকালই নিজের জায়গা, পরিচিত লোকজন নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। ট্রেনে বাসে চায়ের দোকানে আড্ডা মেরে গল্প খুঁজে ফিরি। অনেকে আমাকে বলেন, এই পদ্ধতিতে কাজ করলে কাজের মধ্যে ব্যক্তিগত ব্যাপার-স্যাপার ঢুকে পড়ে। কাজটা দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু আমি মনে করি, এটাই আমার শক্তির জায়গা। যত দিন এটা চালিয়ে যাব, গল্পের কোনও অভাব হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন